Advertisement
E-Paper

নীতি জলে দিয়ে সুরঞ্জনের জায়গায় সেই ‘বহিরাগত’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক গোলমালের পরে যাদবপুর বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে দোটানায় তিনি। শুক্রবার নিজেই বলেছেন, ‘যাদবপুরে যাব কি না, তা এখনও ঠিক করিনি।’ কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুরঞ্জন দাসের উত্তরসূরি খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যে সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৯
সুরঞ্জন দাস ও সুগত মারজিত

সুরঞ্জন দাস ও সুগত মারজিত

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক গোলমালের পরে যাদবপুর বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে দোটানায় তিনি। শুক্রবার নিজেই বলেছেন, ‘যাদবপুরে যাব কি না, তা এখনও ঠিক করিনি।’ কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুরঞ্জন দাসের উত্তরসূরি খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যে সরকার।

অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে যাঁর নাম আপাতত সামনে এসেছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন। সেই অর্থে ‘বহিরাগত’ই। এবং শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তিনি হলেন অর্থনীতির শিক্ষক সুগত মারজিত।

সুগতবাবু কিছু দিন আগেও উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখনও রাজ্য যোজনা পর্ষদের সদস্য তিনি। শনিবারের খবর, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নাম ঠিক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে প্রাথমিক ভাবে তা জানান। তবে সুগত মারজিত দেশে নেই। তাই তাঁর চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া এখনও বাকি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আচার্যের চিঠি পেশ হয়েছে সিন্ডিকেটে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইন অনুযায়ী, কোনও উপাচার্য পদত্যাগ করলে বা তাঁকে অব্যাহতি দিতে হলে আচার্যের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের ভিত্তিতে ছ’মাসের জন্য কাউকে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা যায়। তার পর স্থায়ী উপাচার্য ঠিক করতে সার্চ কমিটির কাজ শুরু হয়। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়াতে পারেন আচার্য। তাই সুরঞ্জনবাবুর জায়গায় সুগতবাবুকে বসানো হলে বিধি ভঙ্গ হয় না।

কিন্তু বিধির উপরে থাকে নৈতিকতা। সেখানে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগের এই পদ্ধতি কতদূর বাঞ্ছিত, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-অধ্যাপকেরা অনেকেই বলছেন, অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যকে বাইরে থেকে আনার যুক্তি নেই। তা হলে সহ-উপাচার্য পদ রাখার দরকার কী! রাষ্ট্রপতি কোনও কারণে দায়িত্ব সামলাতে অপারগ হলে আপৎকালীন ব্যবস্থায় উপ-রাষ্ট্রপতি আছেন। প্রধানমন্ত্রী না পারলে মন্ত্রিসভা সামলানোর জন্য থাকেন উপ-প্রধানমন্ত্রী বা প্রবীণতম অন্য কোনও মন্ত্রী। তা হলে উপাচার্যের পদ হঠাৎ খালি হলে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব সামলাতে বাইরে থেকে লোক আনার যুক্তি কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে এমন বিধান কেন থাকবে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের ঘটনা বারবারই ঘটছে। তাই নয়, অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যদের অনেককেই পরবর্তী কালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে স্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তৃণমূলের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আসলে অন্তর্বর্তী উপাচার্য পদে কিছুটা সড়গড় হলে তাঁর পক্ষে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে কাজ করা সুবিধাজনক হয়। এটাই ভাবনা।’’ এর পিছনে ‘অন্য রাজনীতির’ ছায়া দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বেছে বেছে এমন লোকদের অন্তর্বর্তী উপাচার্য পদে বসানো হয়, যাঁরা স্থায়ী উপাচার্য হিসেবেও সরকারের ‘ছত্রচ্ছায়া’ এড়িয়ে মাথা তোলার ঝুঁকি বড় একটা নেন না।

উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই আসে অভিজিৎ চক্রবর্তীর নাম। আইআইআইএসটি-শিবপুর থেকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে যাদবপুরে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই স্থায়ী উপাচার্য হন। প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে তাঁর সরে যাওয়া কার্যত ইতিহাস হয়ে রয়েছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে প্রথমে আসেন অচিন্ত্য বিশ্বাস। তাঁর পদত্যাগের পরে রবীন্দ্রভারতী থেকে আসেন গোপাল মিশ্র এব‌ং স্থায়ী হন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শমিতা মান্না, বর্ধমানে স্মৃতিকুমার সরকার প্রমুখও অন্তর্বর্তী থেকে স্থায়ী

উপাচার্য হয়েছেন। ব্যতিক্রম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রভারতীতে যাওয়া চিন্ময় গুহ। তিনি স্থায়ী উপাচার্য হননি।

প্রশ্নটা অস্থায়ী উপাচার্যদের স্থায়ী করার নয়। প্রশ্ন হল, অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য বাইরে থেকে আনা হবে কেন?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে সহ-উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেন, এটাই রীতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরের যে কারও থেকে ভাল জানেন।

আর রুটিন কাজের বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট তো রয়েইছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্রসরকারও মনে করেন, অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এই দায়িত্ব সহ-উপাচার্যকেই দেওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে সহ-উপাচার্য নেই, সেখানে প্রবীণতম শিক্ষককেই এই দায়িত্ব দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘নীতিগত ভাবে সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু এ রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তা মানা হচ্ছে না।’’

Jadavpur University Suranjan Das calcutta university abpnewsletters Sugata Marjit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy