Advertisement
E-Paper

ঈর্ষা! কলকাতায় আট বছরের দেওরকে জলে ডুবিয়ে খুন করল বৌদি

বাড়ির সবাই ভেবেছিলেন, খেলতে খেলতে ড্রামে নেমে বিপত্তি। প্রায় চার ফুট উঁচু জলের ড্রামে নেমে আর উঠতে পারেনি ছোট্ট রিজু। কিন্তু রিজুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই সুব্রতর কাছে প্রিয়াঙ্কা স্বীকার করেন রিজুকে খুন করেছে সে।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ১৫:৫৯
খুন হওয়া রিজু। —নিজস্ব চিত্র

খুন হওয়া রিজু। —নিজস্ব চিত্র

স্বামী নিজের আট বছরের ভাইকে সন্তানের মতো ভালবাসে। শ্বশুরও ছোট ছেলেকে নাকি বেশি ভালবাসেন। আর সেই ঈর্ষা থেকেই নিজের খুদে দেওরকে জলে ডুবিয়ে খুন করলেন মায়ের বয়সী বৌদি!

শুক্রবার বিকেলে মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকার পাহাড়পুর রোডের বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আট বছরের রিজু দাসকে বাড়ির বাথরুমে জলের ড্রামের মধ্যে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রিজুর বাবা দুখুরাম, মা ডলি প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন দুর্ঘটনা। কারণ রিজুর অভ্যেস ছিল জলের ড্রামে নেমে স্নান করা।

বাড়ির সবাই ভেবেছিলেন, খেলতে খেলতে ড্রামে নেমে বিপত্তি। প্রায় চার ফুট উঁচু জলের ড্রামে নেমে আর উঠতে পারেনি ছোট্ট রিজু। শুক্রবার বিকেলে রিজুর মা ডলি প্রথম ছেলেকে দেখতে পান জলের ড্রামে। শুক্রবার ডলি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সারা দুপুর ছেলেটা ছাদে খেলছিল। ছাদে বল খেলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। কখন সকলের অলক্ষে যে রিজু বাথরুমে ড্রামের মধ্যে নেমে পড়েছিল আমরা টের পাইনি।” সে দিন বিকেলে ডলি আর তাঁর বড় ছেলে সুব্রতর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বাড়িতে ছিলেন। ডলি বলেন, “ছেলেটা যাতে বাইরে কোথাও না যায়, সেই জন্য বাইরের দরজায় তালা লাগানো ছিল।”

স্বামীর সঙ্গে অভিযুক্ত বৌদি প্রিয়াঙ্কা দাস।

আরও পড়ুন: সম্পর্কের জের? কোদাল দিয়ে খুন রানাঘাটের তরুণীকে

আর তাই পরিবারের কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি রিজুকে কেউ খুন করেছে। কারণ দরজায় তালা থাকায় বাইরে থেকে কারুর ভেতরে ঢোকা সম্ভব নয়। তাই ডলি বা পরিবারের কেউ কোনও অভিযোগও দায়ের করেননি থানাতে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু করে দেহ নিয়ম মাফিক ময়নাতদন্তে পাঠায়। সেখানেও কিছু অস্বাভাবিক পাওয়া যায়নি। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, “ময়নাতদন্তের প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায় জলে ডুবেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ রকম ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক।” তাই পুলিশেরও সন্দেহ করার কোনও কারণ ছিল না।

কিন্তু কোথাও একটা সন্দেহ ছিল রিজুর দাদা সুব্রতর। ছোট্ট ভাইয়ের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনও ভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। সে দিন যে হেতু তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বাড়িতে ছিলেন, সেই কারণে স্ত্রীকে বার বার বিভিন্ন ভাবে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন তিনি। আর সেই কথোপকথনের মাঝেই প্রিয়াঙ্কার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান সুব্রত। তার পরেই চেপে ধরেন স্ত্রীকে। রিজুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই সুব্রতর কাছে প্রিয়াঙ্কা স্বীকার করেন রিজুকে খুন করেছে সে।

আরও পড়ুন: ‘টাকা না দেওয়ায়’ আটকে গেল ভর্তি

কী ভাবে খুন রিজুকে খুন করল প্রিয়াঙ্কা?

জেরায় প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছে, সে দিন বিকেলে বাথরুমে গিয়ে রিজুকে জলের ড্রামের মধ্যে দেখতে পায় সে। সেই সুযোগের ব্যবহার করেই ড্রামের মুখটা ঢাকা দিয়ে দেয় প্রিয়াঙ্কা। ভেতরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয় রিজুর। কিছু সময় পর ঢাকাটা সরিয়ে দেয় প্রিয়াঙ্কা যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করে।

সব শুনে রাতেই থানায় স্ত্রীকে নিয়ে আসেন সুব্রত। তার পর প্রিয়াঙ্কাকে জেরা করে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্তকারীরাও নিশ্চিত হন। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় প্রিয়াঙ্কাকে।

কিন্তু কেন খুন?

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন ঈর্ষার বশেই এই খুন। লেক মার্কেট এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কার এর আগের স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর সুব্রতর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ছ’মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। কিন্তু তাঁদের এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সুব্রতর পরিবার। তার পর এক সময় তাঁরা মেনে নিলেও, প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে নাকি বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকত। আর সেই সবের মাঝেই প্রিয়াঙ্কার ধারণা ছিল শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে শুরু করে তাঁর স্বামীও তাকে ভালবাসেন না। আর মনে মনে সে রিজুকেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে নিয়েছিল। আর সেই আক্রোশ থেকেই ‘পথের কাঁটা’কে সরিয়ে দেওয়া বলেই ধারণা পুলিশের।

Kolkata Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy