Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বয়স্কদের সঙ্গ দেবে স্কুলের ‘নাতি-নাতনি’

এমন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গেই এ বার স্কুলপড়ুয়াদের মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগী হল শহরের বেশ কিছু স্কুল। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রমে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতেও উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

আড্ডা: এক দিনের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে প্রবীণেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আড্ডা: এক দিনের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে প্রবীণেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

স্বামীর রোজগারের টাকা এবং নিজের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে নাকতলায় বাড়ি তৈরি করেছিলেন এক মহিলা। স্বামী মারা যাওয়ার পরে একমাত্র ছেলে পুণেতে চাকরি পাওয়ায় তিনি সেখানে যান। টাকার প্রয়োজনে বাড়ি বিক্রি করে ছেলেকে সব টাকা তুলে দিয়েছিলেন বছর ষাটের ওই বৃদ্ধা। কিন্তু ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিকে নিয়ে সংসার শুরু করলেও সেই মেয়াদ এক বছরও টেকেনি। পরিবার থেকে বিতাড়িত হতে হয় তাঁকে। বাড়িটিও বিক্রি করে দেওয়ায় সহায়-সম্বলহীন ওই মহিলার এখনকার ঠিকানা কসবার বৃদ্ধাশ্রম। মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে যায় সাত বছরের নাতনির ছোট্ট নিষ্পাপ মুখটা। জীবনের শেষ পর্বে এসে এই একাকিত্ব সহ্য করতে না পেরে সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্য উবে গিয়েছে তাঁর।

এমন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গেই এ বার স্কুলপড়ুয়াদের মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগী হল শহরের বেশ কিছু স্কুল। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রমে পড়ুয়াদের নিয়ে যেতেও উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সমাজতত্ত্ববিদেরা বলছেন, একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্ব যত বিপন্ন হয়ে পড়ছে, ততই বাড়ির বয়স্কদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। আদরের নাতি-নাতনিকে কোলে তুলে শৈশব ফিরে পাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দাদু-ঠাকুরমা। পুত্র-কন্যার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ওই মানুষগুলিকে সাময়িক হলেও নাতি–নাতনির সুখ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ।

সে পথে হেঁটেই শুক্রবার, রামমোহন মিশন হাইস্কুলের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কসবার একটি বৃদ্ধাশ্রমের কয়েক জন বৃদ্ধাকে। সেখানে তাঁরা তুলে ধরলেন তাঁদের জীবনের নানা কাহিনি। পড়ুয়ারাও তাঁদের পেয়ে উচ্ছ্বসিত। স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বললেন, ‘‘বহু পড়ুয়া তাদের পরিবারে বয়স্ক মানুষদের পায় না। তাদের থেকে পুরনো দিনের গল্প শোনার সুযোগও প্রায় শেষ। সেই অবস্থা থেকে পড়ুয়াদের বার করে মূল্যবোধ জাগাতেই এমন উদ্যোগ।’’

মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস-এর ডিরেক্টর দেবী কর জানান, তাঁদের স্কুলেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাসে অন্তত কয়েক বার বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয় পড়ুয়াদের। সেখানে রীতিমতো আড্ডা জমে দুই প্রজন্মে। ‘‘এ ভাবেই বঞ্চিত মানুষগুলোর জীবনে একটু আনন্দ দিতে চাই। তেমনই পড়ুয়াদেরও বাস্তবের মুখোমুখি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,’’— বলেন দেবী কর। লা-মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধরের কথায়, ‘‘এই কাজ আমরা অনেক দিন আগেই শুরু করে দিয়েছি। বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে পড়ুয়ারা প্রায়ই আবাসিকদের সঙ্গে দেখা করে। সময়ও কাটায়।’’

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ কুণ্ডু বলছেন, ‘‘ওই বয়স্ক মানুষগুলোর জীবনে যা হারিয়েছে, সেটা তো ফিরে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু স্কুলপড়ুয়াদের সান্নিধ্যে নিয়ে এলে তাঁরা জীবনে বাড়তি অক্সিজেন পেতে পারেন। পড়ুয়াদের মধ্যেও বাস্তব বোধ তৈরি হয়। সেটা ভবিষ্যতের জন্য খুব জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Age Home Kasba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE