Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

অলিগলির বাজি বাজারে চিন-চিন শব্দ

বাজি ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, মোটেও তা নয়। চিনের বাজি আদতে আমাদেরই বাজি বলে দাবি তাঁদের। অর্থাৎ, ওই সব বাজির জন্ম এ রাজ্যেই। মোড়কে চিনে ছাপ লাগিয়ে তা বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

বাহারি: পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায়।

বাহারি: পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

রংচঙে মোড়ক, সঙ্গে ভিন‌্‌দেশি হরফে ‘নাম, গোত্র, ঠিকানা’ লেখা। তাতেই বাজারে চাহিদা বাড়ছে ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকির! শহর, মফস্‌সলের অলিগলির বাজির দোকানে হাজির হলেই কানে আসছে ‘চিন, চিন’ শব্দ! দোকানিরা বলছেন, হিমালয় পেরিয়ে আসা বাজির কাছে নাকি এ দেশের বাজি নস্যি! এমনকি, অনেক ছোটখাটো বাজি ব্যবসায়ীরও এই চিনেবাজির নাম শুনলেই মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।

তা হলে কি সত্যিই এতটা পথ উজিয়ে এসে এ শহরে ঢুকছে চিনে বাজি?

বাজি ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, মোটেও তা নয়। চিনের বাজি আদতে আমাদেরই বাজি বলে দাবি তাঁদের। অর্থাৎ, ওই সব বাজির জন্ম এ রাজ্যেই। মোড়কে চিনে ছাপ লাগিয়ে তা বিক্রি হচ্ছে বাজারে। পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলছেন, ‘‘চিন থেকে কোনও বাজি কলকাতায় আসে না। কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী মোড়কে হিজিবিজি চিনে হরফ লাগিয়ে বিক্রি করছেন। তাতেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। চিনে ভাষায় কী লেখা রয়েছে, তা তো আমজনতার অনেকেই পড়তে পারেন না।’’

বাংলার বাজি, পটকার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক অবশ্য নতুন নয়। সুকুমার রায়ের অমর চরিত্র পাগলা দাশুর সহপাঠী রামপদর মিহিদানার ফাঁকা হা়ঁড়িতে চিনেপটকা পুড়ে পণ্ডিতমশাইয়ের চেয়ারের তলায় ফাটিয়ে স্কুলে কী কাণ্ডই না ঘটিয়েছিল। সত্তর পেরোনো বৃদ্ধদের অনেকেই বলছেন, পাঁচের দশকেও কিছু ধানিপটকা ‘মেড ইন চায়না’ ছাপ লাগিয়ে বিক্রি হত। সেগুলিই ছিল চিনেপটকা। কিন্তু পরবর্তী কালে সেই বাজি আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলছেন, ‘‘চিনে ফানুস নিয়েও গত কয়েক বছর হুজুগ উঠেছিল। সে সবই আসলে মোড়কের কারসাজি। রংচঙে ম়োড়কে চিনে হরফ থাকার ফলেই নাম হয়েছে চিনে ফানুস।’’ বৈধ বাজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাজি কারখানায় তৈরি বাজির মোড়কে নির্মাতার নাম, ঠিকানা থাকে। প্রত্যেকের নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড’ও রয়েছে। কিন্তু সেই কারখানা তো হাতেগোনা। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এ রাজ্যে ‘পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজেশন’ (পেসো)-র ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র চারটি কারখানার। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র পেয়েছে ২৪টি কারখানা। কিন্তু আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন তল্লাটে বাজি কার্যত কুটির শিল্প হয়ে গিয়েছে। সেই সব এলাকার অবৈধ কারখানার বাজিই ‘চিনে’ তকমা লাগিয়ে বাজারে বিকোচ্ছে বলে দাবি করছেন বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকে।

বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ এ-ও বলছেন, সস্তার জিনিসের সঙ্গে ‘চিনে’ নামের সম্পর্ক রয়েছে। বৈধ কারখানার বাজি, ফানুসের দাম তুলনায় বেশি। তাই সস্তা বাজির কারবারিরা ‘চিনে’ হয়ে উঠেছেন। শুভঙ্কর বলছেন, ‘‘বছর কয়েক আগে চিনে বাজির কথা কানে আসতেই আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। চিন থেকে বাজি আমদানি বন্ধ করতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে চিনে বাজি আমদানির কোনও অভিযোগ ওঠেনি।’’

তবে শহরের পা়ড়ায়, অলিগলিতে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দোকানের খদ্দেরেরা কি তকমা আঁটা ‘চিনে’ বাজিকে চিনে নিতে পারবেন— প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Cracker China MArket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE