রেষারেষি করতে ব্যস্ত দু’টি বাসের মাঝখানে পড়ে, একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হলেন এক স্কুটারচালক। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে হাজরা মোড়ের কাছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে। ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালান দু’টি বাসের চালক। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে একটি বাসের সামনের চাকায় পিষ্ট স্কুটারচালককে। ক্রেন দিয়ে বার করা হয় তাঁর স্কুটারটি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই স্কুটারচালককে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত স্কুটারচালকের নাম লক্ষ্মণকুমার মহারাণা (৫৫)। তাঁর বাড়ি বাঁশদ্রোণীর নতুনবাজারে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বারাসত-বটানিক্যাল গার্ডেন রুটের একটি বেসরকারি বাস এস পি মুখার্জি রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। সেই সময়ে হাওড়া থেকে যাদবপুরগামী একটি সরকারি বাস (ই-১) ওই বেসরকারি বাসটির ডান দিক ঘেঁষে এসে সামনে দাঁড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সে সময়েই ওই দু’টি বাসের মাঝখানে পড়ে যান স্কুটারচালক লক্ষ্মণ। আচমকা সরকারি বাসের ধাক্কায় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। আর বেসরকারি বাসটি এগোতে গিয়ে তাঁকে পিষে দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরেই চম্পট দেন দুই বাসচালক। পুলিশ এসে ক্রেনে করে বেসরকারি বাসটির সামনের ডান দিকের চাকায় আটকে থাকা স্কুটারটিকে বার করে। লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ দিনের দুর্ঘটনার জন্য পুলিশ দু’টি বাসকেই দায়ী করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বেসরকারি বাসটি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যে ভাবে যাত্রী তুলছিল, তা বেআইনি। আবার সরকারি বাসটি অপর বাসটির ডান দিক ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে এই দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত। ভবানীপুর ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘সরকারি বাসটি বেসরকারি বাসের ডান দিকে চেপে গিয়ে, তার ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেই সময়েই দু’টি বাসের মাঝে স্কুটারটি চলে আসায় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
বাঁশদ্রোণীর নতুনবাজারে স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন লক্ষ্মণ। তিনি পেশায় ছিলেন ইন্টিরিয়ার ডিজ়াইনার। এ দিন ভবানীপুর থানার তরফে দুর্ঘটনার খবর বাঁশদ্রোণী থানার মাধ্যমে মৃতের বাড়িতে পাঠানো হয়। এই খবরে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মণের মেয়ে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। লক্ষ্ণণের বাড়ির মালিক উৎসব হালদার বলেন, ‘‘বাসের রেষারেষির কারণেই এই পরিণতি হল। বাসচালকদের কঠোর শাস্তি হোক।’’
শহরের পথে বাসের রেষারেষি নতুন নয়। আগেও দু’টি বাসের রেষারেষির ফলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার পরেও বাসচালকদের মধ্যে রেষারেষির প্রবণতা কমছে না। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই বাসচালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।