Advertisement
E-Paper

অঞ্জলির ইচ্ছেপূরণে নিজেরাই মূর্তি গড়ছে পথশিশুরা

মা দুর্গার কাছে অনেক কিছু আমরা চাইতাম— কলকলিয়ে বলে ওঠে সুজিত, রিয়া, অমৃতারা। কিন্তু ওই ইচ্ছে আটকে থাকত ভাবনাতেই।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
প্রস্তুতি: প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

ওদের ঘর পথের ধারেই। কিন্তু পুজোর দিনের চোখ ধাঁধানো আলো ওদের ঘরে ঢুকতে পারে না। উত্তর কলকাতার বাগবাজারের ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ের ধারে প্লাস্টিক আর দরমার দেওয়াল শুষে নেয় সব আলো। নতুন কাপড় পরে যখন সবাই অঞ্জলি দিতে যেত, ওরা মায়ের আঁচলের আড়ালে দাঁড়িয়ে এত দিন তা শুধুই দেখত। কেন তোরা অঞ্জলি দিস না? খুদেদের উত্তর, আমাদের সবার তো নতুন জামা হয় না! তাই মণ্ডপে যেতে ইচ্ছে করে না।

তবে কী ইচ্ছে করে? যদি নিজেরাই দুর্গাপুজো করতে পারতাম! তা হলে আমরা সবাই মিলে অঞ্জলি দিতে পারতাম। মা দুর্গার কাছে অনেক কিছু আমরা চাইতাম— কলকলিয়ে বলে ওঠে সুজিত, রিয়া, অমৃতারা। কিন্তু ওই ইচ্ছে আটকে থাকত ভাবনাতেই। কোনও ভাবে এই ইচ্ছের কথা জানতে পেরেছিলেন বাঙুরের বাসিন্দা, শেয়ার কারবারি মহেন্দ্র অগ্রবাল ও তাঁর স্ত্রী রেশমি অগ্রবাল। বাগবাজারে সারদা মায়ের বাড়িতে যাতায়াতের সূত্রেই সেই পাড়ার খুদেদের সঙ্গে তাঁদের পরিচয়। এর পরে পাশে দাঁড়াতে দেরি করেননি ওঁরা। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। সাধের পুজো। তাই ‘ইচ্ছেপূরণ’ ছাড়া অন্য কোনও থিম ওরা ভাবতেই পারেনি।

মাটির ভাঙা ভাঁড় দিয়ে নিজেরাই থিম সাজাচ্ছে ওরা। নারকেল দড়ি, রঙিন কাগজ দিয়ে বানাচ্ছে ফুল-সহ নানা জিনিস। বড় পোস্টারে দুর্গার ছবি এঁকে, রং করে ওরা নিজেদের দাবি জানাচ্ছে মায়ের দরবারে। এক ফুটের দুর্গামূর্তি তৈরি করছে ওরাই। এ জন্য কুমোরটুলিতে গিয়ে চার কিশোর মৃৎশিল্পী মালা মালাকারের কাছে দশ দিনের পাঠও নিয়েছে।

শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সুজিত দাস জানাল কী ভাবে ওরা থিম সাজাচ্ছে। একই রকম উৎসাহ কাশিমবাজার সাবিত্রী বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রিয়া দাসের। জানাল, বন্ধুরা মিলে দিনরাত আঁকছে, রং করছে। আর এক খুদে দেব দাস বলল, তারা পাঁচ জনে মূর্তি তৈরি করছে। এখনও কিছুটা কাজ বাকি।

গত ১৮ বছর ধরে বাগবাজার এলাকার দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করছে স্থানীয় একটি ‘নন-ফর্মাল’ স্কুল, বাগবাজার সারদা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওদের সঙ্গে রাত জাগছেন ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক স্বপন ভুঁইয়া। সানমাইকা, প্লাইউ়ড, আঠা, থার্মোকল, ভাঁড় কিনে সাহায্য করছেন অগ্রবাল দম্পতি।

কিন্তু ফুটপাতে পুজো করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তাই ওই ছোট্ট স্কুল ঘরই ওদের সাধের মণ্ডপ হিসেবে সেজে উঠছে।কাজের তুমুল ব্যস্ততার ফাঁকেই এক খুদে কর্মকর্তা পুজো দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে গেল। সেই সুরে সুর মেলাল অন্য খুদেরাও।

Street Children Durga Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy