Advertisement
২২ মে ২০২৪
এ বার হরিদেবপুর

এক সপ্তাহে দ্বিতীয় বার, একই ছকে ডাকাতি

এক মঙ্গলবার রিজেন্ট পার্ক। পরের মঙ্গলবার ইস্ট পার্ক। খুব শান্ত ভাবে, কারও ক্ষতি না করে ডাকাতি করে চলে গেল দুই দল ডাকাত। আপাত ভাবে তারা ভদ্র, নম্র, সভ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

এক মঙ্গলবার রিজেন্ট পার্ক। পরের মঙ্গলবার ইস্ট পার্ক।

খুব শান্ত ভাবে, কারও ক্ষতি না করে ডাকাতি করে চলে গেল দুই দল ডাকাত। আপাত ভাবে তারা ভদ্র, নম্র, সভ্য।

বেহালার এই দুই জায়গার ভৌগোলিক দূরত্ব মেরেকেটে এক-দেড় কিমি। তবে পুলিশের ডিভিশন পৃথক। দু’টি ঘটনার পরেই অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ। ‘তদন্ত চলছে’, ‘একই দলের কাজ মনে হচ্ছে’ গোছের কিছু ক্লিশে মন্তব্য ছাড়া পুলিশের তরফে বেশি কিছু মেলেনি। তাই সামগ্রিক ভাবে ঘটনা দু’টির চরিত্র ও তদন্তের পরিস্থিতি এলাকার আইনশৃঙ্খলাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

দুই এলাকার বাসিন্দাদেরও অবশ্য এর বেশি আশা নেই পুলিশের কাছে। হরিদেবপুরের যে ইস্ট পার্কে এই মঙ্গলবার ডাকাতি হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছর পুজোর আগেও এমন ডাকাতি হয়েছে পাড়ায়। আর ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার বলছেন, ‘‘দেড় বছরে এমন ডাকাতি আর হয়নি।’’

ফলে, পুলিশের উপরে যে ভরসা করে লাভ নেই বলেই মত বাসিন্দাদের। যে কোনও দিন তাঁদের বাড়িতেও ডাকাত পড়তে পারে এবং তারা হাতজোড় করে, মিষ্টি কথা বলে সর্বস্ব লুটে নিয়ে চলে যাবে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

এই মঙ্গলবার ইস্ট পার্কের কালীপদ মুখার্জি রোডের বাড়িতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় বছর সত্তরের দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী সুনন্দাদেবীর। তাঁদের পরিচারিকা সীমা তখন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় তাঁদের ডাকছিলেন আর দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলেন। ঘুমচোখে কোনও রকমে দরজা খুলেই ভয় পেয়ে যান তাঁরা। দেখেন, সীমাদেবীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জনা চার-পাঁচ মুখোশধারী দুষ্কৃতী।

আলমারি থেকে গয়না, মোবাইল-টাকা নিয়ে তারা পালায়। দীপেনবাবুর লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৫ বোরের ২০টি কার্তুজ-সহ ব্রাউনি পিস্তলটিও আলমারির ভিতর থেকে বার করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত তখন সাড়ে তিনটে।

গত মঙ্গলবার একই কায়দায় রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার এক বাড়িতে ডাকাতি হয়। গৃহকর্তা প্রলয় বিশ্বাসের স্ত্রী ববিতা ও ছেলে পুষ্পকের মাথায় ভোজালি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ধরে লুঠপাট চলে। সেখানে তারা ঢোকে জানলার গ্রিল কেটে এবং পালানোর সময়ে বলে যায় ‘‘দাদা, আমরা শিক্ষিত ছেলে। পেটের দায়ে ডাকাতি করছি। ভয় নেই, কোনও ক্ষতি করব না।’’

এ দিনও কোনও ক্ষতি করেনি ডাকাতেরা। দীপেনবাবু একটি চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার। এই বাড়িতে তিনি, তাঁর স্ত্রী ও সীমাদেবী থাকেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে কলকাতাতেই শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। বেশ কয়েকটি গেট পেরিয়ে ঢুকতে হয় ইস্ট পার্কের এই বাড়িতে। পুলিশ জানাচ্ছে, এক তলার জানলার গ্রিল কেটে ঘরে এক জনকে ঢুকিয়ে আগে ভিতর থেকে বাড়ির দরজা খোলায় ডাকাতেরা। তার পরে দরজা দিয়ে গটগট করে ঢোকে। পুলিশি টহল নেই? প্রশ্ন করাতে স্থানীয়দের জবাব, ‘‘পুলিশকে গিয়েই জিজ্ঞাসা করুন না।’’

নীচের একটি ঘরে থাকা বছর পঞ্চাশের সীমাদেবীকে নিয়ে এর পরে সটান উপরে। বেরোনোর সময়ে দোতলা থেকে সিঁড়ি ধরে নেমে মূল দরজা খুলে বেরিয়ে যায় অবলীলায়। ঘর ছাড়ার আগে অবশ্য পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমকে না জানানোর হুমকি দিয়ে যায় ডাকাত দলটি।

সাত দিনের মাথায় শহরের দু’টি পাশাপাশি এলাকায় একই কায়দায় পুরো ‘অপারেশন’ চালানো দেখে অবশ্য খোদ লালবাজারের কর্তাদের মনে সন্দেহ জেগেছে, দুই দুষ্কৃতী দল আদতে একই কি না। তা তদন্তসাপেক্ষ বলে জানান ডিসি (এসডব্লিউডি) রশিদ মুনির খান। ইস্ট পার্কের দুই বাসিন্দার আশঙ্কা, মঙ্গলবার তাঁদের বাড়িতেও দুষ্কৃতীরা ঢোকার চেষ্টা করেছিল। এক বাসিন্দা জানান, তিনি সকালে উঠে দেখেন, তাঁরও নীচের তলার একটি জানালা খোলা এবং পাল্লা ভাঙা। যদিও দীপেনবাবু ছাড়া আর কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি।

জনবহুল এলাকায় অস্ত্র-সহ লুঠপাট চালিয়ে দুষ্কৃতীরা অনায়াসে পালানোয় এলাকার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, গত বছরেও পুজোর আগে একই পাড়ায় ডাকাতি হয়। তার পরেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, গত মঙ্গলবার রিজেন্ট পার্ক এলাকার বাসিন্দা প্রলয় বিশ্বাসের বাড়িতে প্রায় একই কায়দায় ডাকাতি হয়। সেই দলটিই কী এ দিনের ঘটনায় যুক্ত? রশিদ মুনির খান জানান, রিজেন্ট পার্ক থানাটি অন্য ডিভিশনে। কিন্তু দু’টি ঘটনার মিল থাকায় তাঁরা ওই ডিভিশনের সঙ্গেও কথা বলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Robbery Haridevpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE