Advertisement
E-Paper

‘অচ্ছে দিন’ আদায়ে জোট পথবাসীদের

রবিবার চাঁদনি চকে সুবর্ণবণিক সমাজ হলে তাঁদের প্রথম সম্মেলন-মঞ্চে এ ভাবেই অধিকার বুঝে নিতে শপথ নিলেন শহর কলকাতার পথবাসীরা।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৬
একযোগে: অধিকার বুঝে নিতে সভায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

একযোগে: অধিকার বুঝে নিতে সভায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মাটিতে পাতা চাটাইয়ে নয়। চাদর দিয়ে মোড়ানো চেয়ারে বসে আছেন মামণি দাস, শবনম বিবিরা। মঞ্চ থেকে জানতে চাওয়া হল, সম্মান যাতে রক্ষা হয় সে রকম শৌচাগার চাই? বাচ্চার শিক্ষা চাই? স্কুলে খিচুড়ি চাই? চার-পাঁচ-ছ’মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ কাঁপিয়ে মায়েরা বলছেন, ‘‘চাই, চাই।’’ রবিবার চাঁদনি চকে সুবর্ণবণিক সমাজ হলে তাঁদের প্রথম সম্মেলন-মঞ্চে এ ভাবেই অধিকার বুঝে নিতে শপথ নিলেন শহর কলকাতার পথবাসীরা।

এ দিনের সভামঞ্চে কলকাতা পুরসভার ১২টি এলাকার প্রায় ২৪ হাজার পথবাসীর প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভিড় বাড়াতে সভাস্থলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। কিন্তু এ দিনের সভামঞ্চ ছিল অন্য রকম। রাজাবাজার খালপাড়ের বাসিন্দা খালেদা খাতুনের কথায়, ‘‘আগে আমাদের সভায় নিয়ে যেত। এখন আমাদের ডাকে আমাদের মতোই যাঁরা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, তাঁরা এসেছেন।’’

প্রতিদিন এক হাজার ঘুড়ির কাঠি তৈরি করতে পারলে ২৫ টাকা আয় হয় গার্ডেনরিচের আলিফনগরের রিক্তা বিবির। তাঁর কথায়, ‘‘তিন সন্তানকে খুব কষ্ট করে স্কুলে পড়াচ্ছি। ওদের দেখাশোনা করতে গিয়ে হাজার কাঠি তৈরি করতে পারি না। মাসে ১৫-২০ দিন বাড়িতে তো হাঁড়িই চড়ে না।’’ অধিকার আদায়ের এই মঞ্চের একটি নাম রয়েছে। তা হল, ‘মুক্তকণ্ঠ মহিলা সমিতি’। গার্ডেনরিচ এলাকায় রিক্তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন রেশমা খাতুন। তিনি জানান, রাত ১০টার পরে ওই এলাকার মেয়েরা শৌচাগারে যান না। রেশমাকে সমর্থন জানিয়ে ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে এমন সব লোক থাকে যে সাহস পাই না। নেশাগ্রস্ত স্বামীকে ডাকলেও সঙ্গে যায় না। তাই নিরুপায় হয়ে বাথরুম যাই না।’’

পঞ্চাননতলার বাসিন্দা শিবানী অধিকারীর হাতে এ দিন ‘ভুখার অধিকার’ নামে একটি চটি বই দেখা গেল। তার পাতা উল্টে শিবানী জানতে চান, ২০১৭ সাল থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা যোজনা’য় প্রথম সন্তানের জন্য ৫০০০ টাকা করে ভাতা পাওয়ার কথা। ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’য় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়েদের পাওয়ার কথা এক হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা কেন পাওয়া যাচ্ছে না?

যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক পিঙ্কি গায়েন লেক গার্ডেন্স ডাকঘরের কাছে থাকেন। তরুণী জানান, কলকাতা শহরে বাস করেও তাঁরা পরিস্রুত পানীয় জল পান না। পাড়ার কলে যে জল আসে, তা ঘোলাটে। পিঙ্কি বলেন, ‘‘লর্ডসের মোড় থেকে রিকশা ভাড়া করে খাবার জল আনতে হয়। প্রতিবার জল আনার খরচ ২০ টাকা। ওই টাকা খরচ করে পানীয় জল আনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। বৃষ্টির সময়ে ঘোলাটে জল, জমে থাকা নোংরা জল মিশে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ার বলেন, ‘‘সমস্যাগুলো জ্বলন্ত। এমন কিছু দাবি ওঁরা করছেন না, যা আইনে নেই বা সেই সংক্রান্ত প্রকল্প নেই। ওঁরা আইন অমান্য নয়, আইন মানার লড়াই করছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপরে হতাশা থেকে নিজেদের অধিকার নিজেরাই বুঝে নিতে চাইছেন।’’

শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পথের ধারে বসবাসকারী এই মহিলাদের সংগঠিত করার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সমাজকর্মী লাবণী রায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এই মহিলারা নিজেদের এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। অনুরোধ করে সুযোগ-সুবিধা পেতেই অভ্যস্ত ছিলেন ওঁরা। সেই অনুরোধকে যে এখন একযোগে অধিকারের ভাষা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে, এটা ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ।’’

Slums Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy