Advertisement
E-Paper

‘আবার এসো মা’! ঢাকের বাদ্যিতে বিষাদ গঙ্গার ঘাটে, পুলিশি নিরাপত্তায় শুরু হয়েছে বিসর্জন-পর্ব

মঙ্গলবার দুপুর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় গঙ্গার ঘাটে ঘাটে। বিকেল থেকে ঘাটগুলি ঢাকের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে। বিষাদের মধ্যেই সকলের মুখে একই কথা, ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩১
An image of Durga immersion

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রতি বারই এমন হয়। শিবঘরনি দুর্গা, হিমালয়নন্দিনী পার্বতী, মেনকাকন্যা উমা ক’টা দিনের জন্য কৈলাস ছেড়ে বাপের বাড়ি আসেন। তখন ‘মা আসছে’র আনন্দসুরে ভেসে যায় চার দিক। তার পর উৎসব শুরু হতে না হতেই হুস্ করে কেটে যায় দিনগুলো! আচমকা বেজে ওঠে বিদায়ের বিষাদধ্বনি। আবার কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন উমা। উৎসব শেষ। মঙ্গলবার দুপুর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রতিমা বিসর্জন শুরু হল গঙ্গার ঘাটে ঘাটে। বিকেল থেকে ঘাটগুলি ঢাকের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে। বিষাদের মধ্যেই সকলের মুখে একই কথা, ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পর্ব চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। সোমবার রাত থেকেই যৌথ ভাবে তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পুরসভা, কলকাতা পুলিশ ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। খিদিরপুরের দহিঘাট, বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, কুমোরটুলি, বাজাকদমতলা ঘাটে সব বন্দোবস্তে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এই ঘাটগুলিতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবুঘাটের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এসেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (ববি)। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বারের মতো এ বারও গঙ্গার ঘাটগুলি থেকে প্রতিমার কাঠামো তোলার জন্য পুরসভার তরফে ক্রেন রাখা হয়েছে। যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ মতো প্রতিমা বিসর্জন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো জল থেকে তুলে ফেলা যায়। এ ছাড়াও লাইফবোট, পর্যাপ্ত আলো ও বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই চার দিন বিসর্জন ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য গঙ্গার প্রতিটি ঘাটের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন পুকুরের ঘাটেও আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোতায়েন থাকছে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতা পুরসভাকে জানানো হয়েছে, এ বার প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গায় নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হবে তাদের তরফে। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি তারাও এ বার ৫০টি লাইফবোট নামাবে গঙ্গায়।

লালবাজার জানিয়েছে, শহরে মোট বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ২৭৫৭টি। এর বাইরে, প্রায় এক হাজারের মতো রয়েছে বিভিন্ন বাড়ির পুজো। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গঙ্গার ২৪টি ঘাট-সহ মোট ৬৮টি ঘাট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দশমীতে বড় কোনও ক্লাবের প্রতিমা বিসর্জন না হলেও ছোট ছোট ক্লাব এবং বাড়ির প্রতিমা জলে পড়েছে বা পড়বে। প্রতিটি ঘাটে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে নৌকা নিয়ে থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এ ছাড়াও, রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের জেটিতে প্রস্তুত থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি অতিরিক্ত দল। এর পাশাপাশি, ঘাটগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকেরাও থাকবেন। ডিসি পদমর্যাদার অফিসারদের ওই ঘাটগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অধীনে থাকছেন একাধিক এসি এবং ওসি পদমর্যাদার অফিসার। এ ছাড়া গঙ্গার ঘাটগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে নির্বিঘ্নে প্রতিমা নিরঞ্জন করা যায়। এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনারদের উপরে ঘাটের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব থাকছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন ঘাটে ক্যামেরার নজরদারির সঙ্গে নজর-মিনার থেকেও পরিস্থিতির উপরে লক্ষ রাখা হবে। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ পুলিশ পিকেট থাকছে। যার নেতৃত্বে থাকছেন সহকারী নগরপালেরা। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ওই পুলিশ পিকেট থাকবে বলে জানা গিয়েছে।

চলতি বছরে গণেশ পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সব নিয়ম অগ্রাহ্য করে ডিজে বাজানো হয়েছিল। তবে দুর্গাপুজোর বিসর্জন-পর্বে যাতে ডিজে বাজানো না হয়, তার জন্য বাহিনীকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কোনও রকম ভাবে ডিজে বাজানো হলেই তা বাজেয়াপ্ত করার জন্য পুলিশকর্মীদের বলা হয়েছে।

অন্য দিকে, বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ থেকে শুরু করে পুজোর বাড়ির ঠাকুরদালানে সন্ধ্যা থেকেই সিঁদুর খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাগবাজার থেকে ম্যাডক্স স্কোয়্যার, নাকতলা থেকে শ্রীভূমি—কোথাও সকালে, কোথাও বিকেলে, কোথাও সন্ধ্যায় সিঁদুরে রাঙা হয়েছে এয়োস্ত্রীদের কপাল। দুর্গাকে ধান, দূর্বা, পান, সিঁদুর, মিষ্টি দিয়ে চলেছে বিদায় জানানোর পর্ব— ‘আবার এসো মা’। তবে এই বিদায়ক্ষণেও রয়েছে ‘যেতে নাহি দিব’ ভাব। হোক না দশমী! ঠাকুর দেখা চলছে শেষ দিনেও। যাঁরা এই ক’দিনের উদ্দাম ভিড়ে ভীত হয়ে দূরে থেকেছেন, তাঁরা অনেকেই একটু ফাঁকায় ফাঁকায় ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। পুজোর প্রায় প্রত্যেক দিনই ঘুরে বেড়িয়েছেন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে, এমন অনেকে বাকি থেকে যাওয়া ঠাকুর দেখতে রাস্তায় নেমেছেন। পুজো তাই আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েও ‘হইল না শেষ।’ শেষ বেলায় মা’কে দু’চোখ ভরে দেখার বাসনায় উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে দশমীতেও জনস্রোত দেখা গিয়েছে। সিঁদুর খেলতে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে বাগবাজার সর্বজনীন পুজোমণ্ডপে। ছাতা সঙ্গী করেই রাজপথে নেমেছে জনতা।

Durga Puja 2023 Durga idol immersion Kolkata Durga Puja 2023
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy