ব্যর্থ: এই রেলিংও আটকাতে পারেনি হেমন্তকে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়া আটকাতে ‘কড়া দাওয়াই’ ভাবা হয়েছিল সেতুর গায়ের উঁচু রেলিং। সে জন্য খরচ করা হয়েছিল প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা। তবে মোক্ষম সময়ে সেই রেলিংই কাজে লাগল না শুক্রবার সন্ধ্যায়। দিব্যি রেলিং টপকে গিয়ে রেলিংকে হাতিয়ার করেই পুলিশের সঙ্গে কার্যত ‘চোর-পুলিশ’ খেললেন এক যুবক। যা আদতে উঁচু রেলিংয়ের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ফলে নতুন দাওয়াই কী হতে পারে, তা ভাবতে হচ্ছে হাওড়া সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে।
১৯৪৩ সালে তৈরি হাওড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের। শুক্রবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার বন্দরের এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘‘চার ফুট থেকে বাড়িয়ে রেলিংয়ের উচ্চতা সাত ফুট করা হয়েছে। কাল দেখলাম, ওই যুবক তা-ও টপকে গিয়েছেন। কিছুটা অংশে এর উপরে কাঁটাতার ছিল। এ বার তবে পুরোটাতেই মোটা কাঁটাতার লাগাতে হবে।’’ পুলিশও বলছে, আর কী করা যায় ভেবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তাদের দাবি, রেলিং উঁচু করায় আগের থেকে গঙ্গায় ঝাঁপের ঘটনা কমেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা মেটিয়াবুরুজের যুবককে হাওড়া সেতুতে দেখে পিছন থেকে ডেকেছিলেন তাঁর এক আত্মীয়। পিছু ডাক শুনেই সেতুর এক দিকের রেলিং টপকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন ওই যুবক। আজ পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। গত বছরের মে মাসেই শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন এক গৃহবধূ। গৃহবধূকে বাঁচানো গেলেও শিশুপুত্রটিকে বাঁচানো যায়নি। একই রকম ঘটনা ঘটে গত জুনের শুরুতে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এক কিশোরী হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে এক পুলিশকর্মীর তৎপরতায় সে বেঁচে যায়। পুলিশকর্মী তাকে পিছন থেকে টেনে ধরেন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, রেলিং উঁচু করার আগে প্রতি মাসে হাওড়া সেতু থেকে গড়ে চার-পাঁচটি করে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটছিল। এর পরে পুলিশের তরফে কথা বলা হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। হাওড়া সেতুর নির্মাণে কোনও রকম বদল না করে সেতুর দু’দিকের রেলিংয়ের উচ্চতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরে চার ফুটের রেলিংয়ের উচ্চতা বেড়ে সাত ফুট করা হয়। তার উপরেও লোহার রেলিং বসানো হয়। সব মিলিয়ে এখন সেতুর দু’দিকের রেলিংয়ের উচ্চতা প্রায় ১০ ফুটের কাছাকাছি। সঙ্গে সেতুর দু’দিকে সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। সর্ব ক্ষণ ছ’জন পুলিশকর্মী নজরদারিতে থাকেন। তা সত্ত্বেও শুক্রবার ওই যুবক রেলিং টপকালেন কী ভাবে?
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, চাইলে রেলিং টপকানো কঠিন নয়। রেলিংয়ের একেবারে উপরে লাগানো কাঁটাও যথেষ্ট ভোঁতা। ফলে পুলিশের অনুমান, রেলিংয়ের খাঁজে পা দিয়ে সহজেই ওই যুবক টপকে গিয়েছিলেন।
এখন নয়া ব্যবস্থা কী ভাবা হয় এবং কত দ্রুত হয় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy