Advertisement
E-Paper

চার বছরে ধৃত ৭৩ হাজার, তবু ট্রেনে বন্ধ হয় না হিজড়ে-দাপট

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে এই জুলুমবাজি আটকাতে রেল পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়ে আরটিআই করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১০:১৮
২০১৫-২০১৮ সালের মধ্যে যাত্রীদের থেকে জোর করে টাকা তোলার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৩ হাজার হিজড়েকে।

২০১৫-২০১৮ সালের মধ্যে যাত্রীদের থেকে জোর করে টাকা তোলার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৩ হাজার হিজড়েকে। ফাইল চিত্র।

কোনও মতেই যেন ‘না’ বলা যাবে না! দাবি মতো টাকা না দিলেই জুটবে আপত্তিকর কথা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, কখনও কখনও আবার শারীরিক নিগ্রহও! দল বেঁধে এসে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও প্রচুর। লোকাল ট্রেনের কামরায় হিজড়েদের একাংশের জুলুমবাজির এমন অভিযোগ বাড়ছে দিন দিন। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, গত চার মাসে এমন অভিযোগ সব চেয়ে বেশি এসেছে মহিলা কামরা থেকে। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত লোকাল ট্রেন চালিয়ে যেখানে কৃতিত্বের দাবি করা হচ্ছে, সেখানে মহিলা কামরা কি আদৌ সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে?

সুরক্ষার এমনই ফাঁক থেকে যাওয়ার অভিযোগ সম্প্রতি করেছেন সরকারি হাসপাতালের এক নার্স। স্বর্ণালী নস্কর নামে ওই নার্সের দাবি, ৩ নভেম্বর তিনি শ্যামনগর থেকে দমদম স্টেশনে পৌঁছতে কাটোয়া লোকালের সামনের দিকের মহিলা কামরায় ওঠেন। তাঁর কথায়, ‘‘কামরা প্রায় ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে হাতে গোনা পাঁচ-ছ’জন। হঠাৎ সেখানে কয়েক জন হিজড়ে আসেন। আমি ১০ টাকার কয়েন তাঁদের এক জনের হাতে দিই। কিন্তু আরও টাকা দাবি করা হয়। অসম্মতি জানালে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার কাছে আরও কয়েক জন হিজড়ে চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে এক জন আমার গলা টিপে ধরেন। এক জন হাতে থাকা টাকার ব্যাগটা ছিনিয়ে, চেন খুলে টাকা বার করেন। চিৎকার করতে গেলে আমার মুখও চেপে ধরা হয়। এর পরে মুহূর্তের মধ্যেই প্রায় চলন্ত ট্রেন থেকে ওই হিজড়ের দল লাফিয়ে নেমে যায়।’’ মহিলার আরও দাবি, ‘‘ব্যাগ খুলে দেখি, ৬৩০ টাকা মতো নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ট্রেন তখন ব্যারাকপুর স্টেশনে দাঁড়িয়েছে। বুঝলাম, স্টেশন বুঝেই ওঁরা লাফ দিয়েছেন। আমার উল্টো দিকেই বসা দু’জন মেয়েও ভয়ে নেমে যায়। খুব অসুস্থ বোধ করছিলাম। দমদমে পৌঁছে ওই অবস্থায় এক টিকিট পরীক্ষককে খুঁজে ব্যাপারটা জানাই। তিনি অভিযোগ জানাতে বলেন। কিন্তু এর বেশি কোনও সাহায্য মেলেনি।’’

একই রকম অভিযোগ বিরাটির বাসিন্দা, বছর আটত্রিশের এক মহিলারও। তিনি বিধাননগর স্টেশন থেকে বিকেল সাড়ে ৪টের বনগাঁ লোকালে উঠেছিলেন। ভিড়ে ঠাসা কামরায় কোনও মতে দাঁড়ানোর জায়গা পান। পরে এক হিজড়ে ওই কামরায় উঠেই চেঁচামেচি শুরু করেন বলে অভিযোগ। কোনও মতে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মহিলাকে সরে দাঁড়াতে বলেন হিজড়ে। অভিযোগ, মহিলা না সরায় তাঁকে চড় মারা হয়। মহিলার ব্যাগটি টেনে ট্রেন থেকে ফেলেও দেন ওই হিজড়ে। কিন্তু বিরাটি স্টেশনে জিআরপি ও স্টেশন মাস্টারের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকে বারাসতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে মহিলা বারাসতে গিয়েই অভিযোগ দায়ের করেন।

কিন্তু এমন একাধিক অভিযোগ সামনে এলেও অভিযোগকারিণীকে ঘোরানোর কারণ কী? কেন এ বিষয়ে আরও কড়া হয় না রেল পুলিশ? শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার বাদানা বরুণ চন্দ্রশেখর বললেন, ‘‘প্রতিদিন যে সংখ্যক ট্রেন চলে, তাতে প্রতিটি কামরায় নজরদারি করা সম্ভব নয়। তবে অভিযোগ এলেই নির্দিষ্ট জ়োন ধরে নজরদারি চালানো হয়। এই নির্দিষ্ট বিষয়টি নিয়েও দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে এই জুলুমবাজি আটকাতে রেল পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়ে আরটিআই করা হয়। তাতেই রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৫-২০১৮ সালের মধ্যে যাত্রীদের থেকে জোর করে টাকা তোলার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৩ হাজার হিজড়েকে। তদন্তকারীদের ধারণা, অতিমারিতে লকডাউনের জন্য গ্রেফতারির সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও তার পরে এই কারণে গ্রেফতারির হার পুরনো সব হিসাবকে ছাপিয়ে গিয়েছে। শহরের বৃহন্নলা সংগঠনের তরফে রুমির বক্তব্য, ‘‘কারা এই কাজ করছেন, সেটাও দেখা দরকার। অনেকেই সেজে বেরোচ্ছেন, অথচ তাঁরা পুরুষ। সংসার রয়েছে। মহিলা কামরায় উঠে ওঁদের এই সব কাজ আটকাতে আমরা খুব দ্রুত আলোচনাসভার পরিকল্পনা করেছি। আশা করি, দ্রুত এ সব বন্ধ হবে।’’

train harassment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy