Advertisement
E-Paper

মা ডিউটি থেকে ফিরবে, এখনও অপেক্ষায় মৃত পুলিশকর্মীর ছেলে

বেলঘরিয়ার পুলিশ আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, মমতার ঘর তালাবন্ধ। কালকের পর থেকে সেখানে আর কেউ আসেননি বলে জানান আবাসনের অন্য বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৬
মা মমতা বসাকের অপেক্ষায় ছেলে তমোজিৎ।

মা মমতা বসাকের অপেক্ষায় ছেলে তমোজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

‘‘এটা আমার মা না, মাকে তো বাবা আনতে যাবে। ১১টার সময়ে মা ডিউটি থেকে আসবে’— শুক্রবার মায়ের মৃতদেহ দেখার পরে এ কথা বলেই দাদুর কোলে উঠে পড়েছিল দুর্ঘটনায় মৃত পুলিশকর্মী মমতা বসাকের ছেলে, বছর সাতেকের তমোজিৎ মজুমদার। তার পরে রাতে সে ঘুমিয়েও পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে দেখতে না-পেয়ে আধো আধো গলায় সে প্রশ্ন করেছে, ‘‘বাবা, মা কি ফোনটা বাড়িতে রেখে গিয়েছে? কাল থেকে ভিডিয়ো কল করছে না আমাকে।’’ ছোট্ট তমোজিতের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বাবা তরুণ মজুমদার। ছেলের প্রশ্নের উত্তরে কী বলবেন, সেটাই এখনও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

এ দিন ফোনে তরুণ বলেন, ‘‘২৮ বৈশাখ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। এ বছর ধুমধাম করেই করার কথা ছিল। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের মৌখিক ভাবে বলাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ও চলে গেল।’’ বলতে বলতে ফোনেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক। স্ত্রীর এই মৃত্যু কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তরুণ জানান, আট দিনের ছুটি নিয়ে শান্তিপুরে গিয়েছিলেন মমতা। বৃহস্পতিবার ছুটি কাটিয়ে ফুলিয়া স্টেশন থেকে বেলঘরিয়ার পুলিশ আবাসনে ফেরেন তিনি। স্টেশনে গিয়ে একটি মাস্ক কিনে দেওয়ার আবদার করেছিলেন মমতা। কিনেও দিয়েছিলেন তরুণ। মমতা বলেছিলেন, দোলের পরে আবার বাড়ি যাবেন। তরুণের কথায়, ‘‘ও বলেছিল, দোল মিটলে দু’দিন বাড়ি থেকেই যাতায়াত করবে। ছেলের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। তার পরে সবাইকে পুলিশ আবাসনের কোয়ার্টার্সে নিয়ে যাবে। কিন্তু ওর আর বাড়ি আসা হল না।’’

তরুণ জানান, ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল মমতার। ছেলেকে বড় স্কুলে ভর্তি করাবেন বলে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনবেন বলেও ঠিক করেছিলেন তাঁরা। রুবি মোড়ের কাছে দু’-একটি ফ্ল্যাট দেখাও হয়েছিল। এ বছরের মাঝামাঝি সব কিছু চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু এ ভাবে যে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।

এ দিন বেলঘরিয়ার পুলিশ আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, মমতার ঘর তালাবন্ধ। কালকের পর থেকে সেখানে আর কেউ আসেননি বলে জানান আবাসনের অন্য বাসিন্দারা। তবে স্কুটার দুর্ঘটনায় জখম সান্ত্বনা ওরাং এ দিন হাসপাতাল থেকে সকালের দিকে এসেই পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কোয়ার্টার্স থেকে বেরিয়ে যান বলেই জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

ওই আবাসনের বাসিন্দা প্রণয় সরকার বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী পুলিশকর্মী হওয়ায় আমাদের সঙ্গে মমতার খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল। শুক্রবার সকালেও এসেছিল আমাদের ঘরে। আমরা একসঙ্গেই সকালের খাবার খেলাম। তার পরে সাড়ে ১১টা নাগাদ ডিউটিতে যাবে বলে মমতা
তাড়াতাড়ি চলে গেল। কিন্তু তার কিছু ক্ষণ পরে দুপুরে এই দুর্ঘটনার কথা শুনলাম। সঙ্গে সঙ্গে আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মর্গে ওর মৃতদেহ রাখা।’’

বেলঘরিয়ার পুলিশ আবাসনে মমতার ফ্ল্যাটের দরজায় এখন তালা ঝুলছে। শনিবার।

বেলঘরিয়ার পুলিশ আবাসনে মমতার ফ্ল্যাটের দরজায় এখন তালা ঝুলছে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

মৃতার স্বামী বলেন, ‘‘শুক্রবার দুপুর নাগাদ সান্ত্বনার ফোন থেকে ফোন করে আমাকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। বলা হয়, আর জি কর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যাই। দেখি, মর্গে রয়েছে মমতার দেহ। দেহের ময়না-তদন্তের পরে রাত ১১টা নাগাদ শান্তিপুরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ওকে। রাতেই শান্তিপুর পুর শ্মশানে শেষকৃত্য হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার ডিউটিতে যাওয়ার সময়ে আমাকে ফোন করল। বলল, থানায় পৌঁছে আমাকে ফোন করে ছেলের সঙ্গে কথা বলবে। আমি এখন ছেলেকে কী বলব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

একটা দুর্ঘটনা যেন জীবনবদলে দিয়েছে তরুণের। সব হারিয়ে ছেলে তমোজিৎকে আঁকড়েই বাঁচতে চাইছেন তিনি।

Road Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy