E-Paper

পুলিশি চোখ এড়িয়ে ফাঁকা রাস্তায় উদ্দাম গতির দৌড়, তার ফলেই কি কলকাতায় পর পর দুর্ঘটনা?

বেপরোয়া গাড়ি চলাচল এবং তার জেরে দুর্ঘটনা নিউ টাউনে হামেশাই ঘটে। রবিবারেও বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন দু’জন। যাঁদের মধ্যে এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ০৭:২৬
An image of road accidents

—প্রতীকী চিত্র।

কখনও বিশ্ব বাংলা সরণি, কখনও নিউ টাউনের অন্য কোনও ফাঁকা রাস্তা। বেপরোয়া গাড়ি চলাচল এবং তার জেরে দুর্ঘটনা সেখানে হামেশাই ঘটে। রবিবারেও বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন দু’জন। যাঁদের মধ্যে এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

তদন্তে উঠে এসেছে, দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটির চালক নাবালক। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জেনেছে, বাবার গাড়ি নিয়ে ওই নাবালক বালির বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিউ টাউনের ইউনিটেকে রাত তিনটের সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে এসেছিল। নতুন নতুন গাড়ি নিয়ে ওই কিশোর উৎসাহী। হোয়াটসঅ্যাপে তাদের একটি দলও রয়েছে। সেই দলের বন্ধুরাই শনিবার গভীর রাতে খেতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফেরার পথে বিশ্ব বাংলা সরণিতে ওই নাবালক ও অন্যেরা গাড়ি নিয়ে রেষারেষি করছিল। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।

উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে নিউ টাউনের পেঁচার মোড়ের কাছেই রাস্তায় শুটিং চলছিল। সেই সময়ে একটি গাড়ি এসে সোজা শুটিংয়ের জায়গায় ঢুকে ধাক্কা মারে। আহত হন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। আবার, গত বছরের শেষ দিনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া নিউ টাউনের ফাঁকা রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় মারা যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিউ টাউনে প্রচুর বহুতল তৈরি হলেও অধিকাংশ এলাকা এখনও ফাঁকা। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য কিংবা গাড়ি চালানো শিখতে তাই অনেকেই সেই ফাঁকা রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। এক সময়ে সল্টলেকে ঠিক এমন হত। কিন্তু, সেখানে বসতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তাতেও এখন গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সেই কারণে সল্টলেকের তুলনায় এখন অনেকেরই পছন্দের জায়গা নিউ টাউন। গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও বেপরোয়া ভাবে বাইক কিংবা গাড়ি চালাতে গিয়ে এখানে আকছার দুর্ঘটনা ঘটে। যেমনটা হয়েছে শনিবার রাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’টি গাড়ি বেপরোয়া ভাবে ছুটছিল। প্রথম গাড়িটি কিছুতেই পরের গাড়িটিকে জায়গা দিচ্ছিল না। পিছনের গাড়িটি আগের গাড়িটিকে বাঁ দিক থেকে ওভারটেক করতে গিয়ে এক বাইক আরোহীকে ধাক্কা মারে।

পুলিশের একটি অংশ জানাচ্ছে, বিশ্ব বাংলা সরণিতে দিনের বেলায় ট্র্যাফিক পুলিশ থাকলেও রাতে ততটা কড়াকড়ি থাকে না। এ ছাড়া, অন্য অনেক রাস্তাই কার্যত পুলিশি নজরদারির বাইরে থাকে। তার ফলে অনেকের মধ্যে বিপজ্জনক গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা তৈরি হয়। যার খেসারতও দিতে হয়েছে অনেককে। অতীতে একাধিক প্রাণঘাতী বাইক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা জানান, বিশ্ব বাংলা সরণি নিউ টাউনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। বিশেষত, দক্ষিণ কলকাতা থেকে বিমানবন্দরে যেতে বেশির ভাগ যাত্রী এই রাস্তা ব্যবহার করেন। যার জন্য সেখানে গার্ড রেল দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করা সব সময়ে সম্ভব হয় না। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে দেখলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু কেউ যদি নিজের বিপদের কথা না বোঝেন, তা হলে ব্যবস্থা নিয়েও কিছু করা যাবে না।’’

যদিও বাসিন্দাদের সংগঠন ‘নিউ টাউন ফোরাম ও অ্যাসোসিয়েশন’-এর অভিযোগ, গতির উপরে নজরদারি চালানোর ক্যামেরা থাকলেও কাজ করে না। সংগঠনের সম্পাদক সমরেশ দাস বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ শুধু স্পিড ব্রেকার বসিয়ে দায় সারে। গতি মাপার ক্যামেরা কার্যকর নয়। অন্য রাস্তায় স্পিড ব্রেকার থাকায় গাড়ির গতি খানিকটা কম থাকে। আর বিশ্ব বাংলা সরণিতে তা বসানো যাবে না বুঝেই সেখানে রেষারেষিচলতে থাকে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident Traffic Police Rajarhat Newtown

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy