Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Civic volunteer

Civic volunteer: ‘আইন হাতে তোলার সাহস বার বার হয় কী করে?’

পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া স্রেফ পুলিশের সঙ্গে কাজ করার জন্যই কি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে ভাবছেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা?

এই অটো থেকেই উদ্ধার হয়েছিল অমরনাথ প্রসাদের দেহ।

এই অটো থেকেই উদ্ধার হয়েছিল অমরনাথ প্রসাদের দেহ। ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:১৯
Share: Save:

‘‘পুলিশে দিয়ে কী হবে? থানায় নিয়ে গেলেও তো ছাড়া পেয়ে যাবে! যা করার আমাদেরই করতে হবে।’’— অভিযোগ, চোর সন্দেহে বাতিস্তম্ভে বেঁধে রাখা যুবককে দেখিয়ে সঙ্গীদের এ কথাই বলেছিল মানিকতলার বাসিন্দা, পেশায় এন্টালি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার জগন্নাথ ভৌমিক। পুলিশের সঙ্গেই যার ওঠাবসা, বকলমে নিজেকে ‘পুলিশ’ বলেই দাবি করে যে, তার থেকে এমন কথা শুনলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছিল।

মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বাতিস্তম্ভে বাঁধা ওই যুবককে দফায় দফায় পিটিয়েছিল জগন্নাথ এবং তার সঙ্গীরা। মারের চোটে আধমরা যুবককে ভোরের দিকে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অটোয় বসিয়ে দেয় তারা। পরে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় অমরনাথ প্রসাদ ওরফে পাপ্পু নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের মৃতদেহ। অমরনাথের দাদা মহেশ প্রসাদ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে, কয়েক দিন আলোচনা হয়। কিন্তু আদতে কিছুই বদলায় না। ভাইয়ের মৃত্যুর পরেও কিছু বদলায়নি। চোর সন্দেহে ধরা এক যুবকের বুকে সিভিক ভলান্টিয়ারের বুট পরা পা দেখে তো চমকে উঠলাম! দোষ থাকলে শাস্তি দিক, কিন্তু কারও সঙ্গে এমন করা যায় কি? এই মনোভাব থেকেই তো আমার ভাইকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল।’’

অমরনাথের মেজো ভাই, পেশায় অটোচালক উত্তম প্রসাদের আয়েই চলত মানিকতলার বসাকবাগানে তিন ভাইয়ের ছোট্ট সংসার। উত্তম বললেন, ‘‘পুলিশের পরিচয়েই পাড়ায় দাপিয়ে বেড়াত জগন্নাথ। ১৪-১৫ জনকে নিয়ে ও বেঁধে পিটিয়েছিল আমার ভাইকে। এর পরে মামলা তুলে নিতে অনেক বার চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঝামেলায় না গিয়ে চুপচাপ থেকেছি। সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও পুলিশের সঙ্গেই তো ওঠাবসা। ওদের চটালে পুলিশকেই চটানো হয়।’’

পুলিশের সঙ্গে ওঠাবসার জোরেই গত কয়েক বছরে একাধিক বার সামনে এসেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘দাদাগিরি’। কোথাও গাড়ি থামিয়ে কাগজ দেখার নামে টাকা দাবি, কোথাও অতি সক্রিয় সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া স্রেফ পুলিশের সঙ্গে কাজ করার জন্যই কি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে ভাবছেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা? নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাও কি সেই কারণেই?

নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার এই মনোভাব সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল বাঁশদ্রোণী থানার সামনের রাস্তায়। সেখানে পুলিশের স্টিকার লাগানো, বেপরোয়া গতির একটি গাড়ি সাইকেল ভ্যান এবং গাড়িকে ধাক্কা মেরে রেলিং ভেঙে ঢুকে যায় মন্দিরে।

জানা যায়, দেবাশিস ভট্টাচার্য নামে ওই গাড়ির মালিক কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। গাড়িতে শুধু পুলিশের স্টিকার লাগানোই নয়, ‘পুলিশের’ প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেটের সেই গাড়ি তিনি ভাড়াও দিতেন।

তবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মধ্যমগ্রামের ঘটনা ছাপিয়ে গিয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারের দৌরাত্ম্যের সব ঘটনাকে। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে সওয়ার, সৌমেন দেবনাথ নামে বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে সপাটে চড় মারে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যান সৌমেনবাবু। তার পরেই মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় ট্র্যাফিক পুলিশের বুথে চড়াও হয় ক্ষুব্ধ জনতা। ভয়ে একটি গণশৌচাগারে আশ্রয় নেয় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। দরজা ভেঙে তাদের বার করার চেষ্টা হলে শৌচাগারের পাশের একটি পাকা নর্দমার মধ্যে লুকিয়ে পড়ে তারা। পরে কোনও মতে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।

পুরনো ঘটনা নিয়ে কথা তুলতেই গলা বুজে আসে সৌমেনবাবুর দুই মেয়ে এবং স্ত্রীর। স্ত্রী কাকলিদেবী মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের এক আত্মীয় এ দিন বলেন, ‘‘শুধুমাত্র হেলমেট না পরায় ওঁকে ওরা মেরে ফেলে। আইন হাতে তোলার সাহস বার বার হয় কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civic volunteer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE