Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
SSKM

Student: হাত বাড়াল কলেজ, উঠে দাঁড়াবেন হুইলচেয়ারে বন্দি ডাক্তারি পড়ুয়া

আজ, সোমবার এক অনুষ্ঠানে এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া শিবানীকে সেই হুইলচেয়ারের মাধ্যমে দাঁড় করাবেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

লড়াকু: এসএসকেএমে শিবানী। রবিবার।

লড়াকু: এসএসকেএমে শিবানী। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৬:২৮
Share: Save:

তেতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা চলে গিয়েছে। কিন্তু মনের জোরের কাছে হার মেনেছে সেই প্রতিবন্ধকতা। হুইলচেয়ারে বসেই প্রায় এক বছর ধরে একের পর এক ক্লাস করে চলেছেন ২০ বছরের তরুণী। কিন্তু ডাক্তারি পড়তে গেলে যে হাতেকলমে প্রশিক্ষণও জরুরি। তাই এ বার ওই তরুণীকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে এগিয়ে এলেন খোদ কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে কেনা হল স্ট্যান্ডিং হুইলচেয়ার।

আজ, সোমবার এক অনুষ্ঠানে এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া শিবানীকে সেই হুইলচেয়ারের মাধ্যমে দাঁড় করাবেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, এই হুইলচেয়ারে বসে যেমন যাতায়াত করা যাবে, তেমনই এটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে বসার জায়গাটি সোজা হয়ে যাবে। তাতেই দাঁড়িয়ে নড়াচড়া করার পাশাপাশি হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন ওই পড়ুয়া। শিবানীর কথায়, ‘‘শব ব্যবচ্ছেদ, মাইক্রোস্কোপে কিছু দেখা— এ সব ক্ষেত্রে এত দিন টেবিলের নাগাল পাচ্ছিলাম না। হুইলচেয়ারে বসে কাটানোটাই যেন জীবন হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার আমি দাঁড়াব।’’

আইআইটি মাদ্রাজে তৈরি হওয়া এই হুইলচেয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কিনেছে এসএসকেএম। খরচ পড়েছে ৩০ হাজার টাকা। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, শিবানীর লড়াই ও মনের জোর দেখে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রত্যেক শিক্ষক থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্তারা। ‘স্যর, আমি কি দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে পারব না?’— ২০ বছরের এক পড়ুয়ার এই প্রশ্নের উত্তর কী হবে, সেটাই ভাবাত শিক্ষকদের। তখনই বিষয়টি নজরে আসে এসএসকেএমের ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিকের। তিনি বলেন, ‘‘কার ক্ষেত্রে কেমন হুইলচেয়ার প্রয়োজন, সেটা জরিপ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক জন ডাক্তারি পড়ুয়া দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করবেন, রোগী দেখবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। তার জন্য দরকার ছিল স্ট্যান্ডিং হুইলচেয়ারের। সেটাই জানিয়েছিলাম।’’ এসএসকেএমের ডিন অভিজিৎ হাজরা জানান, সেই সুপারিশ মতো কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ওই পড়ুয়ার পাশে দাঁড়াবে কলেজই। তিনি বলেন, ‘‘সব রকম ভাবে এক জন পড়ুয়ার পাশে থাকাই কলেজের মূল লক্ষ্য। তাই এই হুইলচেয়ার কেনা হল।’’

সালটা ২০১৯। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঁচ মাস পরেই এক দুপুরে ঘটেছিল দুর্ঘটনা। পা ফস্কে বাড়ির তেতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বিহারের বাসিন্দা শিবানী। স্থানীয় হাসপাতালে পরীক্ষায় দেখা যায়, মেরুদণ্ডে গুরুতর চোট লেগেছে। চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন ওই পড়ুয়া। কয়েক দিন সেই হাসপাতালে থাকার পরে বাবা রবি রায় মেয়েকে নিয়ে যান দিল্লিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে প্রায় তিন মাস ছিলেন শিবানী। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে প্রথমে অস্ত্রোপচার হয়। তার পরে চলে রিহ্যাবিলিটেশন। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু হাসপাতালে শুয়ে ভাবতাম, সেই স্বপ্ন কি সফল হবে?’’ শিবানী জানান, তাঁকে মানসিক বল জোগাতেন চিকিৎসক হরবিন্দ সিংহ ছাবড়া। যিনি বলতেন, ‘‘তুমি কি ভেবেছ, ডাক্তার হতে পারবে না? তোমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। হুইলচেয়ারটাই তোমার জীবন নয়।’’ সেই জোরেই হাসপাতাল থেকে ফিরে দূরশিক্ষায় স্নাতক স্তরে ভর্তি হন শিবানী। ২০২১ সালে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে নিট-এ বসেন। ডাক্তারিতে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন এসএসকেএমে। তার পর থেকে সেই হাসপাতালের ছাত্রী আবাসই শিবানী ও তাঁর মা সীমা রায়ের সংসার।

প্রতিদিন হস্টেল থেকে হুইলচেয়ার ঠেলে চার-পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ইউসিএম ভবনে পৌঁছে যান শিবানী। ওঁদের প্রথম বর্ষের ক্লাস হয় সাততলায়। এ দিকে, লিফট রয়েছে ছ’তলা পর্যন্ত। তাই প্রতিদিন হুইলচেয়ার-সুদ্ধ ধরে শিবানীকে ক্লাসে পৌঁছে দেন সহপাঠীরা। এসএসকেএমে পড়তে আসার পরে শরীরের নিম্নাঙ্গের অসাড়তা কাটাতে পিএমআর বিভাগে চিকিৎসা করাচ্ছেন ওই ছাত্রী। রাজেশ জানান, ওই তরুণী যত পা ছড়িয়ে রাখতে পারবেন, ততই তাঁর সমস্যার উন্নতি ঘটবে। সেই কাজে সহযোগিতা করবে এই স্ট্যান্ডিং হুইলচেয়ার। শিবানীর কথায়, ‘‘কলেজের অধিকর্তা, ডিন এবং পিএম আর বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বলেছিলেন, আমি আবার দাঁড়াব। সেই স্বপ্নই এ বার সত্যি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Medical Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE