প্রতীকী ছবি।
তবে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত? যে অভিযোগ সামনে এসেছে, তা কি আদতে হিমশৈলের চূড়া মাত্র?
চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ-সহ এই সংক্রান্ত কাজের বেআইনি ভাবে বরাত দেওয়ার অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা বর্তমানে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’-এর চেয়ারম্যান রাজীব সিংহের নাম জড়িয়েছে। এ বার আরও একাধিক নাম সামনে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্তাদের একাংশ।
অভিযোগ, স্বাস্থ্যসচিব থাকাকালীন রাজীববাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার সুবাদেই নিয়ম ভেঙে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ‘কনসোর্শিয়াম অব স্পেকট্রাম ওয়েস্ট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’কে রাজ্যের ন’টি জ়োনে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
যদিও রাজীববাবু বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে যে দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তাতে কোনও অনিয়ম ছিল না। কারণ, এসএনজি সংস্থা উত্তরপ্রদেশের সিংহভাগ জায়গার বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ, তার প্রক্রিয়াকরণের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। দরপত্রের শর্ত পূরণ করেছিল বলেই তারা কাজের বরাত পেয়েছিল। টেন্ডার ডাকার সময় টেন্ডার কমিটিতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কলকাতা পুরসভা, রাজ্য অর্থ দফতর-সহ অন্য দফতরের প্রতিনিধিরাও ছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার সময়ে সব ঠিক ছিল। পরে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না, জানি না। তা ছাড়া আমার কাছে ফাইল তো আসত শুধু অনুমোদনের জন্য। কিন্তু সমস্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা দেখতেন অন্য আধিকারিকেরা।”
প্রশাসনিক কর্তাদের একটা বড় অংশ অবশ্য প্রাক্তন মুখ্যসচিবের এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজীববাবু কিছু জানলেন না, অথচ ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ হিসেবে এমন একটি সংস্থা কাজের বরাত পেল, যাদের এ রাজ্যে না আছে নিজস্ব প্লান্ট, না আছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র!
প্রশাসনিক কর্তাদের ওই অংশ প্রাক্তন মুখ্যসচিবের সঙ্গে এসএনজি সংস্থার ‘ঘনিষ্ঠতা’ বোঝাতে ২০১৬ সালের ইটালি যাওয়ার প্রসঙ্গও টেনে আনছেন। তাঁদের বক্তব্য, সেই সময়ে রাজীববাবু রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ দফতরের সচিব ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে সে বছর ইটালিতে যাওয়া ওই প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন এসএনজি সংস্থার ডিরেক্টর এস পি সিংহও। যদিও এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজীববাবুর যুক্তি, প্রতিনিধিদল ওখানে কী ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে, তা দেখতে গিয়েছিল। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। রাজীববাবুর কথায়, ‘‘তা ছাড়া দরপত্রের শর্ত পূরণ করলে শুধুমাত্র আমার ঘনিষ্ঠ বলেই যেমন কেউ বাতিল হতে পারেন না! তেমনই সেই কারণে তাঁর জন্য নিয়মও শিথিল হতে পারে না। আমার কাজ সব স্তরের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। না হলে শিল্প হবে কী ভাবে?’’
কিন্তু তাই বলে শিল্প আনার জন্য বেআইনি ভাবে কাজের বরাত দেওয়া হবে?
প্রাক্তন মুখ্যসচিবের উত্তর, ‘‘দু’বছর আগে ডাকা দরপত্রের অত খুঁটিনাটি এখন মনে নেই। কেন এখনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নেই, কেন এখনও ওদের প্লান্ট তৈরি হয়নি বা কোনও অনিয়ম হচ্ছে কি না, সেটা স্বাস্থ্য দফতরের বর্তমান কর্তারা বলতে পারবেন।’’
যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলছেন, ‘‘প্রক্রিয়া তো আগেই শুরু হয়েছে। অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন একটি কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy