E-Paper

সুপারিশে তুলে আনা কুকুরের চাপে নির্বীজকরণ হচ্ছে কই

অনেকেরই দাবি, নেতা-দাদাদের চাপে অসুস্থ কুকুরকেও তুলে এনে পুরসভার ডগ পাউন্ডে রেখে দিতে হচ্ছে নির্বীজকরণের জন্য আনা কুকুরের সঙ্গে!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ১০:৩৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে পথকুকুর সরানোর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালতেরই তিন বিচারপতির বেঞ্চ। অনেকেরই প্রশ্ন, এমন নির্দেশ কলকাতার ক্ষেত্রেও দেওয়া হলে কী হবে? পথকুকুর নিয়ে এ শহরেই বা কী পরিস্থিতি? নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দানের কাজ কোন পর্যায়ে, খোঁজ করতে গিয়ে সামনে আসছে দিল্লির মতোই প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ। অনেকেরই দাবি, সরকারি টাকা এসে পড়ে থাকছে বা ব্যবহার না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছে।

অনেকেরই দাবি, নেতা-দাদাদের চাপে অসুস্থ কুকুরকেও তুলে এনে পুরসভার ডগ পাউন্ডে রেখে দিতে হচ্ছে নির্বীজকরণের জন্য আনা কুকুরের সঙ্গে! অভিযোগ, নেতারা ফোন করে বলছেন, ‘‘এলাকায় অনুষ্ঠান আছে। ঘা নিয়ে কুকুর ঘুরছে। দেখতে খারাপ লাগে। তুলিয়ে দাও!’’ তাদের সঙ্গে থেকে নির্বীজকরণ হওয়া কুকুরও ফিরছে রোগ নিয়েই। পুরসভার কর্মীদের দাবি, কলকাতায় দেড় লক্ষেরও বেশি পথকুকুর রয়েছে। অথচ, মাত্র দু’টি সরকারি ডগ পাউন্ডে ৩০০টি কুকুর রাখার ব্যবস্থা আছে। যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে দেড় লক্ষ কুকুরের নির্বীজকরণ করতেই ১০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যেতে পারে! কলকাতার এই পরিস্থিতি হলে অন্যান্য পুরসভার অবস্থা কী?

দীর্ঘদিন পুরসভার ডগ পাউন্ডের কাজের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, ২০০১ সালে ‘অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল, অ্যান্টি র‍্যাবিস প্রোগ্রাম’-এ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দানের কাজ দেয় পুরসভা। কুকুরপিছু নির্বীজকরণের খরচ ৪৪৫ টাকা ধার্য হয়। ঠিক হয়, এর অর্ধেক টাকা দেবে পুরসভা, বাকি অর্ধেক অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড। কিন্তু অভিযোগ, ওই সংস্থার দেওয়া হিসাবে গরমিল থাকায় টাকা আটকে যায়। পুরসভার টাকা দিয়েই কিছু দিন চলে কাজ।

তৃণমূলের বোর্ড ক্ষমতায় এসে সমস্তটা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে। ১০ জন গাড়িচালক, ২০ জন ডগ-ক্যাচার, পাঁচ জন প্যারা-ভেট এবং তিন জন পশু সহায়তাকারী নিয়ে কাজ শুরু হয়। ‘সোসাইটি ফর স্ট্রে ক্যানাইন বার্থ কন্ট্রোল কলকাতা’ (এসএসসিবিসি-কে) নামে একটি সংস্থাও তৈরি করা হয়। সরকারি তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা ধার্য হয়।

২০১৭ সালে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর থেকে ৭৬ লক্ষ টাকা ধার্য হয়। শর্ত দেওয়া হয়, এক বছরের মধ্যে ৭২০০টি কুকুরের নির্বীজকরণ হওয়া চাই। এক পুর অফিসারের মন্তব্য, ‘‘অর্ধেক টাকাও খরচ হয়নি।’’ ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় আরও ১৪ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। ধরে নেওয়া হয়, কলকাতায় ৮৪ হাজার পথকুকুর রয়েছে। ১১.৫৫ টাকা প্রতিষেধকের জন্য ও পাঁচ টাকা করে সরঞ্জামের জন্য ধার্য হয়। কিন্তু পুরসভা মাত্র ৪০ হাজার কুকুরের প্রতিষেধক কিনতে পেরেছিল। পরিকাঠামোর অভাবে বাকি প্রতিষেধক কিনেই রাখা যায়নি।

রাজ্যের হেল্‌থ স্কিম থেকেও ৮৬ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয় এই সময়ে। ২১ লক্ষ ওষুধে, প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপনে, প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা চিকিৎসকের খরচ ও প্রায় চার লক্ষ ২৫ হাজার টাকা প্রতিষেধকের জন্য ধরা হয়েছিল। পুরসভার অন্দরের খবর, বিজ্ঞাপনে পুরোটা খরচ হলেও বাকি টাকার ৪০ শতাংশও কাজে লাগানো যায়নি।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে দিল্লির মতো অবস্থা নয়। কড়া হাতেই সামলানো হচ্ছে সবটা।’’ পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসক রণিতা সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছি, অসুস্থ কুকুর কোনও ভাবেই নির্বীজকরণের জন্য আনা কুকুরের সঙ্গে রাখা যাবে না। তবু কিছু নেতা অনুরোধ করেন। সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Street Dogs

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy