Advertisement
E-Paper

বই-খাতা ছিঁড়ে দিচ্ছে ভূত?

নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের অনুপস্থিতিতে তাদের বই-খাতা ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার সেই ঘটনা যাতে কাউকে না জানানো হয় তার জন্য মুখোশ পরে ভয় দেখানোর পাশাপাশি মারধরও করা হচ্ছে। এমনকী, রীতিমতো চিরকুট লিখে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, কারা ঘটাচ্ছে এই কাণ্ড? উত্তর নেই কারও কাছে! এ কোনও গোয়েন্দা সিনেমা নয়। কামারহাটির আড়িয়াদহের একটি স্কুলে বেশ কিছু দিন ধরে ঘটছে এমন অদ্ভুত ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ২২:৩৩
লেখা হচ্ছে স্কুল বন্ধের নোটিস।—নিজস্ব চিত্র।

লেখা হচ্ছে স্কুল বন্ধের নোটিস।—নিজস্ব চিত্র।

নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের অনুপস্থিতিতে তাদের বই-খাতা ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার সেই ঘটনা যাতে কাউকে না জানানো হয় তার জন্য মুখোশ পরে ভয় দেখানোর পাশাপাশি মারধরও করা হচ্ছে। এমনকী, রীতিমতো চিরকুট লিখে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, কারা ঘটাচ্ছে এই কাণ্ড? উত্তর নেই কারও কাছে!

এ কোনও গোয়েন্দা সিনেমা নয়। কামারহাটির আড়িয়াদহের একটি স্কুলে বেশ কিছু দিন ধরে ঘটছে এমন অদ্ভুত ঘটনা। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল গোটা স্কুল চত্বর। উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রীই এই কাণ্ড করছে— এই সন্দেহে তাদের বেধড়ক পেটানোরও অভিযোগ উঠল নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। শেষমেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করতে হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। আর সব শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পঠনপাঠন বন্ধ করার নোটিস ঝুলিয়েছেন।

আড়িয়াদহের জয়কৃষ্ণ ঘোষাল রোডে সর্বমঙ্গলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা। পুলিশ ও স্কুল সূত্রে খবর, গরমের ছুটির পর স্কুল খুলতেই সমস্যার শুরু। ঘটনার সূত্রপাত গত ১৯ জুন। ওই দিন পঞ্চম শ্রেণির ‘খ’ বিভাগের পড়ুয়ারা টিফিনের পর এসে দেখে, অধিকাংশেরই বই-খাতা ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। কারা করল এই কাণ্ড? উত্তর নেই কারও কাছে। এর পরে ফের ২৫ জুন একই ঘটনা ঘটে।

ওই দিন লাইব্রেরি পিরিয়ডের শেষে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা ফিরে এসে দেখে তাদের প্রত্যেকেরই বই-খাতা ছেঁড়া আবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘটনাটি জানতে পেরে ওই ছাত্রীদের অভিভাবকেরা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ জানান। সেই মতো এ দিন সমস্ত অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত হয় বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ জানানো হবে। কয়েক দিন পরেই পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হবে।

স্কুলের পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রী ১৯ জুনের পর থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করছিল তাদের ক্লাসে বিভিন্ন চিরকুট পাওয়া যাচ্ছে। তাতে ‘বই না আনলে গলা কেটে দেব’— এমন হুমকিও লেখা থাকছে। পাশাপাশি, ওই সব ছাত্রীদের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই তারা তিন-চার জন শাড়ি পরা দিদিকে (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের পোশাক) মাস্ক পরে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে। তারা নিচু ক্লাসের ছাত্রীদের মারধরও করে বলে অভিযোগ। আবার ‘কাউকে কিছু বলবি না’ বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আর সমস্ত ঘটনাই ঘটছিল টিফিন, কম্পিউটার, লাইব্রেরি পিরিয়ড কিংবা মিডডে মিল খেতে যাওয়ার সময়।

স্কুল সূত্রে খবর, এ দিন টিফিন পিরিয়ডে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ— সমস্ত ক্লাসে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, টিফিন পর্ব শেষ হতেই পঞ্চম শ্রেণির ‘ক’ ও ‘গ’ বিভাগ, ষষ্ঠ শ্রেণির ‘খ’ বিভাগ, সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ বিভাগের পড়ুয়ারা এসে দেখে তাদের ক্লাস ঘরের তালা খোলা। আর মেঝেতে সবার বই খাতা ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। এর পরে স্কুল ছুটি হতেই ওই পড়ুয়ারা তাদের অভিভাবকদের সব জানায়। অভিযোগ, সেই সময় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরাও বেরোচ্ছিল। তাদের উপর চড়াও হন ওই অভিভাবকেরা। খবর পেয়ে স্কুলে চলে আসেন ওই উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের অভি‌ভাবকরাও। দু’তরফে শুরু হয় বাক্‌বিতণ্ডা, মারামারি। প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে ধরে শুরু হয় ঝামেলা। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীদের অবিভাবকেরা দাবি জানান, উঁচু ক্লাসের প্রতিটি ছাত্রীর তল্লাশি করতে হবে। দেখতে হবে কে বা কারা এই কাজ করছে। অন্য দিকে, উঁচু ক্লাসের অভিভাবকদের প্রশ্ন, কেন কোনও কিছু প্রমাণিত না হতেই তাঁদের মেয়েদের মারধর করা হচ্ছে? শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্কুলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী।

পুলিশ সূত্রে খবর, স্কুলে এসে সকল পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বের করে দিয়ে মেন গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সন্ধ্যায় স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান শিক্ষিকা সিদ্ধান্ত নেন আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হবে। স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক দেবী ঘোষাল বলেন, ‘‘জীবনে এমন ঘটনা শুনিনি। মনে হচ্ছে কেউ বদমায়েশি করছে। তবে বাইরের কেউ তো আর স্কুলে ঢুকে এ কাজ করবে না। যে সব বই ছেঁড়া হচ্ছে তা সরকারি বই। তাই বিষয়টা নিয়ে একটা সমাধান সূত্র না বেরোনো পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Ariadaha School Student Kamarhati polic mask
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy