রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে একটি বেসরকারি গাড়ি। তার স্টিয়ারিংয়ের উপরে ঝুঁকে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। রক্তাক্ত তাঁর শরীরের বাঁদিক।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার রাতে কালীঘাট থানা এলাকার এসপি মুখার্জি রোডে গাড়ির ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখে পথচলতি মানুষ খবর দেন টহলদারি পুলিশকে। পুলিশ এসে অচৈতন্য ওই যুবককে উদ্ধার করে এসএসকেএম-এ ভর্তি করায়। সেখানেই চিকিৎসকেরা জানান, ছুরি মারা হয়েছে ওই যুবকের বুকে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ার নন্দীবাগানের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম বাবলু শর্মা।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাবলু একটি মোবাইল-অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সির চালক। রবিবার রাতে যাত্রী নিয়ে তিনি গার্ডেনরিচ যান। সেখানে যাত্রী নামানোর পরে নিজের মোবাইল-অ্যাপটি বন্ধ করে দেন। এর পরে রামনগর মোড় থেকে চেতলা যাবেন বলে দুই যুবক তাঁর গাড়িতে ওঠেন। পুলিশের দাবি, বাবলু তাদের জানিয়েছেন, ওই দুই যাত্রী চেতলায় না নেমে তাঁকে গার্ডেনরিচ নিয়ে যেতে বলেন। বাবলু যেতে অস্বীকার করলে কালীঘাটের কাছে ওই দুই যুবক তাঁর উপরে চড়াও হয় এবং তাঁকে ছুরি মেরে পালায়। সোমবার বাবলুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও চিকিৎসকদের অনুমতি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কালীঘাটের মতো এলাকায় রবিবার রাতের এই ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে রাতের কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে। পুলিশেরই একাংশ বলছে, ঘটনাস্থল কালীঘাটের এসপি মুখার্জি রোডে সারারাত গাড়ি চলাচল করে। তাই পুলিশি পাহারাও বেশি থাকে। কিন্তু রবিবার রাতে সেই পাহারা ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও লালবাজারের কর্তারা ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, শহরের নিরাপত্তার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, বাবলুর কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। মোবাইল অ্যাপ বন্ধ করে কেন তিনি বেআইনি ভাবে গাড়িতে যাত্রী তুললেন, তার কোনও উত্তর মেলেনি। এ ছাড়া, বাবলুর বাড়ি হাওড়ায়। ডিউটি শেষে তাঁর ধর্মতলা হয়ে হাওড়া ফেরার কথা। তাহলে কেন তিনি কালীঘাটের যাত্রী নিয়েছিলেন, তা-ও বাবলুর কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজার সূত্রে খবর, রবিবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল জানতে রামনগর মোড় ও ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভির ছবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, যাঁরা টহলরত পুলিশের মোটরসাইকেল বাহিনীকে খবর দিয়েছিলেন, তাঁরা শুধুমাত্র ওই গাড়িটিকেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। গাড়ি থেকে কাউকে পালিয়ে যেতে দেখেননি। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘রাতের শহরে ওই এলাকায় লোকজন থাকেন। বচসার জেরে কেউ কাউকে ছুরি মারলে সাধারণ ভাবে তার প্রতক্ষ্যদর্শী থাকা উচিত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে নেই। অথচ গাড়িতে রক্তের দাগ রয়েছে। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই গাড়িতেই ছুরি মারা হয় বাবলুকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy