Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

ব র্ষণ শীল। হাবড়ার বালক। ঢলঢলে লাবণ্যময় মুখটি দেখলে মনে হয় যেন সত্যজিতের অপু। থামের পাশে যে-ভাবে দাঁড়িয়ে, (বাঁ দিকের ছবি) ‘অপরাজিত’য় বেনারসে কিশোর অপুকে মনে পড়ায়। বর্ষণকে যিনি ছবিতে এনেছেন, সেই বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় আদ্যোপান্ত সত্যজিৎ-ভক্ত।

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৬
Share: Save:

মনে হয় যেন সত্যজিতের অপু

ব র্ষণ শীল। হাবড়ার বালক। ঢলঢলে লাবণ্যময় মুখটি দেখলে মনে হয় যেন সত্যজিতের অপু। থামের পাশে যে-ভাবে দাঁড়িয়ে, (বাঁ দিকের ছবি) ‘অপরাজিত’য় বেনারসে কিশোর অপুকে মনে পড়ায়। বর্ষণকে যিনি ছবিতে এনেছেন, সেই বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় আদ্যোপান্ত সত্যজিৎ-ভক্ত। তাঁর ‘তিন কাহন’, সত্যজিতের ‘তিন কন্যা’র মতো তিনটি ছবিতে গাঁথা। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ‘বর্ষায়’ গল্প থেকে প্রথম ছবি ‘নাবালক’, কাল ১৯১৮-’৫৪। ‘সেখানেই একটি বালককে খুঁজছি, স্ক্রিন টেস্টে কাউকে পছন্দ হচ্ছে না। বর্ষণ তার মায়ের সঙ্গে এসেছিল বন্ধুর স্ক্রিন টেস্ট দেখতে, দেখামাত্রই পাকড়াও করে নিয়ে গেল আমার সহকারী স্ক্রিন টেস্ট দেওয়াতে। সংলাপ বলাতে গিয়ে দেখি বাঙাল ভাষা ছাড়া কিছু জানে না, সদ্য বাংলাদেশ থেকে এসেছে। সমস্ত সংলাপ ফেলে দিলাম। পুরো অভিনয়টাই দাঁড় করালাম ওর মুখের অভিব্যক্তির ওপর। ওকে গল্পটা বলিনি, এখনও ও জানে না।’ বর্ষণের কথা বলতে-বলতে বৌদ্ধায়নের চোখে-মুখে মুগ্ধতা। বর্ষণ এ ছবির শৈলেন চরিত্রটির জন্যে নর্থ ক্যারোলিনা গ্লোবাল ফিল্ম ফেস্ট-এ তাবড় অভিনেতাদের হারিয়ে সেরা অভিনেতার শিরোপা পেয়েছে। ‘আমি তো ভাবছি সেরা শিশু-অভিনেতার সম্মান পাচ্ছে, কিন্তু উৎসব কর্তৃপক্ষ জানালেন, না, তেমন কোনও পুরস্কারই তাঁদের নেই।’ বিস্মিত মন্তব্য বৌদ্ধায়নের। এ ছবিটিতেই আর একটি নবীন মুখ অনন্যা সেন (মাঝের ছবি), নয়নতারা-র চরিত্রে। দ্বিতীয় ছবিটি ‘পোস্টমর্টেম’, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘স্বামী ও প্রেমিক’ গল্প অবলম্বনে, সময়কাল ১৯৭৮, বানভাসি কলকাতা। শেষটি সাম্প্রতিক, কাহিনি পরিচালকেরই। গোটা ছবিটাই ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি, প্রথমটি সাদাকালো, কারণ বৌদ্ধায়নের স্মৃতিতে প্রখর ‘পথের পাঁচালী’। ‘ফিল্মের ফর্ম যে ভাবে বদলেছে, সে ভাবেই বুনেছি তিনটে ছবিকে। প্রথমটায় ভিস্যুয়াল ডিজাইনে জোর, দ্বিতীয়টায় সাউন্ড ডিজাইন করেছি জলের শব্দ দিয়ে, মিউজিক নেই, কারণ নিউওয়েভ সিনেমা ততদিনে এসে গেছে। শেষটা ডিজিটাল।’ এরই সঙ্গে ‘গত একশো বছরের বাংলা ভাষার বিবর্তনও ধরার চেষ্টা করেছি ছবি তিনটিতে।’ ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে ‘তিন কাহন’।

শুধু সুনীলের জন্য

বেঁচে থাকলে তিনি আজ বিরাশিতে পা দিতেন। অভিধানের ভাষায় অশীতিপর। কিন্তু এ কথা কে না জানে, বরাবরই তিনি সাতাশ-আঠাশ বছরেরই ছিলেন। হাফ হাতা শার্টের প্রথম বোতামটা খোলা। সাদা জুলপি। তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলা ভাষায় তিনি যত পাতা লিখেছেন, তাঁর সম্পর্কেও ততটাই লেখা হয়েছে। তাঁর জন্মদিনে আজ সন্ধে ছ’টায় ‘কৃত্তিবাস’ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রোটারি সদনে। প্রথম ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’য় স্বপন চক্রবর্তী। থাকবে গান আবৃত্তি, তরুণদের কবিতা পাঠ। সভাপতি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। গত কাল এখানেই ‘বুধসন্ধ্যা’র পক্ষ থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি বৃত্তির অর্থ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেওয়া হল।

জনসংস্কৃতি

ভাইয়ো আউর বহেনো। আমিন সায়ানির কণ্ঠস্বর, রেডিও সিলোন, কিশোরকুমার-আশা ভোঁসলের নতুন গানের জন্য ঝুমরি তিলাইয়া থেকে শ্রোতার অনুরোধ। ষাটের দশক থেকে ‘বিবিধ ভারতী’ কি এ ভাবেই সারা ভারতকে এক সুতোয় গেঁথে দিচ্ছিল? ৮ সেপ্টেম্বর ১০ লেক টেরেসে, ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের বাড়িতে বিকেল ৫টায় এ নিয়েই বলতে চলেছেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। যদুনাথ ভবন মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার বক্তৃতামালার প্রথম বক্তৃতা। যদুনাথের স্ত্রী লেডি কাদম্বিনী সরকারের দিয়ে যাওয়া এই বাড়িতেই সত্তর দশকে শুরু হয়েছিল সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস। এ বার পাটুলির পাশাপাশি লেক টেরেসেও বক্তৃতা, আলোচনার বহুবিধ আয়োজন। ৯ সেপ্টেম্বর সাড়ে তিনটেয় বাংলা আকাদেমিতে সোসাইটি ফর প্রিজার্ভেশনের উদ্যোগে নিশীথরঞ্জন রায় স্মারক বক্তৃতায় জহরবাবু বলবেন উনিশ ও বিশ শতকের কলকাতায় জনসংস্কৃতি নিয়ে। প্রথম শতকটিতে বিবিধ ভারতী ছিল না, বিশ শতকে মহানগরের ঘরবাড়ি থেকে ক্লাব, পানের দোকান সর্বত্র আছড়ে পড়ত তার সঙ্গীত-মূর্চ্ছনা।

ভিয়েতনাম ৭০

এ বছরই ভিয়েতনামের স্বাধীনতার সত্তর পূর্তি, প্রবাদপ্রতিম জননেতা হো চি মিন-এর জন্মের ১২৫ বছরও। দুই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে কলকাতার গোর্কি সদনে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান, ১০-১৫ সেপ্টেম্বর। আয়োজনে কলকাতার রুশ সংস্কৃতি কেন্দ্র, ভিয়েতনাম দূতাবাস ও আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব। ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুষ্প্রাপ্য ছবি, বই, স্ট্যাম্প, স্মারক নিয়ে প্রদর্শনী, থাকছে একগুচ্ছ ভিয়েতনামি চলচ্চিত্রও।

জন্মদিনে

বিগত কয়েক বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি উদ্‌যাপন করছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। এই বছর আসছেন অমিত চৌধুরী। ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় তাঁর খ্যাতি ভুবনপ্রসারী, বাংলা সাহিত্যেরও তিনি নিবিষ্ট পাঠক। ইতিমধ্যেই পথের পাঁচালি থেকে অনুবাদ করে ফেলেছেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা তাঁর ইংরেজি সন্দর্ভ সংকলন রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। আফটারনুন রাগা-র কথাকার কথা বলবেন অথচ মার্গসংগীত থাকবে না, তা হয় না। সুতরাং, গল্পে ও গানে পূর্ণাঙ্গ অমিত চৌধুরীকেই খুঁজে পাওয়া যাবে ১২ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় আকাদেমি সভাঘরে। কথালাপে জয় গোস্বামী ও অভীক মজুমদার। সভাপতি শাঁওলী মিত্র।

বাংলাদেশ বইমেলা

ভরা ভাদ্রেই খোলা প্রাঙ্গণে বইমেলা। বাংলাদেশ থেকে বইয়ের পসরা নিয়ে হাজির সেখানকার প্রকাশকরা। প্রায় ৫০টি স্টল। শনিবার রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বইমেলা-র উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। বই বিকিকিনির পাশাপাশি বিবিধ আলোচনা, ফি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও থাকছে এক মঞ্চে দুই বাংলার কবিদের কবিতা পাঠের আসর। সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকাশক ও লেখকদের সঙ্গে এখানকার পাঠকদের সরাসরি মত বিনিময়ের ব্যবস্থাও থাকছে। মেলা চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (দুপুর ২-৮টা)।

সবার কাছে

আকাশবাণী আর কলকাতা ‘ক’ বাঙালির ধ্রুপদী মননে প্রায় সমার্থক। ‘স্থানীয় সংবাদ’ থেকে ‘সমীক্ষা’, ‘শিশু মহল’ থেকে ‘কৃষিকথা’, রবীন্দ্রসংগীত থেকে খেলার ধারাবিবরণী— কলকাতা ‘ক’ এক বহতা ইতিহাসও। তবু, প্রযুক্তিগত কারণেই শহর থেকে দূরের মানুষরা শুনতে পেতেন না এই অনুষ্ঠান, সমস্যা ছিল কাছেও। এ বার আকাশবাণী চালু করছে উন্নত সম্প্রচার ব্যবস্থা ‘ডিজিটাল রেডিয়ো মনডিয়েল’ (ডিআরএম)। এতে কলকাতা ‘ক’-এ অনুষ্ঠান শোনা যাবে স্পষ্ট, রাজ্যের দূরদূরান্তে। শোনা যাবে অ্যানালগ ব্যবস্থাতেও, চিরচেনা ৬৫৭ কিলোহার্ৎজেই। ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর দুটোয় আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে এই প্রযুক্তির শুভ সূচনা করবেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার।

ফিরে দেখা

দিল্লিতে ফিরে দেখা! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের একটি ফ্যান ক্লাব আছে রাজধানীতে। ইন্ডিয়া হ্যাবিট্যাট সেন্টার ফর ফিল্ম নামের এই ক্লাবে দিন দিন বাড়ছে প্রসেনজিৎ-অনুরাগীর সংখ্যা। অভিনেতাকে সম্মান জানাতে এ বার সেখানে তাঁর ছবির রেট্রোস্পেকটিভ। আজ শুরু হচ্ছে, চলবে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিন দেখানো হবে ‘দোসর’। আছে ‘মনের মানুষ’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘জাতিস্মর’ এবং ‘সাংহাই’ এর পাশাপাশি প্রসেনজিৎ পরিচালিত ‘পুরুষোত্তম’। আয়োজনে সিআইআই।

স্কুল থেকে মঞ্চে

নিজেদের উদ্যোগেই নাট্যোৎসব। স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি ওরা। সব মিলিয়ে তেরোটি স্কুল। ফি রবিবার নাটকের কর্মশালা করেছে। সেই কর্মশালা থেকে তৈরি হয়েছে দুটো ছোট নাটক ‘ইচ্ছেপূরণের রাত’ ও ‘দেবী’। নাটকের গল্প বানিয়েছে ছাত্ররা সকলে মিলে। নাট্যরূপ দিয়েছেন সৌমিত্র বসু। নির্দেশনায় গৌতম মুখোপাধ্যায় ও শুভেন্দু ঘোষ। হাওড়া বঙ্কিম সেতুর ঠিক নীচে রামগোপাল মঞ্চে এই নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে আজ। চলবে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের শেষ দিন ওই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে একটি আলোচনা সভা, বিষয় থিয়েটারের স্কুল। অন্য দিকে সম্প্রতি নন্দনে দেখানো হল তথ্যচিত্র ‘প্রাণের প্রহরী’। গাছের উপযোগিতা নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন গোপাল বসু। পেশাগত ভাবে মার্কেটিং-এর সঙ্গে যুক্ত তিনি। পেশার সূত্রে তাঁকে দেশের নানা প্রান্তে যেতে হত। তাতেই সমাজ-সংস্কৃতির বিভিন্ন সমস্যা সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন। আর তাতে মাধ্যম ছিল ছবি তৈরি। তথ্যচিত্রটির মূল চরিত্রে দুই জন কিশোর।

শ্রমিকের আইনজীবী

শ্রমিকের পক্ষে ছাড়া কখনও আদালতে দাঁড়াননি। বিপ্লবী সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেরণায় লেবার ট্রাইব্যুনালে শ্রমিকদের পক্ষে সওয়াল শুরু। শেষ দিন পর্যন্ত এই কাজ করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত। জন্ম ১৯১৬-য়, ফরিদপুরে। ছাত্রজীবনেই স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। নির্দল সদস্য হিসেবে বিধান পরিষদ ও দুই বার রাজ্যসভার সদস্য হন। ১৯৯৩-এ তাঁর জীবনাবসান হয়। ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর শততম জন্মদিন উপলক্ষে আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে স্মারক বক্তৃতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলবেন ‘বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী জাতীয়তাবাদ’ প্রসঙ্গে।

মাতৃরূপেণ

কুমোরটুলির ভীমচন্দ্র দাশ বলতে লাগলেন, ‘আড়াইশো বছর আগে এই দোকানেই মাটির তৈজসপত্র তৈরি হত। তার পর আমার পূর্বপুরুষ মায়ের সাজসজ্জার দিকে ঢলে যায়। সেই থেকে এই ব্যবসা।’ উল্টো দিকে বসে রঞ্জিত দাশ। তাঁরই পুত্র। ‘কোন কোন বড় পুজোয় মায়ের সাজ পাঠান?’ ‘অত সব আমরা খেয়াল রাখি না। যার যখন যা দরকার এসে নিয়ে যায়। আর তা ছাড়া বৈশাখ মাস থেকেই তো বিদেশে ঠাকুর যাওয়ার কাজ চলছে।’ এ বার সেপ্টেম্বরের সতেরো আঠারো গণেশ ও বিশ্বকর্মা পুজো। তার পরে মায়ের রঙের কাজ শুরু হবে।

একই কথা বললেন কে সি পাল সংস্থার কর্ণধার কালীচরণ পাল। দেখে বোঝার উপায় নেই সত্তর বছর বয়স। অন্যান্য বছর তিরিশটারও বেশি মূর্তি গড়েন, এ বছর ছাব্বিশটার মতো হবে। জানালেন, ‘কুমোরটুলি খুব উঁচু জায়গা। যত বৃষ্টিই হোক, এখানে জল দাঁড়ায় না। তবে কী, এ বছর এত বৃষ্টির জন্য বাতাস সব সময় ভেজা ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে। ব্লোল্যাম্প জ্বালিয়ে কাজ হচ্ছে। পুরোদমে কাজ শুরু করব বিশ্বকর্মা পুজোর পর। আর বৃষ্টিতে গঙ্গা রয়েছে ভরে। ফলে উপযুক্ত মাটিও পেতে দেরি হয়েছে। অন্যান্য বার উলুবেড়িয়া বা ফুলেশ্বর মানে যেখানকার মাটি সবচেয়ে ভাল, সেগুলো টন নিত বাইশশো কি আড়াই হাজার টাকা। এ বার নিচ্ছে তিন হাজার টাকা। ফলে খরচ কিছুটা বেড়েছে।’

অভিভাবক

আক্ষরিক অর্থেই তিনি যেন ছিলেন হাজার চুরাশির মা! নইলে তাঁর স্মরণসভায় সকলেই কেন চোখের জলে ভাসবেন! সমাজসেবী ইন্দ্রাণী সিংহের জন্ম ১৯৫০-এর ১৫ মার্চ কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে শিক্ষালাভ। একাধারে তিনি ছিলেন খেলাধুলা, নাচ এবং অভিনয়ে পারদর্শী। ১৯৭২-এ তাঁতিয়া হাইস্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৭৭ থেকে যুক্ত হন সেবার কাজে, বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। ১৯৮৭-র ৩০ জুন নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সংলাপ’, বসন্ত রায় রোডের একটি গ্যারেজে। ছোট মেয়েদের ওপর নির্যাতন, নারীপাচার ইত্যাদি বন্ধের জন্য অক্লান্ত কাজ করেছেন। আজ এই সংস্থা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রসারিত। সমস্ত পৃথিবী জুড়েই তাঁর কাজকে পথিকৃতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯৭-এ ভারত সরকার ওঁকে ‘বাল কল্যাণ পুরস্কার’-এ সম্মানিত করে। সমাজে মেয়েদের সুরক্ষিত রাখার বার্তা নিয়ে তিনি ঘুরেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। ওঁরই উদ্যোগে কয়েক হাজার মেয়ে পাচার হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে সংলাপ-এর আশ্রয়ে কাজ শিখে ফিরে এসেছেন মূল স্রোতে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চলে গেলেন ইন্দ্রাণী। ৩১ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল একটি স্মরণ অনুষ্ঠান, আয়োজনে ছিল সংলাপ। ওঁর মেয়ে এবং পুত্রবধূ যৌথ ভাবে শোনালেন ইন্দ্রাণীর প্রিয় গান, ‘মেরা কুছ সামান, তুমহারে পাস পড়া হ্যায়.....’

তিন পেনি অপেরা

সারা পৃথিবীতেই ক্ষমতা আর অপরাধ জগৎ হাত ধরাধরি করে চলে। তাই এত ভায়োলেন্স, করাপশন... সেই কবে লিখেছিলেন ব্রেশট, এখনও সমকালীন।’ ব্রেশটের ‘থ্রি পেনি অপেরা’ সম্পর্কে বলছিলেন ছন্দা দত্ত। মূল থেকে বঙ্গানুবাদে (রূপান্তর নয়) নিজের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করছেন ছন্দা, নাম দিয়েছেন ‘তিন পেনি অপেরা’ (অঞ্জন দত্ত প্রোডাকসন্স)। অভিনয়ে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, সুদীপা বসু, দেবদূত ঘোষ, অঞ্জন দত্ত প্রমুখ। অঞ্জনের সঙ্গে ১৯৭৯-তে ‘ওপেন থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা ছন্দার, ১৯৭৫-এ অভিনয়জীবন শুরু। সার্ত্র থেকে ব্রেশট— ইউরোপের দিকপালদের লেখা নাটক থেকে এখানে মঞ্চস্থ একের পর এক থিয়েটারে অভিনয় করে গিয়েছেন। অঞ্জনের নির্দেশনায় ইবসেনের ‘ডলস হাউস’-এ নোরা-র চরিত্র গুণিজনদের সমাদর এনে দিয়েছিল তাঁকে। ফ্রান্জ জেভার ক্রোয়েৎজ কলকাতায় এসে মঞ্চস্থ করেছিলেন ‘আকাঙ্ক্ষা’, তাতে বেপ্পি-র চরিত্রে অভিনয় করে নজরে পড়েন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের, তিনি তাঁর ‘ফেরা’ ছবিতে অভিনয় করান ছন্দাকে। ছন্দার প্রথম নির্দেশনা ইবসেনের ‘গোস্ট’, সুমিতা সান্যাল আর অঞ্জন ছিলেন মূল চরিত্রে। স্কুলে পড়ানো এবং চিলড্রেনস থিয়েটার-এ যুক্ত থাকার সুবাদে অঞ্জনের ‘বো ব্যারাকস ফরএভার’-এর প্রধান অভিনেতাও খুঁজে এনে দেন ছন্দা, কারণ শুধু তো নাট্যসঙ্গী নন, জীবনসঙ্গীও তিনি অঞ্জনের। ‘ওঁর নির্দেশনার ধরনটাই একেবারে আলাদা। আমার সঙ্গে কোনও মিল নেই।’ জানালেন অঞ্জন। ‘তিন পেনি অপেরা’-র অভিনয় জ্ঞানমঞ্চে ১০-১৩ সেপ্টেম্বর, রোজ সন্ধে সাড়ে ৬টায়। ওখানেই প্রবেশপত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE