কলকাতা পুরসভার কিছু স্কুলে পড়ুয়াদের নিরামিষ মিড-ডে মিল দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার বেশ কিছু পুর স্কুলে নিরামিষ খাবার দেওয়া চলছে বছরের পর বছর। বিষয়টি পুরসভার কর্তাদের কানে তোলা হলে তাঁদের দাবি, এ নিয়ে কোনও অভিযোগ পাননি তাঁরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে স্কুলপড়ুয়াদের যে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, তাতে প্রতি সপ্তাহে ডিম থাকাটা বাধ্যতামূলক। প্রাণীজ প্রোটিন হিসেবেই ডিম দেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভার অধীনে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৩৩৫টি। তার মধ্যে রয়েছে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলিও। পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, মূলত তিনটি কমিউনিটি কিচেন থেকে পুরসভার বেশির ভাগ স্কুলে খাবার যায়। যার মধ্যে উত্তর কলকাতার একটি কিচেন থেকে সরবরাহ করা হয় নিরামিষ খাবার। প্রায় ৮০টির মতো স্কুলের পড়ুয়ারা ওই নিরামিষ খাবার পায়। এই বৈষম্য ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
দেশের বেশ কিছু রাজ্যে অবশ্য মিড-ডে মিলে প্রাণীজ প্রোটিন দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় শুধুই নিরামিষ খাবার। তার একটা বড় কারণ, ওই সমস্ত রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই নিরামিষাশী। কিন্তু কলকাতার মতো শহরে, যেখানে আমিষাশীর সংখ্যাই বেশি, সেখানে কেন নিরামিষ খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, স্কুলশিক্ষা দফতরের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে প্রতি সপ্তাহেই ডিম দেওয়া হয়। পুরসভার অন্য স্কুলগুলিতেও সপ্তাহে দু’বার ডিম পায় পড়ুয়ারা।
তা হলে এই বৈষম্য কেন?
পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতায় পুরসভার স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল সরবরাহ করে একটি ধর্মীয় সংগঠন। ওই সংগঠন আমিষ খাবার তৈরি করে না। তাই সেখান থেকে যে মিড-ডে মিল সরবরাহ করা হয়, তাতে ডিম বা কোনও প্রাণীজ প্রোটিন থাকে না। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই সংগঠন গত সাত-আট বছর ধরেই মিড-ডে মিল সরবরাহ করে চলেছে। কিন্তু এত দিন তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।
এ বিষয়ে পুরসভার এক কাউন্সিলর জানান, বাম বোর্ড ক্ষমতায় থাকাকালীন মিড-ডে মিল সরবরাহের কাজ দেখতে হায়দরাবাদে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল। সেখানে একটি বড় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন পুর প্রতিনিধিরা। সেই সংস্থাকেই পুর স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল প্রকল্প চালানোর বরাত দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন পুরকর্তারা। কিন্তু ওই সংস্থা জানিয়ে দেয়, তারা আমিষ খাবার তৈরি করে না।
তা হলে এখন নিরামিষ খাবার নেওয়া হচ্ছে কেন? এত বছর ধরে নিরামিষ খাওয়ানোর বিষয়টা পুর প্রশাসনের নজরেই বা আসেনি কেন?
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমি আসার আগেই ওই চুক্তি হয়েছে। তাই বরাত দেওয়ার সময়ে কী কথা হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের সুনামের কথা তো সকলেই জানেন। তাই তাদের খাবারের মান যে ভাল, তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।’’ হয়তো সে সব ভেবেই ওই সংগঠনকে বাছা হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘নিরামিষ খাওয়ানো হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে তা নিয়ে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। এমনকি, স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছেও কেউ কিছু জানাননি।’’ তিনি জানান, কেউ কোনও অভিযোগ করলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।