ভীত: ঘটনার পরে রুবিয়া। সোমবার। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া রুবিয়া খাতুন। সোমবার কিছুটা সুস্থ বোধ করায় স্কুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু প্রথম পিরিয়ডের পরেই অসুস্থ বোধ করায় ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্রী দিদির সঙ্গে বাড়ি ফিরবে বলে স্কুলের বাইরে সবে পা দিয়েছিল রুবিয়া। আচমকাই বাইরের মাঠে শুরু হয় বোমাবাজি। ভয় পেয়ে দিদির সঙ্গে ছুটে ফের স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়ে সে। চোখের সামনে একের পর এক বোমা ফাটায় সেই শব্দে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। আতঙ্কে কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যায় তার।
স্কুল থেকে খবর দেওয়া হয় ওই ছাত্রীর কেউকেপাড়ার বাড়িতে। কাকা মফিজুল মণ্ডল দ্রুত স্কুলে পৌঁছে যান। চেষ্টা করেও তিনি ও স্কুলের শিক্ষিকারা রুবিয়াকে কথা বলাতে পারেননি। মেয়েটির চোখেমুখে তখন আতঙ্ক।
মফিজুল ভাইঝিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে স্বাভাবিক হয় রুবিয়া। তবে আতঙ্ক এখনও কাটেনি তার। মফিজুল বলেন, ‘‘কোন ভরসায় মেয়েদের স্কুলে পাঠাব? এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ সব বন্ধ হওয়া উচিত। পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনও বোমাবাজি হয়েছিল।
কারা করল বোমাবাজি?
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ছিল দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন। যা নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল রবিবার রাত থেকেই। রুবিয়ার স্কুলের কাছে বিডিও অফিসে চলছিল সেই বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া। শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়েছিলেন। ছিল প্রচুর পুলিশ।
বেলা ১২টা নাগাদ হঠাৎই স্কুলের সামনের মাঠে শুরু হয় বোমাবাজি। পুলিশ অবশ্য দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থল থেকে ১১টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে ছাত্রীরা তখন ক্লাসের মধ্যে গল্পগুজব করছিল। কেউ কেউ ক্লাসের বাইরে ইতিউতি ঘোরাঘুরি করছিল। বোমার শব্দে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ছাত্রীরা। শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি, কান্নাকাটি। মিড-ডে মিল রান্না করছিলেন ববিতা দাস নামে এক মহিলা। বোমার শব্দ শুনে পালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়ায় আহত হয়েছেন তিনি। শিক্ষিকারাও ভয় পেয়ে যান। আশপাশের এলাকার অভিভাবকেরা স্কুলে ছুটে আসেন। মেয়েদের বাড়ি নিয়ে যান তাঁরা। শেষমেশ শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বুঝিয়ে পুরো স্কুল করান।
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রচণ্ড বোমাবাজি হয়েছে। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’’ এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মোফিদুল হক বা মিন্টু সাহাজি। তিনি বলেন, ‘‘যারাই স্কুলের সামনে বোমাবাজি করে থাক, খুব অন্যায় করেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দলের জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy