কয়েক দিন ছুটির পরে খুলেছে স্কুল। কিন্তু পঠনপাঠন শুরু হলেও স্বাভাবিক ছন্দ ফেরেনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেশির ভাগই স্কুলে আসছেন না। যার জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনা। বুধবার কোথাও বিজ্ঞানের ক্লাস বন্ধই রইল, কোথাও আবার কোনও মতে নিচু ক্লাসের শিক্ষকদের দিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করল দুই ২৪ পরগনার একাধিক স্কুল।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ভাঙড় গার্লস হাইস্কুলের সাত জন শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই বিজ্ঞান বিভাগের। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষিকা না থাকায় এ দিন নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ক্লাস নেওয়াই হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নূপুর শিকদার বলেন, ‘‘অন্য বিভাগের শিক্ষিকাদের দিয়ে স্কুল কোনও মতে চালানো সম্ভব হয়েছে।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষিকা না থাকায় পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ পেলে অন্তত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে।’’
ভাঙড়েরই বোদরা গার্লস হাইস্কুলে আট জন শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। এ দিন ওই স্কুলেও ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাণ্ডবী ভৌমিক বলেন, ‘‘নতুন করে স্কুলের রুটিন বদল করতে হবে। তা করতে গিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সরকার যদি অর্থ অনুমোদন করে, তা হলে অন্তত অতিথি শিক্ষক দিয়ে কিছু দিন স্কুল চালানো যাবে।’’
বাগদার হেলেঞ্চা গালর্স হাইস্কুলের চার জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। সকলেই বিজ্ঞান বিভাগের। তিন জন অঙ্কের, এক জন পদার্থ বিজ্ঞানের। ফলে, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস করানোই এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিচু ক্লাসের শিক্ষিকাদের দিয়ে কোনও মতে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা শীলা বিশ্বাস বলেন, ‘‘জানি না, আংশিক সময়ের শিক্ষিকা নেওয়া যাবে কিনা। স্কুলের তহবিলের অবস্থাও ভাল নয়।’’ গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি স্কুলে পদার্থ বিজ্ঞানের চার জন শিক্ষক ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে এক জন অবসর নিয়েছেন। আর এক জনের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে। প্রধান শিক্ষককে নিয়ে এখন আছেন পদার্থ বিজ্ঞানের দু’জন শিক্ষক। স্কুলের প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলে এখন ক্লাস নিতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকেও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও ক্লাস বন্ধ রাখছি না। আমি এবং সহশিক্ষক মিলে ক্লাস করাচ্ছি। তবে, এতে বাড়তি চাপ পড়ে যাচ্ছে।’’
গোসাবার মঙ্গলচন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ আট জন স্থায়ী শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে স্কুলে রয়েছে ৯৫০ জন পড়ুয়া। পাঁচ জন শিক্ষকের পক্ষে এত জনের ক্লাস নেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই পরিচালন কমিটির উদ্যোগে গ্রামের দু’জন শিক্ষিত যুবক এ দিন স্কুলে এসে ক্লাস নিয়েছেন। স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি স্বপনকুমার রায় বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি সমস্যার কথা। কিন্তু এখনও কোনও সমাধান হয়নি। এ ভাবে চললে স্কুল চালানো দুষ্কর হয়ে যাবে।’’
বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সাত জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির রসায়নের ক্লাস ও প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে শিক্ষিকার অভাবে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস অন্য বিষয়ের শিক্ষিকাদের দিয়ে নিতে হয়েছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল। গোপালনগরের নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলের আট জনের চাকরি গিয়েছে। শিক্ষিকা না থাকায় রসায়ন ও কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। পাথরপ্রতিমার জি-প্লট বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির স্কুলের ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ ১৩ জনেরই চাকরি বাতিল হয়েছে। স্কুলের সহ-শিক্ষিকা মিতালি বাগের প্রশ্ন, ‘‘চার জন শিক্ষকের পক্ষে দেড় হাজার ছাত্রছাত্রীকে পড়ানো কি সম্ভব!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)