Advertisement
E-Paper

ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাধা কোথায়, বুঝতে গবেষণা

মশাবাহিত রোগ নির্মূলের পথে বাধা কোথায়, তা জানতে ম্যালেরিয়াপ্রবণ সাতটি দেশকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সাতটি দেশ হল, ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, লাওস এবং তাইল্যান্ড।

 সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৬

হাতে আর এগারো বছর। তার মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া বিদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এর আগে এ ধরনের একাধিক কর্মসূচি গ্রহণের পরেও সে কাজ করা সম্ভব হয়নি। কেন? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে চলেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গবেষকেদের একটি দল। আর তাতে সহযোগীর ভূমিকায় রয়েছে বেলজিয়ামের ‘ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’।

মশাবাহিত রোগ নির্মূলের পথে বাধা কোথায়, তা জানতে ম্যালেরিয়াপ্রবণ সাতটি দেশকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সাতটি দেশ হল, ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, লাওস এবং তাইল্যান্ড। ভারতের মধ্যে কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত তালতলা এলাকাকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসক

অরুণাংশু তালুকদার এবং মনোবিদ গার্গী দাশগুপ্ত ছাড়াও গবেষকেদের দলে রয়েছেন এমবিবিএস, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মনস্তত্ত্বের ছাত্রছাত্রীরা। সেই কাজে সহযোগীর ভূমিকায় রয়েছেন বেলজিয়ামের ‘ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর বাঙালি প্রতিনিধি নন্দিনী সরকার।

গবেষণা দলের প্রধান অরুণাংশুবাবু জানান, ম্যালেরিয়া যাতে রোগীর দেহে ফিরে না আসে, সে জন্য প্রাইমাকুইন নামে ১৪ দিনের একটি ওষুধ দেওয়া হয়। এ রাজ্যে আক্রান্তেরা তা বিনামূল্যেই পাচ্ছেন। তবুও একই ব্যক্তি বছরে একাধিক বার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই নজিরও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা তো হওয়ার কথা নয়। তা হলে কি এমন কিছু কারণ রয়েছে, যা নজরে পড়ছে না?’’

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রের খবর, গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ম্যালেরিয়ার জন্য যে পরিমাণ মৃত্যু হয়, তার ৬৯ শতাংশ ঘটে ভারতে। ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের যে রূপরেখা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক করেছে, তাতেও উল্লেখ করা হয়েছে এ কথা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত সর্বশেষ (২০১৫-১৬ হেল্‌থ অন মার্চ) তথ্য অনুযায়ী, শুধু কলকাতা পুরসভা এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬,৪৯৮ জন। ম্যালেরিয়া আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যের সব ক’টি জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। কলকাতার যে সকল এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, তালতলা তার মধ্যে অন্যতম। তাই তালতলাকে গবেষণা ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। অরুণাংশুবাবুর মতে, ‘‘বারবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। জন্মগত ভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে জি-সিক্স-পিডি এনজাইম কম থাকলে প্রাইমাকুইনের প্রভাবে দেহের রক্ত নষ্ট হতে পারে। সেই ভয়ে চিকিৎসকেরা অনেক সময়ে ওই ওষুধ দেন না। কিন্তু একশো জনের মধ্যে দু’জনের শরীরে জি-সিক্স-পিডি এনজাইম কম থাকার সমস্যা দেখা দেয়। একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানা সম্ভব। পরীক্ষাটি খরচ সাপেক্ষ। সে জন্য রোগীরা ওই ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকছেন কি না, তা দেখতে হবে।’’

ওষুধ-ছুট হওয়ার পিছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে বলে জানান গার্গীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘গবেষণার একটি বড় দিক হল, সামাজিক বাধাগুলো খতিয়ে দেখা। ওষুধ মিলছে বিনামূল্যে। ফলে কারও যদি মনে হয় জ্বর কমে গিয়েছে আর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই, তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিচ্ছেন ওষুধ। ভাবনাটা এমন যে, আবার রোগ ফিরে এলে হাসপাতালে যাওয়া যাবে। ওষুধ তো বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। রোগ এবং তা নিরাময়ে ওষুধ সেবন প্রসঙ্গে রোগীর মনোভাব বোঝাটা জরুরি। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পরিবারে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় বাচ্চা। তার পরে পরিবারের রোজগেরে সদস্যটি। ম্যালেরিয়া নির্মূলের ক্ষেত্রে সে ধরনের কোনও বিষয় রয়েছে কি না, দেখতে হবে।’’

অর্থাৎ, রোগীর মনের কথা জানতে চাইছে গবেষণা দলটি। বেলজিয়ামের ‘ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর মনোবিদ নন্দিনীদেবী বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন। চিকিৎসকদের একটা ভূমিকা আছে। প্রাথমিক ভাবে সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করা হল আমাদের লক্ষ্য। ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামে বড় করে কাজটা হচ্ছে।’’ গবেষণা শেষে তা রিপোর্ট আকারে সরকারের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Calcutta Medical College Research Maleria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy