প্রদীপ ও সজল ঘোষের পুজো হিসেবে পরিচিত লেবুতলা পার্কে এ বার জয়পুরের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো শুধুই ধর্মীয় পার্বণ এমনটা নয়। এ উৎসব সর্বজনীন। আবার এই উৎসব রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনেরও। খোদ কলকাতায় পাঁচটি পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী। এ ছাড়াও তৃণমূলের পুর প্রতিনিধি থেকে বিধায়ক, নেতাদের পুজো তো রয়েইছে। তার বেশিরভাগই জাঁকজমকের নিরিখে প্রথম সারিতে। তবে তারই মধ্যে বিজেপি-র ‘একা কুম্ভ’ সজল ঘোষ। এক সময়ের দাপুটে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ঘোষের পুজো হিসেবেই বিখ্যাত ছিল কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজো। ডাকনাম লেবুতলা পার্ক। প্রদীপের উত্তরসূরি হিসেবেই ছেলে সজল এখন সেই পুজোর প্রধান কর্তা। আর পিতা-পুত্র দু’জনেই এখন গেরুয়া শিবিরে।
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিকের ‘একডালিয়া এভারগ্রিন’ শহরের চিরসবুজ পুজোর অন্যতম। একই ভাবে ‘চেতলা অগ্রণী’ রাজ্যের আবাসন ও পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের পুজো নামেই পরিচিত। সেই তালিকায় রয়েছে নিউ আলিপুরের ‘সুরুচি সঙ্ঘ’। এটি রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ক্লাব। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো ‘নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ’। তবে তার মধ্যে আবার এগিয়ে রাজ্যের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসুর ‘শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব’। এ বার সেখানে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বাড়ির স্বীকৃতি পাওয়া দুবাইয়ের ‘বুর্জ খলিফা’-র আদলে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের সজল অবশ্য এই লড়াই মানতে রাজি নন। রাজনীতির রংও লাগতে দিতে চান না। বিধানসভা ভোটের আগেই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা সজল বলেন, ‘‘এই পুজো সকলের। এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আর যে সব পুজোর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে তার মধ্যে একডালিয়া এভারগ্রিন ছাড়া বাকি সবই গজিয়ে ওঠা, ভুঁইফোড় পুজো। ক্ষমতায় না থাকলে এ সব পুজো আর থাকবে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের পুজোর চুল রোদে পাকেনি। পেকেছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায়।’’
তবে সজল মানতে না চাইলেও রাজনীতির রং লেগেছে। এ বার লেবুতলা পার্কের ৮৬তম বছরের পুজোর উদ্বোধনেই সেই ছবি ধরা পড়েছে। তৃণমূল নেতাদের একাধিক পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের নেতারা বড় পুজোর মধ্যে শুধু প্রদীপ-সজল পিতা-পুত্রের বারোয়ারিতে উদ্বোধনের ডাক পেয়েছেন। গত শনিবার সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রবিবার গিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
বিজেপি-তে যোগ দিলেও গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি সজল। তবে গেরুয়া রাজনীতিতে নতুন করে খ্যাত হয়ে যান সম্প্রতি একটি গোলমালের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে। গত ১২ অগস্ট মুচিপাড়া থানা এলাকায় একটি গোলমালে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে পরের দিন মুচিপাড়া থানার পুলিশকর্মীরা সজলের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। মুচিপাড়া থানার ওসি জানলা দিয়ে সজলকে বাড়ির বাইরে আসার কথা বললেও তিনি রাজি হননি। উল্টে তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দরজা ভাঙুন।’’ এর পর পুলিশকর্মীরা লাথি মেরে বাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে। ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় সজলকে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের যেখানে পুজো হয় সেখান দিয়েই থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তবে সে সব ভুলে এখন পুজো নিয়েই ব্যস্ত সজল। বাকিদের সঙ্গে তুলনা নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ও সব নিয়ে চিন্তিত নই। দর্শনার্থী টানার নিরিখে আমরা চিরকাল এক নম্বরে। মা দুর্গার আশীর্বাদে ভবিষ্যতেও থাকব।’’
এটা ঠিক যে, কলকাতায় যে সব মণ্ডপে বরাবর দর্শনার্থীদের প্লাবন দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম মধ্য কলকাতার এই পুজো। প্রতি বছরই মণ্ডপে নানা বৈচিত্র নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে লেবুতলা। এ বার মণ্ডপ হয়েছে রাজস্থানের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের আদলে। জয়পুরে বিড়লা মন্দির হিসেবে খ্যাত সেই শ্বেতশুভ্র মন্দিরই যেন উঠে এসেছে উৎসবের কলকাতায়। পঞ্চমী থেকেই ভিড় লেগে যায় এই পুজোয়। অষ্টমীতে তা অন্য মাত্রা নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy