Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
NRS

NRS: কৌটো বার করা গেলেও মৃত্যু শিশুর, প্রশ্নে এনআরএস

শিশুর মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনায় কি এন আর এসের নাক-কান-গলা বিভাগ দায় এড়াতে পারে?

আট মাসের রীতেশ বারুইয়ের শ্বাসনালি থেকে এই কৌটোই বার করেছিল এসএসকেএম।

আট মাসের রীতেশ বারুইয়ের শ্বাসনালি থেকে এই কৌটোই বার করেছিল এসএসকেএম। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৫:৫৬
Share: Save:

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দায়িত্ব না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তাতেই শ্বাসনালির উপরে কাজলের কৌটো আটকে থাকা আট মাসের শিশুর অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় অবস্থার অবনতি হয়ে শনিবার মারাই গেল এসএসকেএমে ভেন্টিলেশনে থাকা রীতেশ বারুই।

ওই শিশুর মৃত্যুর পরে প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনায় কি এন আর এসের নাক-কান-গলা বিভাগ দায় এড়াতে পারে? এসএসকেএম যেখানে ল্যারিঙ্গোস্কোপি করে কয়েক সেকেন্ডে কৌটোটি বার করতে পারল, সেখানে এন আর এসে ওই ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন সামান্যতম চেষ্টা না করেই শিশুটিকে ওই হাসপাতালে রেফার করা হল, কেনই বা প্রথমে এন আর এসের এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে আট মাসের একটি বাচ্চাকে নিয়ে তার মা-বাবাকে ঘুরতে হল— বড় হয়ে উঠছে এই সব প্রশ্নও। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘প্রায় তিন ঘণ্টা ওই একরত্তির শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার কারণেই এত বড় বিপদ ঘটে গেল। কারণ, যত ক্ষণে কৌটোটি বার করা হয়েছে, তত ক্ষণে শিশুটির শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।’’ সন্তানের এই মর্মান্তিক পরিণতির দায় কে নেবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিশুটির মা-বাবা। এই প্রসঙ্গে এন আর এসের সুপার ইন্দিরা দে শুধু বলেছেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনার পরেই ইএনটি বিভাগের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এ বার রেডিয়োথেরাপির বিভাগীয় প্রধান শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত-কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।’’

রীতেশের পরিবারের অভিযোগ, বিধাননগরের স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে সকাল ৯টায় এন আর এসে এলেও তাঁদের শিশু-শল্য বিভাগ থেকে নাক-কান-গলা বিভাগে শুধু ঘুরপাক খেতে হয়। শুক্রবার সকাল ৭টায় ঘটনাটি ঘটার পরে প্রায় তিন ঘণ্টা শ্বাসনালিতে বাধা নিয়েই ঘুরে বেড়াতে হয় রীতেশকে। এন আর এসে যখন তাকে নিয়ে আসা হয়, তখন তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল ৫০ শতাংশে। ১০টা নাগাদ পিজি-তে যখন শিশুটি পৌঁছয়, তখন তার পুরো শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল। কৌটো বার করার পরেই তড়িঘড়ি ভেন্টিলেশনে দিতে হয় রীতেশকে।

পিজি-র ইএনটি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শ্বাসনালির উপরে কৌটোটি আটকে থাকায় স্বাভাবিক উপায়ে অক্সিজেন শরীরে যেতে পারেনি। তাতেই মস্তিষ্ক ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তড়িঘড়ি ভেন্টিলেশনে দিয়ে সারা রাত চেষ্টা করা হলেও, সব বিফলে গেল।’’ শ্বাসনালি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় রীতেশের শরীরে হু হু করে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল। অর্থাৎ, সে আক্রান্ত হয়েছিল হাইপক্সিয়ায়। পিজি-র স্নায়ুরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘শরীরে বাতাস যাতায়াতের পথের বেশির ভাগ অংশ যদি বন্ধ থাকে, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেটি দীর্ঘস্থায়ী হলে, মস্তিষ্কের কোষের যে ক্ষতি হয়, তা আর ঠিক হয় না।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হাইপক্সিয়া গোটা শরীর ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত সইতে পারে। কিন্তু মস্তিষ্কের কোষ সর্বাধিক ১৮০ সেকেন্ড পর্যন্ত সেই অবস্থা নিতে পারে। তার পরেই কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। মানবদেহের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠ রয়েছে। মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি হতে হতে ওই প্রকোষ্ঠগুলিতেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। তাতে যে কোনও সময়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার কিংবা রেসপিরেটরি ফেলিয়োর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, ‘‘শ্বাসনালিতে যদি বাইরের কোনও জিনিস আটকে যায়, তা হলে ফুসফুস ফুলে উঠতে পারে। তাতে ভেন্টিলেশন দেওয়াও খুব শক্ত। ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা যত বেশি হবে, সফল ভাবে তা থেকে শিশুকে বার করা ততটাই কঠিন। হাইপক্সিয়ায় মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। আর বাঁচলেও শিশুটি সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE