E-Paper

আইআইএম-এ নির্যাতিতার বয়ানে ‘ধোঁয়াশা’, উঠছে প্রশ্ন

পুলিশি তদন্তের কেস ডায়েরি খুঁটিয়ে দেখে বিচারক জানিয়েছেন, ১২ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগের সময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে দেওয়া নির্যাতিতার বয়ানে অস্পষ্টতা রয়েছে। ধর্ষণ প্রসঙ্গে বয়ানে অভিযোগকারিণী, ওই রকম কিছু ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:২৮

—প্রতীকী চিত্র।

সাধারণত ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে পুলিশি হেফাজত থেকে জামিন পায় না অভিযুক্ত। আইআইএম কলকাতার ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত পরমানন্দ জৈন ওরফে পরমানন্দ মহাবীর টোপ্পানাওয়ার যে শনিবারই জামিন পেয়ে যাবেন তা আইনজীবী মহলের অনেকেই আঁচ করেননি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম‍্যাজিস্ট্রেট অমিত সরকার তাঁর পর্যবেক্ষণে পুলিশি তদন্তে গাফিলতির নানা দিক তুলে ধরেছেন। এর পাশাপাশি পুলিশের আবেদন মেনে বিচারক অভিযুক্তের মোবাইলের পাসওয়ার্ড খুলে তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন। কাল, মঙ্গলবার এক জন ম‍্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পাসওয়ার্ড খোলা হবে। অভিযোগকারিণীর নীরবতার পিছনে কোনও ভয় বা চাপ থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে নারী অধিকার রক্ষারএকটি মঞ্চ।

পুলিশি তদন্তের কেস ডায়েরি খুঁটিয়ে দেখে বিচারক জানিয়েছেন, ১২ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগের সময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে দেওয়া নির্যাতিতার বয়ানে অস্পষ্টতা রয়েছে। ধর্ষণ প্রসঙ্গে বয়ানে অভিযোগকারিণী, ওই রকম কিছু ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন। এর ভিত্তিতে কিছুটা ধোঁয়াশার কথা বলেন বিচারক। পরে মেডিকো-লিগ‍্যাল পরীক্ষার সম্মতি দেননি অভিযোগকারিণী। তাঁর গোপন জবানবন্দিও নেওয়া যায়নি। বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, কেস ডায়েরিতে নির্যাতিতার চিকিৎসককে বয়ানের পাতায় তিনি তাঁর স্বাক্ষর এবং শিলমোহর বসিয়েছেন।

কেস ডায়েরির পাতায় কোনও ক্রমিক সংখ‍্যা না থাকা নিয়েও বিচারক প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “বিচার ব্যবস্থা 'অন্ধ' হয়ে থাকতে পারে না। পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে কোনও ভাবেই হেফাজতে রাখা যায় না। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জোরালো তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য নেই। সেই জন্যই অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।” তবে ইতিমধ্যে অভিযোগকারিণীর সুরক্ষার দিকটি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করতে মৈত্রী বলে একটি নারী অধিকার রক্ষা মঞ্চের তরফে আর্জি জানানো হয়।

প্রধান বিচারপতিকে লেখা ওই চিঠির বক্তব‍্য, “অভিযোগকারিণীর নীরবতা বা তাঁর পরিবারের ভূমিকা তদন্তে অসহযোগিতাহিসেবে দেখা ঠিক নয়। তার বদলে এই পরিস্থিতির মধ্যে নির্যাতিতার জন‍্য এক ধরনের ভয়, চাপ এবং বিচারব‍্যবস্থার প্রতি আস্থার ঘাটতি রয়েছে বলে দেখা উচিত।” বিচারব‍্যবস্থায় অভিযোগকারিণীরনির্ভয়ে শামিল হওয়া নিশ্চিত করতে তাঁর সহায়তায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেও মৈত্রীর তরফে আবেদন জানানো হয়েছে।

তবে জামিন মঞ্জুরের সমর্থনে শীর্ষ আদালতের একটি রায়কে উল্লেখ করে আলিপুর কোর্টের বিচারক বলেছেন, জামিন মঞ্জুরটাই 'নিয়ম'। জামিন খারিজ 'ব্যতিক্রম'। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, “১২ জুলাই থেকে অভিযুক্ত হেফাজতে রয়েছে। এখন আর তার হেফাজতে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তাই জামিন মঞ্জুর করা হল।” জোকায় আইআইএমের শিক্ষাঙ্গনে অভিযুক্তের ফেরা নিয়ে কিছু না বললেও দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা বহাল করার কথাই বলেছেন বিচারক। আইআইএম কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র বলেন, এখনওহস্টেলে ছেলেটির ঘর পুলিশ বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে পুলিশের নির্দেশই তাঁরা মেনে চলবেন।

জামিন পেলেও অভিযুক্ত অবশ‍্য আজ, সোমবার পর্যন্ত মুক্তি পাচ্ছেন না। শনিবার রাত ন’টা নাগাদ জামিনের নির্দেশ প্রকাশিত হতে হতে আদালতের প্রশাসনিক দফতর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অভিযুক্তের আইনজীবী সুব্রত সর্দার বলেন,"অভিযুক্ত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন। সোমবার জামিনের শর্ত অনুযায়ী আদালতে ৫০ হাজার টাকা জমা দিলে তিনিছাড়া পাবেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IIM Joka police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy