এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
খাটের উপরে খেলা করছিল এক বছর দশ মাস বয়সের ছেলেটা। আচমকাই গড়িয়ে পড়ে যায় সে। শব্দ শুনে মা ছুটে এসে দেখেন, ছেলের মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আর তার বাঁ চোখের কোনায় গেঁথে গিয়েছে একটি কাঁচি! সেই কাঁচি খুলি ভেদ করে ওই একরত্তির মস্তিষ্কে গিয়ে বিঁধেছিল। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করে সেই শিশুকে বাঁচাল এসএসকেএম।
মুন্সিরহাটের বাসিন্দা শেখ আরিফ আলির একমাত্র ছেলে মিকাইল শেখ গত ১১ অগস্ট রাতে ঘরেই খাটে বসে খেলা করছিল। মা সায়না বেগম ব্যস্ত ছিলেন কাজে। আচমকাই তিনি খাট থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনে ছুটে আসেন। মিকাইলের কান্নার আওয়াজ শুনে চলে আসেন পরিজনেরাও। তার দাদু রজব আলি বলেন, ‘‘দেখি, নাতির সারা মুখ রক্তে ভাসছে। চোখের পাশে কাঁচি গেঁথে রয়েছে। তড়িঘড়ি ওকে জগৎবল্লভপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ সেখান থেকে মিকাইলকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয়।
শিশুটিকে আনার পরে চিকিৎসকেরা দেখেন, তার নাক ও বাঁ চোখের সংযোগস্থলের কোনায় গেঁথেছে কাঁচিটি। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, সেটি খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কের ‘ফ্রন্টাল লোব’-এ বিঁধে আছে। তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন স্নায়ু শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা। চক্ষু বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ সমাদ্দারের উপস্থিতিতে অস্ত্রোপচারটি করেন স্নায়ু শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শুভাশিস ঘোষ, শুভমিত্র চৌধুরী ও অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক রোশনিতা সেনগুপ্ত ও তাঁর দল। শুভাশিস বলেন, ‘‘পুরো মাথা কেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। খুব সাবধানে মস্তিষ্কে বিঁধে থাকা কাঁচি বার করতে হয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই শিশুর বাঁ চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা নেই। তবে মাথায় চোটের কারণে ভবিষ্যতে খিঁচুনি ও নাক দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে। আপাতত স্থিতিশীল মিকাইল। আর ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে সায়না বলছেন, ‘‘ও যে আমার কোলে বেঁচে রয়েছে, এটাই অনেক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy