Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

‘লাইন পেরিয়ে যাব না’, জবাব সমস্বরে

গত মঙ্গলবার স্কুলে আসার পথে রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বরাহনগরের ডাক্তার বাগানের বাসিন্দা রাজশেখর ধর ও তাঁর নাতনি, প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া জুঁইয়ের।

প্রচার: তীর্থভারতী স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে আরপিএফ এবং জিআরপি-র আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

প্রচার: তীর্থভারতী স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে আরপিএফ এবং জিআরপি-র আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

রেললাইন পারাপার করা কি ঠিক?

Advertisement

প্রশ্নটা শুনে একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল খুদে পড়ুয়ারা। রেল রক্ষী বাহিনীর আধিকারিকেরা তাদের বললেন, ‘‘একদম ঠিক নয়। তোমরাও আর কোনও দিন লাইন পারাপার করবে না। বাড়িতেও বলবে।’’ আধিকারিকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে খুদেরা ‘শপথ’ নিল, তারা লাইন পারাপার করবে না।

গত মঙ্গলবার স্কুলে আসার পথে রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বরাহনগরের ডাক্তার বাগানের বাসিন্দা রাজশেখর ধর ও তাঁর নাতনি, প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া জুঁইয়ের। বৃহস্পতিবার ওই শিশুর স্কুলে এসে অন্য পড়ুয়াদের রেললাইন পারাপারে বিপদের কথা বোঝালেন দমদম স্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট, আরপিএফ এবং জিআরপি-র আধিকারিকেরা।

দমদম ও বেলঘরিয়া স্টেশনের মধ্যে লাইন না পেরিয়ে ঘুরপথে স্কুলে আসতেও যে সমস্যা রয়েছে, এ দিন তা নিয়ে আধিকারিকদের প্রশ্ন করে তীর্থভারতী স্কুলের পড়ুয়ারা। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া রাজ রায় ও সুমি চৌধুরী জানতে চায়, ‘‘নোয়াপাড়া আন্ডারপাসে হাঁটার জায়গা নেই। বর্ষায় জল ভর্তি হয়ে থাকে। তখন কী করব?’’ পড়ুয়াদের সঙ্গে একই প্রশ্ন তোলেন শিক্ষিকা প্রতিমা সেনগুপ্তও।

Advertisement

এ বিষয়ে অবশ্য তেমন কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ওই আধিকারিকেরা। তবে তাঁরা জমা জল বার করার বিষয়ে স্থানীয় পুরসভা এবং কাউন্সিলরের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষকে কথা বলার পরামর্শ দেন।

যে সব পড়ুয়া রেললাইন পেরিয়ে স্কুলে আসে, তাদের হাত তুলতে বলেন আরপিএফ আধিকারিকেরা। হাত তুলতেই বোঝানো হয়, লাইন পার হতে গিয়ে তারা হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে পারে। সেই সময়ে ট্রেন চলে এলে বিপদ ঘটবে। তাই বাবা-মা বললেও তারা যেন বলে, ‘না, আমরা যাব না।’ স্কুলের শিক্ষকেরাও এ দিন ওই পড়ুয়াদের বলেন, ‘‘ঘুরপথে আসতে হলে সময় বেশি লাগবে। তাই কিছু ক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বেরোবে।’’

স্কুলের যে মাঠে এ দিন সচেতনতার প্রচার চলছিল, তারই পাশের ক্লাসঘরে প্রতিদিন প্রথম বেঞ্চে বসত জুঁই। তা দেখিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘ওই ক্লাসঘরে জুঁইয়ের বন্ধুরা ঢুকলেই কাঁদছে। আমাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই আজ থেকে প্রথম শ্রেণির ঘরটা বদলে দিয়েছি।’’ স্কুলে ঢোকার মুখেই দেওয়ালের নোটিস বোর্ডে জুঁইয়ের প্রতি শোকবার্তা লেখা। সেটা দেখে মাঝেমধ্যেই তার প্রিয় তিন বন্ধু আরাধ্যা, তনুশ্রী ও সোহিনী প্রশ্ন করছে, ‘জুঁই কি মারা গিয়েছে? ওকে কি আর দেখতে পাব না?’

কোনও মতে চোখের জল সামলে স্কুলের মিড-ডে মিলের কর্মী মামণি মণ্ডল উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘ধুর বোকা। জুঁই তো স্টার হয়ে গিয়েছে। আকাশে তাকালেই দেখতে পাবি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.