E-Paper

নিশুর বান্ধবীর সূত্রেই ওত পাতে লালবাজার

তৌসিফদের গাড়িটা যে এ রাজ‍্যে ঢুকেছে তা শুক্রবার বিহার পুলিশ জানায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-কে। বিভিন্ন সিসি ক‍্যামেরায় নজরদারি চালিয়ে ধরা পড়ে গাড়ি কলকাতায় ঢুকে পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৭:২৩
পটনায় হাসপাতালে ঢুকে গুলি চালানোর ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্তরা।

পটনায় হাসপাতালে ঢুকে গুলি চালানোর ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্তরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এপ্রিল মাসেও তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা অন্তত দু’বার কলকাতায় এসেছিল বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ওই সময়ে নিউ টাউনে তার গাড়ির নম্বরে ট্রাফিক আইন অমান্য করার অভিযোগে দু’টি মামলাও হয়েছে। পুলিশের দাবি, কলকাতা বা নিউ টাউনে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এই শহরের ঘাঁতঘোঁত জানার সুবাদেই পটনার বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউয়ে ঢুকে বেপরোয়া খুনের পরে কলকাতাকে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে বেছে নেয় ওই অভিযুক্ত। কিন্তু এই যাত্রায় লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের বুদ্ধিতে তাকে ঠকে যেতে হল। ধরা পড়ল আর একদুষ্কৃতী চন্দন মিশ্রকে গুলি করে খুনের প্রধান অভিযুক্ত।

তৌসিফদের গাড়িটা যে এ রাজ‍্যে ঢুকেছে তা শুক্রবার বিহার পুলিশ জানায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-কে। বিভিন্ন সিসি ক‍্যামেরায় নজরদারি চালিয়ে ধরা পড়ে গাড়ি কলকাতায় ঢুকে পড়েছে। প্রাথমিক ভাবে খবর এসেছিল, বাদশা ওরফে তৌসিফ নিজে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়িতে রয়েছে তার দাদা নিশু খান, যে নিজেও দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধেও বিহারে মামলা রয়েছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীরা কোনও মোবাইল ফোন ব‍্যবহার করছে না দেখে তাদের সমাজমাধ্যমের প্রোফাইলে আড়ি পাতেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, নজরে আসে নিশু খান অনলাইন রয়েছে। এ রাজ‍্যের বাসিন্দা নিশুর এক বান্ধবীর সঙ্গে তার বার্তা বিনিময় হচ্ছে বলেই আঁচ করে এসটিএফ। ওই মহিলার সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই এর পরে তাদের গতিবিধি জরিপ করা শুরু করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত এসটিএফের কর্তারা নিশ্চিত হন, আনন্দপুর এলাকায় রয়েছে নিশু, বাদশারা। আগেই সিসি ক‍্যামেরার ছবিতে তৌসিফদের সাদা গাড়িটি চিহ্নিত করা গিয়েছিল। আনন্দপুরে গাড়িটি খুঁজে পেতে দুষ্কৃতীদের নাগাল মেলা সহজ হয়ে যায়। শনিবার রাতে আনন্দপুরের অতিথি নিবাসে হানা দিয়ে ঘিরে ফেলে বিশাল কমান্ডো বাহিনী। বাদশা-সহ পাঁচ জনকে ধরে এসটিএফ।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিশুর ওই বান্ধবী এলাকার এক পরিচিতের মাধ্যমে নিজের নামেই আনন্দপুরের অতিথি নিবাসের তেতলায় ঘর বুকিং করেছিল। সেখানেই কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা তৌসিফ, নিশু, হর্ষ কুমার, ভীম কুমার এবং ওই তরুণীকে পাকড়াও করে। উদ্ধার করা হয় গাড়িটিকে। অসুস্থ থাকায় নিশুকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। মেয়েটি অবশ‍্য কোনও অপরাধে জড়িত না থাকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। রবিবার চার অভিযুক্তকে আলিপুর কোর্টে তোলে বিহার পুলিশ। পটনা আদালতে তাদের দু’দিনের মধ‍্যে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম‍্যাজিস্ট্রেট। তবে ধৃতেরা ছাড়া আরও বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বিহার পুলিশের দল। উল্লেখ্য, শনিবার নিউ টাউনের সুখবৃষ্টি আবাসন থেকে পাঁচ জনকে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের সাহায্য নিয়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বিহার পুলিশ।

অসুস্থ নিশুকে এ দিন অ‍্যাম্বুল‍্যান্সে করে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। কোর্ট চত্বরে অ‍্যাম্বুল‍্যান্সে শুয়েই সে জানায়, হাসপাতালে চন্দন মিশ্রকে খুনের বিষয়টি বাদশা তাকে পরে জানায়। নিশুর বক্তব‍্য, তৌসিফের সঙ্গে শেরু খানের জেলে আলাপ হয়েছিল। চন্দন মিশ্রের সঙ্গে শেরুরই শত্রুতা ছিল। বাদশা কেন ওই ঘটনায় জড়াল তার জানা নেই বলেই নিশু দাবি করেছে। হাজিপুরের এক জনের গাড়ি নিয়ে তারা কলকাতায় ঢোকে বলেও নিশু জানায়।

তবে বিহার পুলিশ জানিয়েছে, নিশুর বাড়িতে বসেই চন্দন মিশ্রকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল তৌসিফ। পুরুলিয়ার জেলে বন্দি বিহারের দুষ্কৃতী ওঙ্কার সিংহ ওরফে শেরুর নির্দেশেই বাদশা চন্দনকে খুন করেছে। তৌসিফ এর আগে বিহারে পুলিশের হাতে দু’বার গ্রেফতার হয়। তার মধ্যে একটি অস্ত্র আইনের মামলা, অন্যটি খুনের চেষ্টার মামলা। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দুটো মামলাতেই তাকে জামিন পেতে সাহায্য করেছিল শেরু। এই বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবেই বাদশা চন্দন খুনে মাঠে নামে। কলকাতায় ধৃত হর্ষ ঘটনার আগে হাসপাতালে ঢুকে সব কিছু জরিপ করেছিল বলে বিহার পুলিশের দাবি। তবে ওই ঘটনায় সিসি ক‍্যামেরায় যে বন্দুকবাজদের দেখা গিয়েছে তার মধ্যে একমাত্র বাদশাই গ্রেফতার। বাকিরা পলাতক।

পুলিশ জানতে পেরেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বাদশারা গাড়ি নিয়ে হাজির হয় নিউ টাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনে। সেখানে থাকে বাদশার পরিচিত এক যুবক। বাদশা তাদের কাছে আশ্রয় চাইলেও তারা অবশ‍্য তাতে রাজি হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে বাদশা, নিশুরা পার্ক স্ট্রিটে গিয়েছিল। সেখানেও তারা ঘর পায়নি। এর পরেই নিশুর বান্ধবীর সুবাদে ঘর মেলে আনন্দপুরের অতিথি নিবাসে।

পুলিশের ধারণা, নিশু কিছুটা অসুস্থ বলেই সবার চোখে ধুলো দিতে তাকে গাড়িতে নেয় বাদশারা। বছর খানেক আগে নিশুর পিঠে গুলি লেগেছিল। তার পর থেকে সে পুরোপুরি স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না। অসুস্থ নিশু ওই খুনের সঙ্গে জড়িত না হলেও পথে যাতে কেউ সন্দেহ না করে তাই অসুস্থ নিশুকে আনা হয়েছিল। নিশু অবশ‍্য সংবাদমাধ‍্যমকে জানিয়েছে, কলকাতা থেকে চিকিৎসার জন‍্য দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল তার। বাদশাও সোমবার আত্মসমর্পণ করত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তার কলকাতায় আসার কারণ স্পষ্ট হচ্ছে না। নিশুর মাধ্যমেই কলকাতায় ঘর পেতে তার বান্ধবীকে কাজে লাগায় বাদশা। তবে শেষরক্ষা হয়নি।

বাদশার গতিবিধি

(বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে)

সুখবৃষ্টি আবাসন, নিউ টাউন

পার্ক স্ট্রিট

আনন্দপুর

শনিবার রাতে

আনন্দপুরে ধৃত বাদশা, নিশু, ভীম কুমার, হরিশ কুমার

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

patna Lalbazar police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy