Advertisement
০২ মে ২০২৪

রাত জেগে মূর্তি শেষ করেছেন শিল্পী

মূর্তি বসানোর কাজের তদারকি করতে করতে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ২৫ জন সহযোগী গত চার দিন সারারাত কাজ করে মূর্তি তৈরি  শেষ করেছেন।’’

পুনঃস্থাপন: বিদ্যাসাগর কলেজে নতুন মূর্তি বসানোর কাজ চলছে। সোমবার। (ইনসেটে) শিল্পী গৌতম পাল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

পুনঃস্থাপন: বিদ্যাসাগর কলেজে নতুন মূর্তি বসানোর কাজ চলছে। সোমবার। (ইনসেটে) শিল্পী গৌতম পাল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

মাত্র চার দিন। তার মধ্যেই বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করে দিতে হবে। আরও বড় ব্যাপার হল সেই মূর্তির উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। গত ৬ জুন রাজ্য সরকারের তরফে তেমনটাই জানানো হয়েছিল শিল্পী গৌতম পালকে। এমন প্রস্তাবে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অভিজ্ঞ শিল্পী। এত অল্প সময়ে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের মূর্তি তৈরির বরাত পাওয়ার পরে কাজ শেষ করা নিয়ে প্রথমে খানিকটা সন্দেহে ছিলেন তিনি নিজেও। সহযোগীদের নিয়ে বিদ্যাসাগর নির্মাণের লড়াইয়ে নেমে পড়েন। এবং শেষ পর্যন্ত সোমবার সেই মূর্তি বসানো হল বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাঙ্গণে। আজ, মঙ্গলবার কলেজে বিদ্যাসাগরের একটি আবক্ষ মূর্তির সঙ্গে ওই পূর্ণাবয়ব মূর্তিও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিদ্যাসাগর কলেজে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল মুখ ঢাকা অবস্থায় পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি কলেজ প্রাঙ্গণে রাখা। মূর্তি বসানোর কাজের তদারকি করতে করতে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ২৫ জন সহযোগী গত চার দিন সারারাত কাজ করে মূর্তি তৈরি শেষ করেছেন।’’

বিদ্যাসাগরের ওই মূর্তিটি ফাইবার গ্লাসের তৈরি। সেটি কৃষ্ণনগরের ভাতজংলায় গৌতমবাবুর স্কাল্পচার গার্ডেনে তৈরি করা হয়েছে। শিল্পী জানান, তাঁর সেই বাগানে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির মূর্তি রয়েছে। সে সব মূর্তির বেশির ভাগই সিমেন্টের তৈরি। তবে ব্রোঞ্জের মূর্তিও রয়েছে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমার ওই মূর্তির বাগানে বিদ্যাসাগরের একটি মূর্তিও রয়েছে। ওই মূর্তির ছাঁচ তৈরি করে নতুন এই বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানো হয়েছে। না হলে এত তাড়াতাড়ি এই মূর্তি তৈরি করা খুব কঠিন ছিল।’’ তিনি জানান, সিমেন্টের মূর্তি এত তাড়াতাড়ি তৈরি করা যেত না। তাই বিদ্যাসাগরের এই মূর্তিটি ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

কৃষ্ণনগর থেকে মালবাহী গাড়িতে চাপিয়ে ওই মূর্তি সোমবার দুপুরে কলেজে আনা হয়। মূর্তির সঙ্গে কৃষ্ণনগর থেকে আসেন গৌতমবাবুও। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মূর্তি কলেজর মেন গেটের বাঁ দিকের বেদীতে স্থাপন করা হয়। যদিও মূর্তির মুখ তখন কাগজে ঢাকা ছিল। মূর্তি বসানো কেন্দ্র করে এ দিন বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বর ছিল নিরাপত্তায় মোড়া। বহিরাগত কাউকেই কলেজে চত্বরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।

গৌতমবাবু জানান, সল্টলেকের সেক্টর ২-এ তাঁর একটি স্টুডিয়ো রয়েছে। সেখানেও মূর্তি তৈরির কাজ হয়। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, ফিনল্যান্ড থেকে শুরু করে ব্রাজ়িল, ইংল্যান্ডেও তাঁর তৈরি মূর্তি গিয়েছে। বিদেশে পাঠানো সব মূর্তিই অবশ্য ব্রোঞ্জের। দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার পাড়ে রামকৃষ্ণ, তাঁর ২৩ জন শিষ্য ও রানি রাসমণির মূর্তি বসানোর কাজ চলছে। সেই মূর্তিগুলোও তাঁরই বানানো। এ ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তাঁর তৈরি মূর্তি রয়েছে। সম্প্রতি দেহরাদূনেও বসানো হয়েছে তাঁর তৈরি এক সৈনিকের ব্রোঞ্জের মূর্তি। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘প্রায় সাড়ে আট ফুট উচ্চতার বিদ্যাসাগরের এই পূর্ণাবয়ব মূর্তির কাজ এত দ্রুত শেষ করা ছিল চ্যালেঞ্জের বিষয়।’’

অমিত শাহের রোড-শোয়ে গোলমালকে ঘিরে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার খবর ঘটনার দিনেই পেয়েছিলেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মতো ব্যক্তিত্বের মূর্তি ভাঙার খবরে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যাসাগর কলেজে যে আবক্ষ মূর্তি বসছে সেটা আমি বানাচ্ছি না ঠিকই, কিন্তু ওই কলেজেই পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করতে পেরে মনে খুব শান্তি পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Statue Vidyasagar College Sculptor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE