Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ভক্তের’ মিছিলে রুদ্ধ পথ, ভোগান্তি

ব্যস্ত রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর ম্যারাপ বাঁধা। লাউড স্পিকারে গান বাজছে ‘ভোলে বাবা পার করেগা’। কোথাও আবার মাইক্রোফোন হাতে হিন্দি ধর্মীয় গান গেয়ে চলেছেন গায়ক। গানের তালে চলছে ‘ভক্ত’দের নাচ। কোথাও আবার তাঁদের দাঁড় করিয়ে ম্যারাপ থেকে বিলি করা হচ্ছে লুচি, তরকারি, গরম দুধ, সরবত!

এ ভাবেই চলে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই চলে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

ব্যস্ত রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর ম্যারাপ বাঁধা। লাউড স্পিকারে গান বাজছে ‘ভোলে বাবা পার করেগা’। কোথাও আবার মাইক্রোফোন হাতে হিন্দি ধর্মীয় গান গেয়ে চলেছেন গায়ক। গানের তালে চলছে ‘ভক্ত’দের নাচ। কোথাও আবার তাঁদের দাঁড় করিয়ে ম্যারাপ থেকে বিলি করা হচ্ছে লুচি, তরকারি, গরম দুধ, সরবত!

আর এই ‘উৎসব’ এর জেরেই রাস্তা জুড়ে তৈরি হচ্ছে যানজট। যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। যানজটে আটকে বাস, গাড়িতে বসে গরমে হাঁসফাঁস করছেন যাত্রীরা। কিন্তু তাতে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই ‘ভক্ত’দের! যানবাহন আটকেই তাঁরা ছুটে চলেন রাস্তা জুড়ে। ফি বছর শ্রাবণ মাসের প্রতিটি শনিবার ও রবিবার কার্যত এ ভাবেই তাঁদের ‘দখলে’ চলে যায় শহরের ব্যস্ত রাস্তা বিটি রোড ও জিটি রোড।

পুলিশকর্তারা কার্যত এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলন, ‘‘ধর্মীয় বিষয়, তাই তেমন ভাবে বাধা দেওয়া যায় না। তাই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি যতটা সম্ভব ট্রাফিক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়।’’ কিন্তু এ জন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কি যুক্তিসঙ্গত? সদুত্তর মেলেনি পুলিশকর্তাদের কাছে।

শ্রাবণ মাসের প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও রবিবার সন্ধ্যা নামলেই কার্যত শিব ভক্তদের দখলে চলে যায় সিঁথি, বরাহনগর, ডানলপ, দক্ষিণেশ্বর এলাকার বিটি রোড এবং হাওড়া সেতু পার করে সালকিয়া, লিলুয়া, বেলুড়, বালি এলাকার জিটি রোড। বাঁক কাঁধে হুল্লোড় করে রাস্তায় ছুটে চলেন ‘ভক্ত’রা। তাঁদের মিছিলের জেরে আটকে যায় যানবাহন। তা সরে না যাওয়া পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়ে এগোনোর উপায় থাকে না। হর্ন বাজিয়েও রাস্তা ফাঁকা পাওয়া যায় না। অভিযোগ, কখনও কখনও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে গাড়িতে পেটাতে শুরু করেন ‘ভক্ত’রা। এর মধ্যেই আবার রাস্তায় বাঁধা ম্যারাপে এসে কিছুক্ষণের জন্য জিরিয়ে নেন তাঁরা। বাঁশের খাঁচার উপরে বাঁক রেখে রাস্তাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়েন। সেখানেই অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা তাঁদের হাতে খাবার তুলে দেন। তার পরেই দেখা যায় গোটা রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে শালপাতা, গ্লাস, খাবারের উচ্ছিষ্ট। এর জেরে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় রাস্তার অর্ধেক অংশ। বাকি অংশ দিয়ে যানবাহন যাওয়ার সময়ে তৈরি হয় যানজট। আর তাতে ফেঁসে ভোগান্তির তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে অনেক মানুষের। যেমন আড়িয়াদহের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, ‘‘শ্রাবণ মাস এলেই রাতে বাড়ি ফিরতে ভয় হয়। শ্যামবাজার থেকে ডানলপ পৌঁছতে কখনও কখনও দু’আড়াই ঘণ্টাও সময় লেগে যায়।’’ লিলুয়ার বাসিন্দা সুমন রায়ের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। তিনি বলেন, ‘‘মিছিল কাটিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতেই এক ‘ভক্ত’ লাঠি দিয়ে মেরে হেড লাইট ভেঙে দিল।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্রাবণ মাসে এই দলগুলি কাঁধে বাঁক নিয়ে পায়ে হেঁটে তারকেশ্বর যান। তাঁদের জন্যই রাস্তার ধারে ম্যারাপ বেঁধে এই অনুষ্ঠান ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠন। চলে গান-বাজনা-খাওয়াদাওয়া। গোটা মাস জুড়েই সেই ম্যারাপ বাঁধা থাকে। কোন সংগঠন কত বেশি আয়োজন করতে পারে, তা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। কোনও কোনও সংগঠন রাস্তার একটি অংশে গোটা মাস জুড়ে ম্যারাপ বেঁধে রাখে। কোথাও আবার ম্যারাপ বাঁধা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বদলে যায় শুধু আয়োজক। তোলা হয় চাঁদাও। কিন্তু রাস্তার উপরে ম্যারাপ বাঁধতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয় কি? পুলিশ কর্তাদের দাবি, ‘‘কেউ কেউ নেন। তবে সবাই নয়।’’

তবে অনুমতি থাকুক বা না থাকুক, শ্রাবণের শেষ শনি ও রবিবারের কথা ভেবে এখনও আতঙ্কে শহরবাসী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE