Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩
Buddhadeb Bhattacharjee

ছিলেন শিক্ষিকা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার গত দু’বছরের ঠিকানা ডানলপের ফুটপাথ

ডানলপ মোড়ের এটিএমের কোনায় নিজেকে সিঁটিয়ে রেখে বৃহস্পতিবার ৭২ বছরের বৃদ্ধা চেঁচিয়ে উঠলেন, “আমার জীবন, আমি যা খুশি করব।”

উদ্ধারের আগে ইরা বসু। ডানলপ মোড়ে, বৃহস্পতিবার।

উদ্ধারের আগে ইরা বসু। ডানলপ মোড়ে, বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২৫
Share: Save:

পুরনো দিনের কথা তিনি আর বলতে চান না। গত দু’বছর ধরে ডানলপের ফুটপাতকে নিজের ‘ঘর’ বানালেও কারও সাহায্য নিতে নারাজ। এক ভাঁড় চা-ও কিনে খান। আবার, নিজের টাকায় পছন্দের দোকানদারকে বিরিয়ানিও খাওয়ান!

Advertisement

খড়দহ প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সময়ের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ইরা বসুর জীবনটা আজ এমন কেন? ডানলপ মোড়ের এটিএমের কোনায় নিজেকে সিঁটিয়ে রেখে বৃহস্পতিবার ৭২ বছরের বৃদ্ধা চেঁচিয়ে উঠলেন, “আমার জীবন, আমি যা খুশি করব।” ক্রমশ খবরটা পৌঁছয় খড়দহ পুরসভার কাছে। সেখান থেকে বরাহনগর থানায়। সিপিএম নেতারাও যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। বিকেলে ইরাদেবীকে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে এক জন শিক্ষিকা কেন আজ ডানলপের সকলের কাছে ‘ভবঘুরে মাসিমা’, সেই রহস্য খোলসা করতে চাননি বৃদ্ধা।

কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তো তাঁর জামাইবাবু। তার পরেও তিনি ভবঘুরে! কিছু ক্ষণ চুপ থেকে, ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা উসকোখুসকো চুল ও শতচ্ছিন্ন নাইটি পরা বৃদ্ধা বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, “মানুষটা (বুদ্ধবাবু) আজ অসুস্থ। মীরাদেবীও অসুস্থ। ওঁদের করোনা হয়েছিল। কেন ওঁদের নিয়ে টানাটানি করছেন?’’ বৃহস্পতিবার সকালে পথচলতিরাও বৃদ্ধার কথা শুনে থমকেছেন। প্রশ্ন করেছেন, ‘উনি বুদ্ধবাবুর শ্যালিকা?’

গত ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসে কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্রী এসে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন। ১৯৭৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন খড়দহের ওই স্কুলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দ বলেন, “শুনেছি, উনি অবিবাহিতা ছিলেন। ওঁর সময়কার প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে এক সময়ে থাকতেন। এখন কেন রাস্তায় থাকেন, জানি না।’’ কৃষ্ণকলিদেবী জানান, আগের প্রধান শিক্ষিকার চেষ্টায় ইরাদেবী পিএফের টাকা পেলেও প্রয়োজনীয় কাগজ জমা করতে না পারায় পেনশন পান না।

Advertisement

যদিও আজও প্রতিদিন দু’বেলা টাকা দিয়ে বৃদ্ধা চা-বিস্কুট কিনে খান বলে জানাচ্ছেন দোকানি সুরেন্দ্র পাত্র। ডানলপের একটি হোটেলে প্রতিদিন মাসিমার জন্য ভাত-তরকারি রাখা থাকে। টাকা দিয়ে তা নিয়ে যান ইরাদেবী। স্থানীয় যুবক শ্রীদীপ সরকার বলেন, “গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে ভাত-মাংসের প্যাকেট দিয়েছিলাম। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, খাবার নষ্ট করতে রাজি নন। তাই এত খাবারের প্রয়োজন নেই।’’ টাকা কোথা থেকে পান? “ব্যাঙ্কে টাকা আছে। প্রয়োজন হলে তুলি।’’—ক্ষুব্ধ স্বরে জবাব ইরাদেবীর।

কোনও ভাবেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে রাজি নন। যেটুকু বলছেন, তা-ও যাতে ছ’ফুট দূর থেকে বলা হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করে বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষিকার দাবি, “শুধু মাস্ক পরলে করোনা আটকাবে না। যত্রতত্র থুতু ফেলা, ভিড় করা বন্ধ করতে হবে।’’ ঘুরেফিরে বুদ্ধবাবু-মীরাদেবীর প্রসঙ্গ তুলতেই চটলেন। “আর কোনও কথা বলব না। ওঁরা আমার কেউ হন না।’’—বলেই এটিএমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ডানলপ ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন বাংলা-ইংরেজি কাগজ পড়েন ইরাদেবী। মনে করেন, অনলাইন পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের।

প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, খড়দহে বুদ্ধবাবুর রাজনৈতিক সভায় দেখা যেত ইরাদেবীকে। কিন্তু প্রথম থেকেই তিনি উদাস প্রকৃতির ছিলেন। মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও চলছিল। আর এক প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও এক বার ওঁকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছিলাম। তার পরে ফের নিরুদ্দেশ হয়ে যান।’’ কেন এই ভবঘুরের জীবন? কড়া দৃষ্টিতে ইরাদেবীর উত্তর, “এনাফ ইজ় এনাফ।’’

এ প্রসঙ্গে মীরাদেবী শুধু বলেছেন, ‘‘এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। কেউ কিছু দাবি করলেই সেটা সব সময়ে সত্যি হবে, তার কোনও মানে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.