Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Pavlov Mental Hospital

Pavlov Hospital: ভিতরে মানুষ থাকতে পারে না, পাভলভ ঘুরে বললেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন

হাসপাতালের পরিকাঠামোগত খামতির কথা উল্লেখ করে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন লীনা। তিনি বলেন, হাসপাতালে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো খুব জরুরি।

হাসপাতাল পরিদর্শনে লীনা

হাসপাতাল পরিদর্শনে লীনা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২২ ১৯:৫১
Share: Save:

পাভলভ হাসপাতাল নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণকেই মান্যতা দিল রাজ্য মহিলা কমিশন। কলকাতায় মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভ হাসপাতাল ঘুরে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পাভলভ পরিদর্শনের পর তাঁর মন্তব্য, হাসপাতালের বাইরেটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও ভিতরটা মানুষ থাকার যোগ্য নয়। হাসপাতালে পরিকাঠামোগত ভাবে কোথায় কী ঘাটতি রয়েছে, তা নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন লীনা। একই সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি চারটি পরামর্শও দিয়ে এসেছেন। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই পাভলভ হাসপাতালের সুপারের পদ থেকে গণেশ প্রসাদকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মৃগাঙ্ক মৌলী করকে। তিনি হাওড়ায় ডিএমসিএইচও-তে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পাভলভে যান লীনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ আধিকারিকেরা। ছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের কর্তারাও। হাসপাতাল চত্বর ঘুরে লীনা বলেন, ‘‘হাসপাতালের যা পরিকাঠামো, তার নিরিখে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কর্মীও কম। আগে যা দেখে গিয়েছিলাম, এখনও তা-ই রয়েছে। তবে রোগীদের বেঁধে রাখা বা আটকে রাখার মতো দৃশ্য দেখিনি। হাসপাতালের পুরনো বিল্ডিংকে মানুষের থাকার যোগ্য করে তুলতে হবে। বাইরেটা আগের তুলনায় খানিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভিতরটা একেবারেই নয়। আমি সুপারকেও বলেছি, ভিতরে মানুষ থাকার যোগ্য নয়। মানুষ থাকার যোগ্য করে তোলা উচিত।’’

হাসপাতালের পরিকাঠামোগত খামতির কথা উল্লেখ করে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন লীনা। তিনি বলেন, ‘‘যে সব রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন অথচ পরিবার ফিরিয়ে নিতে চাইছে না, তাঁদের সেফ হোমে স্থানান্তরিত করা হোক।’’ লীনা জানান, ভর্তি থাকা রোগী এবং হাসপাতালের কিছু কর্মীর সঙ্গে কথা বলে সুস্থ হয়ে ওঠাদের একটি তালিকাও চেয়ে নিয়েছেন। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের (সুস্থদের) অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করবেন তিনি। মানসিক চিকিৎসার জন্য আদালতের নির্দেশে অনেককেই পাভলভ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁদের জন্য যাতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়, সেই পরামর্শ দেন লীনা। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো খুব জরুরি। এ ছাড়াও অনেক জায়গায় ফেন্সিং নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা মেরামত করা দরকার।’’

চলতি বছরের এপ্রিল এবং মে মাসে পাভলভ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। তাঁদের চোখে ধরা পড়ে হাসপাতালের কিছু অমানবিক ছবি। পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে উঠে এসেছে, হাসপাতালের অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে দু’টি মাত্র ঘরে ১৩ জন রোগীকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই ঘরটির অবস্থাও বিপজ্জনক। হাসপাতালে খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, মানসিক অসুস্থদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ‘ডায়েট কমিটি’ নেই হাসপাতালে। নোংরা বাসনে রোগীদের খাবার পরিবেশন করা হয়। রোগীদের দেখার জন্য যে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেন না। হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি বলেও অভিযোগ ওঠে।

শুধু তাই নয়, গত বছর জুলাইয়ে চিকিৎসাধীন এক নাবালিকা রোগী অন্তর্ধানের তদন্তে নেমে পাভলভ হাসপাতালের পরিকাঠামোগত কিছু খামতির কথা তুলে ধরে তপসিয়া থানার তদন্তকারী অফিসার যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তা-ও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টারের কোনও অফিসই নেই। এমনকি, হাসপাতালের আবাসিকদের মধ্যে কারা চিকিৎসাধীন এবং কাদের পুলিশি পাহারার মধ্যে থাকার কথা, তা উল্লেখ করে লিখে রাখার মতো কোনও রেজিস্টারও নেই ওয়ার্ড অফিসে। তদন্তে উঠে আসে, গোবরা রোডের দিকের পাভলভ হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের উপরে থাকা তারের জাল অনেক জায়গাতেই ছেঁড়া। ওই প্রাচীরের সঙ্গে যে পাইপলাইন রয়েছে, তা বেয়ে পাঁচিল টপকানো সম্ভব। কয়েক জন আবাসিকও ওই ফাঁক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তা-ও উঠে এসেছিল তদন্তকারী অফিসারের রিপোর্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pavlov Mental Hospital State Women Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE