প্রবল কাজের চাপ। প্রশাসনিক ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলে আরজি কর হাসপাতালের চাকরি ছাড়তে চাইলেন এক চিকিৎসক। নিজের ইচ্ছার কথা এবং যাবতীয় অভিযোগ বিশদ জানিয়ে ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি চিঠি লিখেছেন। পরে স্বাস্থ্য ভবনে ইস্তফার চিঠি পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন।
আরজি করের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাপস প্রামাণিক। তাঁর অভিযোগ, ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগে রাতে কাজের প্রবল চাপ থাকে। তুলনায় পর্যাপ্ত কর্মী বিভাগে থাকেন না। একা এত চাপ তিনি সামলাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ, একাধিক বার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভ হয়নি। রাতের ডিউটিতে যত জনের থাকার কথা, তত জন থাকেন না বলে দাবি করেছেন তাপস।
আরও পড়ুন:
বৃহস্পতিবার আরজি কর হাসপাতালের এমএসভিপি, অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছেন তাপস। লিখেছেন, ‘‘গত ১৩ অক্টোবর অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছিল, সেখানে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগের সকল সমস্যা ১৪ তারিখ থেকে দূর হবে। ডিউটিতে মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ, চেস্ট (বক্ষ) বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ এবং দু’জন হাউস স্টাফ সবসময় থাকবেন। কিন্তু ১৪ তারিখ ডিউটিতে গিয়ে আমি শুধু এক জন হাউস স্টাফ এবং দু’জন ইন্টার্নকে পেয়েছি। ফলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি, এটা স্পষ্ট।’’ গত এক বছর ধরে এই সমস্যা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আনন্দবাজার ডট কম-কে তাপস বলেছেন, ‘‘এখানে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পায়রার খোপের মতো একটা ঘর। এত রোগী আসছেন, আমি একা সামাল দিতে পারছি না। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না-থাকায় রোগীরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। আমার উপর সেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। আগেও অনেক বার কর্তৃপক্ষকে এ কথা জানিয়েছি। লাভ হয়নি।’’ শুধু আরজি কর থেকে নয়, সরকারি চাকরি থেকেই সরে দাঁড়াতে চান তাপস। উল্লেখ্য, আরজি করে গত বছর মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার দিন তিনি রাতের ডিউটিতে ছিলেন। সেই সময়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিনিও সরব হয়েছিলেন। চাকরি ছাড়ার নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক চাপ আছে কি? তাপস সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমার উপর কোনও চাপ নেই। রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। একটা অংশের ডাক্তার ডিউটি করেন না। তা ছাড়া, আমার শরীরের কথা ভেবেও এই চাকরি ছাড়ছি।’’
শারীরিক অবস্থার কথাও কর্তৃপক্ষকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন তাপস। আপাতত তিনি এক মাসের ছুটির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। চাকরি ছাড়তে গেলে সরাসরি তাঁকে স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি লিখতে হবে। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে সেই চিঠি তিনি পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।