Advertisement
E-Paper

স্বচ্ছতা আনতে ‘নজর’ এ বার প্রেসক্রিপশনেও

সব চিকিৎসকই কি জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখছেন? হাসপাতালের স্টোর্সে যে সব ওষুধ মজুত রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই কি ওষুধ লিখছেন তাঁরা?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৩

সব চিকিৎসকই কি জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখছেন? হাসপাতালের স্টোর্সে যে সব ওষুধ মজুত রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই কি ওষুধ লিখছেন তাঁরা? নাকি দরিদ্র রোগীকে সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে? রোগীকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করে কি রোগ নির্ণয় হচ্ছে? নাকি নাম-কা-ওয়াস্তে রোগীকে দেখেই ওষুধ লিখে দেওয়া হচ্ছে? সে সব দিকে নজর দিয়ে রোগী পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতে পুজোর আগেই রাজ্যের সেরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চালু হচ্ছে একটি বিশেষ ব্যবস্থা।

ডাক্তারি পরিভাষায় এই ব্যবস্থার নাম ‘ট্রিপলিকেট প্রেসক্রিপশন’। অর্থাৎ, একই প্রেসক্রিপশনের থাকবে তিনটি করে কপি। একটি থাকবে রোগীর কাছে। আর একটি ঝুলবে তাঁর শয্যার সঙ্গে, অর্থাৎ ‘বেড হেড টিকিট’ হিসেবে। তৃতীয়টি থাকবে হাসপাতালের মেডিক্যাল স্টোর্সে। প্রেসক্রিপশন যথাযথ হচ্ছে কি না, তার উপরে নিরন্তর নজরদারি চালাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস। বাঙুর হাসপাতালে দায়িত্বে থাকাকালীন এই ব্যবস্থা চার বছর আগেই চালু করেছিলেন তিনি। জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা অনেকটাই নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন তার মাধ্যমে। এসএসকেএমের দায়িত্বে এসে এ বার এখানেও নতুন এই ব্যবস্থা চালু করছেন অরূপবাবু। এ বার থেকে এসএসকেএমে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে যা লিখবেন, সেটারই তিনটি কার্বন কপি হয়ে যাবে। নতুন ধরনের প্রেসক্রিপশন ছাপার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

অরূপবাবুর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে এখন সবটাই ফ্রি। তাই কোনও রোগীকে যাতে ওষুধ কেনার জন্য বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে খরচ করতে না হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। হাসপাতালে যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়, তার থেকেই লিখতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও তা-ই।’’

একেবারে গোড়ায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিক, পেডিয়াট্রিক্স বিভাগে এই নতুন ব্যবস্থা চালু হবে। তার পরে অন্য বিভাগগুলিতেও এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নতুন ব্যবস্থায় সকলের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিভাগের প্রধান চিকিৎসকদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

এসএসকেএমের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রেসক্রিপশন অডিট হলে ডাক্তারদের উপরেও চাপ থাকবে। তাঁরা রোগীকে ভাল ভাবে না দেখে ছেড়ে দিতে পারবেন না। কারণ, ক্লিনিক্যালি রোগীকে দেখে তিনি কী পাচ্ছেন, তা প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে। এখন তো সব ফ্রি। তাই প্রেসক্রিপশন কথাটার বদলে ‘মেডিসিন রিকুইজিশন কাম ইনস্ট্রাকশন স্লিপ’ চালু হতে চলেছে।’’

ব্র্যান্ড নাম ছেড়ে ওষুধের জেনেরিক নাম প্রেসক্রিপশনে লেখার ব্যাপারে নির্দেশ জারি হয়েছিল বাম আমলেও। তা মানেননি অধিকাংশ ডাক্তার। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে ফের এই নির্দেশ জারি করে। তার পরেও সরকারি হাসপাতালগুলিতে ব্র্যান্ড নামে প্রেসক্রিপশন লেখার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। প্রেসক্রিপশন অডিটের কথা মুখে একাধিক বার বলা হলেও অধিকাংশ জায়গাতেই তা কার্যকর না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে। শুধু ওষুধ নয়, হাসপাতালে যে সব পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই, এমন পরীক্ষার কথাও প্রেসক্রিপশনে লেখা হয় দেদার। অডিটের অভাবে তা-ও ঠেকানো যায়নি। এ বার সবটাই আতসকাচের নীচে চলে এলে অনেক কিছুই বদলাবে বলে আশা স্বাস্থ্যকর্তাদের।

তবে অন্য মতও রয়েছে। ডাক্তারদের একাংশ বলছেন, বহু প্রয়োজনীয় ওষুধ, বিশেষত অ্যান্টিবায়োটিক এখনও হাসপাতালে সরবরাহ হয় না। রোগীর জীবনের স্বার্থেই সেগুলি লিখতে হয়। এমন কড়াকড়ি হলে প্রয়োজনে সেগুলি রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে বলা যাবে না। এতে ক্ষতি হবে রোগীরই। নিয়ম চালু করার আগে সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। অরূপবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ধাপে ধাপে সবটাই হবে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এসএসকেএমের বিভিন্ন খরচে রাশ টেনে সেই টাকা রোগীদের জন্য খরচের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বৈঠকে খাওয়াদাওয়া বাবদই মাসে ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হত। খরচ কমাতে হাসপাতালের মিটিং থেকে উঠে গিয়েছে খাওয়ার পাটও। চায়ের সঙ্গে আসা বিস্কুটও ফেরত গিয়েছে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক থেকে।

triplicate prescription sskm medical treatment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy