দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে শিয়ালদহ স্টেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ভিড় সামাল দিতে বিশেষ পদক্ষেপ করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। পুজো উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে এই বিশেষ ব্যবস্থাপনা শিয়ালদহ ডিভিশনের সর্বত্র মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি বছরই শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতার পুজো দেখতে আসেন। তাঁদের সিংহভাগই নামেন শিয়ালদহ স্টেশনে। দৈনিক এমন আট থেকে দশ লক্ষ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার রাজীব সাক্সেনা। ওই বৈঠকে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ১৬ দফা কর্মপদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্টেশনে ট্রেনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় প্রায়ই বিপত্তির কারণ হয়ে ওঠে। এই সমস্যা এড়াতে পুজোর দিনগুলিতে যে সমস্ত গ্যালপিং ট্রেন চলে, সেগুলি প্রতিটি স্টেশনে থামবে বলে জানানো হয়েছে। ওই সব ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার বিষয়টিও সর্বোচ্চ স্তর থেকে নজরে রাখা হবে। রাতের দিকে যাত্রীদের ফেরার ব্যবস্থা রাখতে শিয়ালদহ থেকে উত্তর শাখায় কল্যাণী এবং দক্ষিণে বালিগঞ্জ-সোনারপুর শাখায় ট্রেন চালানো হবে। এ ছাড়া, বারাসত, খড়দহ, বালিগঞ্জ, ব্যারাকপুর, বনগাঁ, সোনারপুর, বারুইপুর, রানাঘাট-সহ বিভিন্ন স্টেশন লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী মোতায়েন করা হবে। দুর্ঘটনা এড়ানো ছাড়াও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা রক্ষাই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। পুজোর সময়ে ভিড়ের কারণে শিয়ালদহ স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীদের অসুবিধা দূর করতে ৯ এবং ১১ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনোর পথ পরিষ্কার রাখা হবে।
শিয়ালদহ স্টেশনে পুজোর দিনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা ছাড়াও ২১টি টিকিট বুকিং কাউন্টার দিন-রাত খোলা রাখা হবে। সেই সঙ্গে সব ক’টি স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার যন্ত্রও দিন-রাত চালু থাকবে। রেলের তরফে ১০ জন কর্মী ১০টি ‘পস’ যন্ত্র নিয়ে ঘুরবেন, যার মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। শিয়ালদহ বাজারের দিক থেকে সরাসরি স্টেশনে প্রবেশের জন্য এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া প্রফুল্ল দুয়ার পুজোর আগে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তর এবং মেন শাখার যাত্রীদের জন্য ওই অংশে চারটি বুকিং কাউন্টার এবং চারটি স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার যন্ত্র চালু থাকবে। ওই স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার যন্ত্রগুলি রক্ষণাবেক্ষণের কর্মী রাখার কথাও বলা হয়েছে।
শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীদের ঢোকা এবং বেরোনোর বিষয়টি মসৃণ রাখতে পার্কিং লটে গাড়ি রাখা সাময়িক ভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে। যাতে অস্বাভাবিক ভিড়ের সময়ে যাত্রীদের একাংশকে ওই অংশে সাময়িক ভাবে অপেক্ষায় রাখা যায়। শিয়ালদহ-সহ ডিভিশনের সব স্টেশন থেকে জমিয়ে রাখা যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী পুজোর আগে সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভিড় সামাল দিতে রানাঘাট, সোনারপুর-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে বাড়তি রেক মজুত রাখা হবে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন স্টেশনে পানীয় জল এবং আলোর ব্যবস্থার পাশাপাশি মেডিক্যাল টিম রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাত্রীদের জন্য খোলা হবে ‘মে আই হেল্প ইউ’ বুথ। অগ্নি-নির্বাপণের যাবতীয় ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)