Advertisement
E-Paper

জোব চার্নক-বিতর্কে এ বার রাজ্য হেরিটেজ কমিশন

রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদ্য চালু হওয়া ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শহরের নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী জোব চার্নকই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
বিহঙ্গ-দৃষ্টিতে কলকাতা। বিতর্ক এই মহানগরের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়েই। ফাইল চিত্র।

বিহঙ্গ-দৃষ্টিতে কলকাতা। বিতর্ক এই মহানগরের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়েই। ফাইল চিত্র।

কলকাতা-সহ রাজ্যের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব যাদের উপরে, এ বার সেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের বিরুদ্ধেই ইতিহাস ‘বিকৃত’ করার অভিযোগ উঠল। বিতর্কের কেন্দ্রে ফের জোব চার্নক।

রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদ্য চালু হওয়া ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শহরের নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী জোব চার্নকই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু সেই তথ্যের বিরুদ্ধে কমিশনকে চিঠি (ই-মেল) পাঠাল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ। পরিষদের বক্তব্য, এই তথ্য বিভ্রান্তিকর। শুধু তা-ই নয়, এটি সত্যের অপলাপ এবং সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের অবমাননাও বটে।

কমিশনের সদ্য চালু হওয়া ওয়েবসাইটে ‘হেরিটেজ প্লেসেস’-এর অধীনে ‘ডিস্ট্রিক্ট হেরিটেজ ইনফো’ নামে যে বিভাগটি রয়েছে, তার কলকাতা পর্বে শহরের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলা হয়েছে— ‘শহরের নথিভুক্ত ইতিহাসে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যদিও জোব চার্নকের নাম রয়েছে...’। আর এখানেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের সদস্যরা। পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, এই তথ্যের উল্লেখ করার অর্থই হল সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টের অবমাননা। কারণ, পরিষদের তরফে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, জোব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন। ২৪ অগস্ট কলকাতার জন্মদিনও নয়। এমনকি, সরকারি সমস্ত নথি থেকে শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চার্নকের নাম মুছে দিতেও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। দেবর্ষির কথায়, ‘‘সেখানে নথিভুক্ত ইতিহাসে শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম রয়েছে জোব চার্নকের, এই তথ্য যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর।’’

বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। কলকাতার ইতিহাস সম্পর্কে আরও অনেক ভুল তথ্য রয়েছে বলে কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছে পরিষদ। কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা— এই তিনটি গ্রাম স্থানীয় জমিদারদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কিন্তু পরিষদের বক্তব্য, এই তথ্যও ঠিক নয়। দেবর্ষির কথায়, ‘‘বার্ষিক ১৩০০ টাকা খাজনার বিনিময়ে আমাদের পরিবার শুধু ওই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ত্ব (রাইট টু রেন্ট) ব্রিটিশদের দিয়েছিল। বিক্রি তো করা হয়ইনি, এমনকি জমিদারসত্ত্বও দেওয়া হয়নি।’’ পরিষদ সূত্রের খবর, লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে ওই লিজ-চুক্তির প্রতিলিপি আনিয়েছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। তা বর্তমানে প্রদর্শিত হচ্ছে বড়িশায় সাবর্ণ সং‌গ্রহশালায়। পরিষদের আরও দাবি, কলকাতা গড়ে ওঠার পিছনে রায়চৌধুরী পরিবারের ভূমিকাও ঠিক ভাবে তুলে ধরা হয়নি কমিশনের ওয়েবসাইটে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে হেরিটেজ কমিশন। তাদের তরফে বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটে বর্তমানে যা লেখা রয়েছে, তা প্রচলিত ধারণার প্রতিফলন মাত্র। এ প্রসঙ্গে গবেষণালব্ধ তথ্য ওয়েবসাইটে দ্রুত তুলে ধরা হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের চিঠি পেয়েছি। ওয়েবসাইটে যে তথ্যবিভ্রান্তি হয়েছে, তা অবিলম্বে সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

State Heritage Commission Kolkata Job Charnock
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy