Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Kolkata fire

কেউ আটকে কি না জানতেই লিফটে ওঠেন এএসআই

সহকর্মীদের কাছে প্রিয় অমিতের মৃত্যুতে শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, শোকের ছায়া নেমেছে বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরে তাঁর পাড়াতেও।

বাড়ি থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের পথে অমিত ভাওয়ালের স্ত্রী এবং ছেলে। মঙ্গলবার।

বাড়ি থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের পথে অমিত ভাওয়ালের স্ত্রী এবং ছেলে। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

শিবাজী দে সরকার, আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১ ০৬:৪৩
Share: Save:

দুপুরের শিফটে কাজে যোগ দিয়ে বিকেলে হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি-কে আগুন লাগার খবরটা দিয়েছিলেন তিনিই। সহকর্মীকে নিয়ে তড়িঘড়ি স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আগুনে কেউ আটকে পড়েছেন কি না, তা জেনে তাঁদের উদ্ধার করতে সকলের আগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই কাজ করতে গিয়েই লিফটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই অমিত ভাওয়ালের (৪৫)।

২০১৭ সালে হেয়ার স্ট্রিট থানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন অমিত। ওই থানা এলাকায় দুপুরের পরে কোনও ঘটনার খবর এলে অপরাধ দমনের নজরদারি আধিকারিক হিসেবে প্রথমে সেখানে পৌঁছে যাওয়াই ছিল তাঁর কাজ। সেই মতো সোমবার সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরেই তিনি ফোন করে হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি-কে জানান, স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে। আর এক সহকর্মী সঞ্জীব সরকারকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান অমিত।

মঙ্গলবার সঞ্জীব বলেন, ‘‘অমিত স্যরকে আমি বাইকে করে সেখানে নিয়ে যাই। স্যর প্রথমেই উপরে কেউ আটকে আছে কি না তা দেখার জন্য লিফটে ওঠেন, যাতে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারেন।’’ সঞ্জীবের দাবি, তিনি অমিতকে লিফটে যেতে নিষেধ করেছিলেন। এ দিন এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে অমিতের সহকর্মীরা জানালেন, দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটকে থাকা মানুষকে উদ্ধার করতে সব সময়েই এগিয়ে যেতেন অমিত। আগেও একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি একই ভাবে বহু মানুষকে উদ্ধার করেছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে ডালহৌসির একটি বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের সময়েও পৌঁছে গিয়েছিলেন অমিত।

সহকর্মীদের কাছে প্রিয় অমিতের মৃত্যুতে শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, শোকের ছায়া নেমেছে বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরে তাঁর পাড়াতেও। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, স্ত্রী পিঙ্কি এবং দশ বছরের ছেলে অনীককে নিয়ে গত ছ’বছর ধরে দেশবন্ধুনগরের ফ্ল্যাটে থাকতেন অমিত। অনীক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। অমিত আদতে আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা। সেখানে তাঁর মা এবং দাদা-দিদি রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে দেশবন্ধুনগরের লালবাড়ি মোড়ের কাছে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারে বাড়ির জানলার শিক ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক বাসিন্দা। একই বহুতলের বাসিন্দা, অমিতের বন্ধু নিতাই দত্ত বলেন, ‘‘রাতে অমিতের মৃত্যুর খবর বাড়িতে জানাইনি। শুধু বলেছি, আগুন নেভাতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এসএসকেএমে চিকিৎসা চলছে।’’

তবে সকাল থেকে আত্মীয়দের ফ্ল্যাটে আসা, কান্নাকাটি দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন পিঙ্কি। দুপুরে তাঁকে জানানো হয়, লালবাজারে যেতে হবে তাঁকে। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নিতাইবাবু জানাচ্ছেন, বহুতলে পিকনিক করা থেকে শুরু করে সরস্বতী পুজো, দোলের আয়োজন— সবেতেই এগিয়ে আসতেন অমিত। মূলত তিনিই ছিলেন উদ্যোক্তা। নিতাইবাবুর কথায়, ‘‘গত বছর যখন অমিতের করোনা হয়েছিল, তখন ওর পরিবারের কেউ এখানে ছিল না। নিজেই অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে গিয়েছিল।’’

মঙ্গলবার ভোরে অমিতের দেহের ময়না-তদন্ত হয়। বেলা ১২টা নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভিড় করেছেন পুলিশকর্মীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পৌঁছন অমিতের স্ত্রী ও ছেলে। সঙ্গে ছিলেন পিঙ্কির বোন এবং অমিতের এক জামাইবাবু। সেখানে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া মিটে যাওয়ার পরে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজার এবং হেয়ার স্ট্রিট থানায়। লালবাজারে গান স্যালুট দিয়ে কলকাতা পুলিশের তরফে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় অমিতকে। হেয়ার স্ট্রিট থানায় অমিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর সহকর্মীরা। এর পরে এ দিনই কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Kolkata fire Strand Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE