জীবনের প্রথম চাকরিতে ঢোকার পরে সবে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ হতে শুরু করেছে এক তরুণীর। কিছু দিন যাওয়ার পরেই বয়োজ্যেষ্ঠ এক পুরুষ সহকর্মী তরুণীর পরিবার নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। প্রথমে কৌতূহলবশত তিনি প্রশ্ন করছেন ভাবলেও তরুণীর বিবাহিত জীবন নিয়ে ধেয়ে আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। সহকর্মীর প্রশ্ন যে এ ভাবে অস্বস্তির কারণ হবে, তা নিয়ে ধারণাই ছিল না তরুণীর। এমন হলে কী করা উচিত, তা-ও বুঝে উঠতে পারেননি ওই তরুণী। বিষয়টি ক্রমশ শালীনতার মাত্রা ছাড়াতে থাকায় ওই সহকর্মীকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন তিনি।
এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হননি, কর্মরতাদের মধ্যে তেমন কাউকে পাওয়া কার্যত কঠিন। তবে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার মুখোমুখি হয়েও বেশির ভাগই চুপ করে থাকেন নানা কারণে। ইন্ডিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলাই অভিযোগ জানাতে চান না। ২০১২-য় দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে নারী অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ২০১৩-য় ‘দ্য সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অব উইমেন অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস’-এর মতো আইন প্রণয়নের পরেও ছবিটা বদলায়নি। বণিকসভা ফিকি-র একটি সমীক্ষা বলছে, ভারতে অফিস রয়েছে এমন দেশীয় সংস্থার ৩৬ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ বহুজাতিক সংস্থায় নেই ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি)। ওই সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বা আইনি ধারণা নেই।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার মধ্যে কী কী পড়ে? রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ধর্ষণ, গায়ে হাত দেওয়া স্বাভাবিক ভাবেই যৌন হেনস্থার মধ্যে পড়ে। এর বাইরেও ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, যৌনগন্ধী ভিডিয়ো দেখানো বা আলোচনা, লিঙ্গের ভিত্তিতে কটূক্তি— হেনস্থার মধ্যে পড়ে সবই। আর অফিসের কাজে কোথাও গেলে বা অফিসের দেওয়া পরিবহণে হেনস্থার শিকার হলেও তা কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার আওতায় পড়বে। সুনন্দা জানাচ্ছেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলা কর্মীরা অনেক বেশি সংখ্যায় নিয়মিত হেনস্থার শিকার হন।
কেন অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আসেন মেয়েরা?