Advertisement
E-Paper

দিদি দেখুন, দোষীরা যেন শাস্তি পায়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যেতে চান মণিকা দাস। মঙ্গলবার হেদুয়ায় সাঁতার শিখতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গিয়েছেন মণিকাদেবীর ২২ বছরের মেয়ে সঙ্গীতা। প্রাথমিক ভাবে প্রশিক্ষকদের গাফিলতির দিকে আঙুল উঠলেও এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:০০
শোকার্ত মণিকা দাস। — নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত মণিকা দাস। — নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যেতে চান মণিকা দাস।

মঙ্গলবার হেদুয়ায় সাঁতার শিখতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গিয়েছেন মণিকাদেবীর ২২ বছরের মেয়ে সঙ্গীতা। প্রাথমিক ভাবে প্রশিক্ষকদের গাফিলতির দিকে আঙুল উঠলেও এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভীষণ অসন্তুষ্ট গোটা পরিবার। বুধবার হেদুয়ার বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে মণিকাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তির জন্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্তদের থানা থেকেই ছেড়ে দিল পুলিশ। আমার স্থির বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী আমার দিক থেকে মুখ ফেরাতে পারবেন না। দোষীদের শাস্তি চেয়ে আমি তাঁর কাছে যাব।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার হেদুয়ার আজাদ হিন্দ বাগ মহিলা সমিতির সদস্য হিসেবে সাঁতার শিখতে গিয়ে মৃত্যু হয় সঙ্গীতার। অভিযোগ, মাত্র ১৫ দিন আগে সাঁতার শিখতে যাওয়া সঙ্গীতা জলে নামলেও তাঁর উপরে নজর রাখেননি কোনও প্রশিক্ষক। শিক্ষানবীশরা যেখানে শেখে, সেখান থেকে লোহার রডের রেলিং গলে সঙ্গীতা ৭ ফুট গভীর জলে গিয়ে পড়েন। তা-ও নজর এড়িয়ে যায় প্রশিক্ষকদের। এমনকী, জল থেকে দীর্ঘক্ষণ তিনি না উঠলেও কেউ খোঁজই করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। শেষে সঙ্গীতার পিসি অনিমা সাহা ওই ক্লাবে গিয়ে ভাইঝির খোঁজ নিতে শোরগোল পড়ে যায়। উদ্ধার হয় সঙ্গীতার দেহ।

মঙ্গলবারই বড়তলা থানায় কয়েক জন প্রশিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মৃতার পরিবার। কিন্তু রাত পর্যন্ত ওই সংগঠনের কয়েক জনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এতেই ক্ষুব্ধ সঙ্গীতার পরিবার।

বুধবার সঙ্গীতার বাড়ি গিয়ে দেখা গিয়েছে, শোকের পাশাপাশি রাগে ফুঁসছেন পরিবারের সকলে। সঙ্গীতার কাকা গোপাল দাস বলেন, ‘‘একে তো মেয়েটা চলে গেল। তার উপরে পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা সেই যন্ত্রণাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা হেদুয়ায় সাঁতার প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত, মঙ্গলবারের ঘটনার পরে তাঁরা খুঁচিয়ে দিয়েছেন ১৪ বছর আগেকার স্মৃতি। সে বার ১৩ বছরের পূজা জালান সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা যায়। ঘটনার ঠিক এক বছর পরে মারা যান পূজার বাবা সুরেশ জালানও। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়ের মৃত্যুর পরে অবসাদে ভুগছিলেন সুরেশ। তার পরে পূজার মা দুই মেয়েকে নিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যান। সুরেশের ভাই সুশীল বুধবার বলেন, ‘‘পুরনো ওই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। আমাদের পরিবারের আর যারা সাঁতার শিখতে যেত, সবাইকে বারণ করা হয়েছে। আমাদের মেয়েকে হারালেও কোনও সুবিচার পাওয়া যায়নি।’’

একই অভিযোগ উঠে এসেছে ১৪ বছর পরে। সঙ্গীতার বাবা নারায়ণচন্দ্র দাসও এ দিন বলেন, ‘‘দোষীদের শাস্তি চাই।’’ সঙ্গীতার পরিবারের লোকেরা জানান, মেয়ে কোনও দিন ফিরে আসবে না, সেটা যেন মানতেই চাইছেন না মণিকাদেবী। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে কেঁদেই চলেছেন তিনি।

প্রাথমিক ভাবে গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিচ্ছে পুলিশও। তবে কার গাফিলতিতে সঙ্গীতার মৃত্যু হয়েছে, সে সম্পর্কে তদন্তকারীরা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বলে পুলিশের দাবি। থানায় অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো এবং ষড়যন্ত্রের একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ দিন হেদুয়ার ওই সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বড়তলা থানার পুলিশকর্মীরা গিয়ে এক কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে বেশ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেন।

এই নিয়ে অবশ্য কোনও ভাবেই মুখ খুলতে চাননি সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা।

Victim Mamata Banerjee Drowning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy