Advertisement
১৮ মে ২০২৪

লালবাজারে আসছে ‘কম্যান্ডো কুকুর’

মার্কিন নেভি সিল কম্যান্ডো, এ দেশের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড এবং কলকাতা পুলিশকে এক সূত্রে বাঁধতে চলছে সারমেয়।

বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া

বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

মার্কিন নেভি সিল কম্যান্ডো, এ দেশের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড এবং কলকাতা পুলিশকে এক সূত্রে বাঁধতে চলছে সারমেয়।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ডেরার সন্ধানে কাজে লাগানো হয়েছিল বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া প্রজাতির একটি কুকুরকে। তার সাফল্য সামনে আসতেই ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর ডগ স্কোয়াডেও সামিল হয় বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া। পঠানকোটের জঙ্গি হামলায় তার সুফলও মিলেছে। আগুনে ঝলসে গিয়েও পাঠানকোটের বিমানঘাঁটির ভিতরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বার করেছিল এনএসজি-র বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া ‘রকেট’। এই কাজের জন্য সাহসিকতার পদকও জুটেছে তার।

নবান্নের খবর, এ বার লালবাজারের সারমেয় বাহিনীতেও আসার কথা রকেটের জ্ঞাতি ভাই-বোনেদের। প্রাথমিক ভাবে ১৮টি বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া কুকুর কেনার কথা ভাবা হয়েছে। কোথা থেকে কেনা হবে, তা নিয়ে খোঁজখবরও শুরু করেছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। পুলিশকর্তারা বলছেন, বর্তমানে লালবাজারের সারমেয় বাহিনীতে ল্যাব্রা়ডর, জার্মান শেপার্ড, গোল্ডেন রিট্রিভার, ডোবারম্যান, রট ওয়েলার, ককার স্প্যানিয়েল প্রজাতির প্রায় ৩০টি কুকুর রয়েছে। তার উপরে সম্প্রতি ১২টি ল্যাব্রাডর, জার্মান শেফার্ড, রট ওয়েলার কিনেছে কলকাতা পুলিশ। এখন গ্বালিয়রের বিএসএফ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সেপ্টেম্বরেই কাজে যোগ দেওয়ার কথা। তবে বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া নেই বাহিনীতে।

পুলিশের দাবি, ল্যাব্রাডর, জার্মান শেফার্ডরা মারাত্মক পরিশ্রম করতে পারে না। ফলে জঙ্গি-দমন অভিযানে তাদের সে ভাবে কাজে লাগানো
যায় না। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় জঙ্গি হানা হলে পুলিশের কম্যান্ডোদের দলে ভিড়ে কাজ করার মতো
কুকুরও নেই। বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া এলে সেই ঘাটতি মিটবে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এ হল কম্যান্ডো-কুকুর! যেমন তেজ, তেমন শারীরিক শক্তি। এক লাফে ৬ ফুট পাঁচিলও টপকে যেতে পারে! তাই প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যুক্ত করা হবে ওই সারমেয় প্রজাতিকে।’’

কম্যান্ডো অভিযানে শরিক হওয়ার বাইরেও বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া প্রজাতির কুকুরের অন্য দক্ষতা নিয়েও উচ্ছ্বসিত নবান্নের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, অপরাধ তদন্ত বা পাহারার কাজেও দক্ষ এই কুকুর। পুলিশকর্তাদের মতে, ল্যাব্রাডর, রট ওয়েলার বা জার্মান শেফার্ড—এই কুকুরগুলিকে এক-একটি নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ যে খুনের তদন্তে কাজ করতে পারে, তাকে বোমার হদিস বা মাদক সন্ধানে লাগানো যায় না। যে নিরাপত্তার কাজ করে, সে আবার অপরাধের তদন্তে সামিল হতে পারবে না। কিন্তু বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া প্রজাতির কুকুর একাধিক কাজে দক্ষ। ফলে তাদের একাধিক কাজে লাগানো যেতে পারে। ভারতে একমাত্র হরিয়ানায় ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের কাছে ওই কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নবান্নের খবর, কলকাতা পুলিশের এলাকা বৃদ্ধির ফলে অপরাধ-তদন্তের কাজও বেড়েছে। তার উপরে নবান্ন-সহ শহরে ভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বও বেড়েছে। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে নিরাপত্তা-তল্লাশির কাজও বাড়ে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরে সন্ত্রাসহানার আশঙ্কাও রয়েছে। এত কাজ ৩০টি কুকুরকে দিয়ে করানো সম্ভব হচ্ছে না। বহু সময়ে কুকুররা প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পাচ্ছে না। এই কারণেই গত মার্চ মাসে সারমেয় বাহিনীর দ্বিতীয় ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়েছিল। প্রথম ইউনিটটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটটি খোলা হবে হাওড়ার কাজিপাড়ায় বিদ্যাসাগর সেতুর র‌্যাম্পের নীচে। রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর নবান্ন থেকে যার দুরত্ব কয়েকশো মিটার মাত্র। সেখানে প্রায় ৩০টি কুকুর রাখার জায়গা করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সব ঠিকঠাক চললে আগামী মাসেই তার পথ চলা শুরু হবে বলে খবর। পুলিশের কর্তারা বলছেন, বেলজিয়ান ম্যালিনোয়া কুকুরগুলিকে দ্বিতীয় ইউনিটে সামিল করা হবে। তবে শুধুই কলকাতা পুলিশ বা নবান্ন নয়, ওই কম্যান্ডো-কুকুরকে কাজে লাগানো হবে রাজ্যের নিরাপত্তার স্বার্থেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Commando Dog Lalbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE