অপেক্ষায়: ইট পেতে পুজোর জায়গা ‘দখল’। শুক্রবার, সুভাষ সরোবরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
জাতীয় সরোবরের তকমা নেই। কিন্তু জল রয়েছে। রয়েছে জীববৈচিত্র। জলাশয় ঘিরে রয়েছে গাছপালা। তা সত্ত্বেও বৈষম্যমূলক ব্যবহার সহ্য করতে হচ্ছে পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরকে। পরিবেশ আদালতের রক্ষাকবচে যখন দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের সামনে সুযোগ রয়েছে ছটের দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার, তখন পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবর প্রহর গুনছে দূষণের বিষ পান করার।
শনি ও রবিবার ছট। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করে দূষণ ঠেকাতে শুক্রবার রাত থেকেই রবীন্দ্র সরোবরের সব গেট বন্ধ করে দেবে কেএমডিএ। আর ঠিক বিপরীত ছবি দেখা যাবে সুভাষ সরোবরে। জল ভরে যাবে আবর্জনায়। শুক্রবার থেকেই পুণ্যার্থীরা সরোবর চত্বরে ইট পেতে পুজোর জায়গার ‘দখল’ রাখা শুরু করেছেন।
পরিবেশকর্মীদের একটি বড় অংশ ওই জলাশয়ে ছট বন্ধ করার জন্যও কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জাতীয় সরোবরের মর্যাদা না পাওয়ার ফলেই সুভাষ সরোবরের দূষণ নিয়ন্ত্রণের ভাবনা নেই প্রশাসনের।
যদিও কেএমডিএ-র ব্যাখ্যা, জাতীয় সরোবর নয়। আর সেখানে ছটের পুজো নিয়ে আদালতের কোনও নিষেধাজ্ঞাও নেই। কেএমডিএ-র আধিকারিক সুধীন নন্দী বলেন, ‘‘ছটের পরেই দ্রুত বাড়তি কর্মী নিয়োগ করে জলাশয় পরিষ্কার করা হবে।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘উত্তর এবং পূর্ব কলকাতার অন্যতম ফুসফুস সুভাষ সরোবর। সেটিও যাতে জাতীয় সরোবরের তকমা পায় তার চেষ্টা চলছে। সুতরাং জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধে ওই সরোবরেও ছটপুজো বন্ধের উপরে নিষেধাজ্ঞা আনা প্রয়োজন।’’ তিনি দাবি করেন, রাজারহাট-নিউ টাউন তৈরির সময়ে অনেক গাছ কাটা পড়েছিল। তখন অনেক পাখি সেখান থেকে এসে সুভাষ সরোবরে আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রতি বছরই পূর্ব এবং উত্তর কলকাতার অসংখ্য পুণ্যার্থী সুভাষ সরোবরে ছটপুজো করতে যান। আধিকারিকেরা জানান, দূষণ প্রতিরোধে ছটপুজোর পরে ফুল এবং বিভিন্ন উপচার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পুণ্যার্থীরা রাখতে পারেন। তা ছাড়াও জলাশয়ের বদলে ঘাটের কাছে সিঁড়িতে নেমে যাতে পুণ্যার্থীরা পুজো করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রায় ৪০ একরের সুভাষ সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-কে দিয়েছে কেএমডিএ। ওই সংগঠনের সদস্য সুব্রত সেনের অভিযোগ, ‘‘ছটপুজোর পরে জলাশয়ে পুজোর উপচার পড়ে থাকায় মাছ ও জলজ প্রাণীদের ক্ষতি হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পুলিশ এবং পুরসভাকে অনেক বারই জানিয়েছি।’’ তাঁর অভিযোগ, গত জুলাই মাসেও সরোবরে মাছ মরে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, বারবারই সুভাষ সরোবরের জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু কোনও দূষণ পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy