E-Paper

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই শেষ কথা নয়, সেরে উঠতে সহায় পিএমআর

পঞ্চাশের দশকে অধ্যাপক সনৎ সরকারের হাত ধরে এসএসকেএমে শুরু হয় পিএমআর বিভাগ। সত্তরের দশকে দেশে প্রথম সেখানে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন শুরু হয়।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৭:৩১
এসএসকেএম হাসপাতাল।

এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

দুর্ঘটনায় বছর উনিশের তরুণের মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত লেগেছিল। যার অভিঘাতে ডাক্তারি-ছাত্র ওই তরুণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দেড় বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। এসএসকেএমের ফিজ়িক্যাল মেডিসিন রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগে দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে ওঠা সেই তরুণ নতুন করে পড়াশোনা করে প্রতিবন্ধী কোটায় এমবিবিএস পড়ছেন জেলারই একটি মেডিক্যাল কলেজে। বর্তমানে চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র তিনি।

শুধু মস্তিষ্কের আঘাতেরই নয়, হাত-পা বাদ যাওয়া, স্ট্রোক, স্নায়ুঘটিত অসুখ, মেরুদণ্ডের আঘাত, পার্কিনসন্স, বিভিন্ন বিরল রোগ, মায়োপ্যাথি, গুলেন বারি সিন্ড্রোম, সেরিব্রাল পলসি প্রভৃতি কারণে যা যা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, সেই বাধা দূর করা সম্ভব এই পিএমআর চিকিৎসায়। কিন্তু এর কার্যকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ জানেন না। যখন আর কোনও উপায় থাকে না, তখনই তাঁরা পিএমআর সম্পর্কে জানতে পারেন। তাই এ নিয়ে সচেতনতার প্রসারে চলতি বছর থেকে ৬ জুলাই তারিখটি জাতীয় পিএমআর দিবস হিসাবে পালন করা শুরু হয়েছে। থিম হিসেবে এ বছর বেছে নেওয়া হয়েছিল, ‘প্রিভেন্ট ডিজ়এবিলিটি বিফোর ইট হ্যাপেন্স’ অর্থাৎ, প্রতিবন্ধকতা আসার আগেই তাকে প্রতিরোধ করুন।

পঞ্চাশের দশকে অধ্যাপক সনৎ সরকারের হাত ধরে এসএসকেএমে শুরু হয় পিএমআর বিভাগ। সত্তরের দশকে দেশে প্রথম সেখানে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন শুরু হয়। বর্তমানে কলকাতার সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজ এবং বর্ধমান, বাঁকুড়া, উত্তরবঙ্গ-সহ একাধিক জেলার মেডিক্যাল কলেজে এই বিভাগ চলছে। একাধিক বেসরকারি হাসপাতালেও রয়েছে এই বিভাগ।

৬২টি শয্যা, দু’টি ওটি, ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট, পেন ম্যানেজমেন্ট, অ্যাম্পুটেশন ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস মেডিসিন ইনজুরি-সহ একাধিক চিকিৎসা হয় এসএসকেএমের পিএমআর বিভাগে। এসএসকেএম হাসপাতালের পিএমআর-এর বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা হয়। মূল্যবান ওষুধ, থেরাপি, ইনজেকশন, প্রসিডিয়োর, এমনকি নিখরচায় কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের কৃত্রিম হাত-পা দিয়েও রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো হয়। পেন ম্যানেজমেন্টের রেডিয়োফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ)-সহ যাবতীয় আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখানে চিকিৎসা হয়।’’

বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও নির্দিষ্ট খরচের বিনিময়ে ফিজ়িক্যাল মেডিসিন রিহ্যাবিলিটেশনের পরিষেবা মেলে। কোনও ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে, কখনও বহির্বিভাগে এসেও চিকিৎসা করা যায়। ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস, কলকাতার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর (কলেজ অব ফিজ়িয়োথেরাপি অ্যান্ড অকুপেশনাল থেরাপি) সুচেতা সাহা জানান, দূর থেকে আসা রোগীর পরিজনেদের নির্দিষ্ট থেরাপির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে তাঁরা বাড়িতেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন। এতে যাতায়াতের ঝক্কি যেমন হয় না, তেমনই খরচও কম হয়। সুচেতা বলেন, ‘‘কোমা স্টিমুলেটিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রসূতিকে সুস্থ জীবনে ফেরানো সম্ভব হয়েছিল। গর্ভাবস্থার কিছু জটিলতার কারণে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে দীর্ঘ দিন তিনি কোমায় ছিলেন। বর্তমানে যাবতীয় কাজ করতে পারছেন তিনি।’’

অর্থাৎ, চিকিৎসকদের মতে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা গেলে দ্রুত রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা শয্যাশায়ী হয়ে যাওয়া মানেই জীবন থমকে যায় না, সেখান থেকে ফেরার পথ দেখায় পিএমআর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy