Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নতুন বছরে ছেলের মৃত্যুর বিচার চান মা

উৎসবের মরসুমে নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কেন আরও সচেতন হবেন না, সেই প্রশ্নও ওঠে। এই ঘটনার পরে অবশ্য ইকো পার্কের জলাশয়গুলি ঘিরে দেওয়া হয়।

সন্তানহারা: তালতলা লেনের বাড়িতে শেখ আবেজের (ইনসেটে) মা সুলতানা পরভিন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সন্তানহারা: তালতলা লেনের বাড়িতে শেখ আবেজের (ইনসেটে) মা সুলতানা পরভিন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৮
Share: Save:

বড়দিনে কেক কিনে দেওয়ার আবদার করত সে। বিকেল হলেই মায়ের কাছে শুরু হত পার্কে যাওয়ার জন্য বায়না। খুদে বাবুর দুষ্টুমিতে ভরে থাকত তালতলা লেনের ছোট্ট ঘরটা। দেড় মাস আগেও।

আর এখন? মোবাইলে ছেলের ছবি দেখেই দিন কেটে যায় মা সুলতানা পরভিনের। ঘরের বাইরে পায়ের শব্দ শুনে মাঝেমধ্যেই ভ্রম হয়, এই বুঝি পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরে এসে ঢুকল তাঁর ছোট্ট ছেলে শেখ আবেজ। পর মুহূর্তেই ঘোর কাটে তাঁর।

“ছুটির দিন হলেই বিকেলে ছেলেকে নিয়ে পার্কে যেতে হত। বড়দিন, নববর্ষের এই উৎসবের সময়ে তো ওকে বাড়িতে রাখাই মুশকিল ছিল। নতুন বছরের দিনগুলো রাস্তায় ঘুরে ঘুরেই কেটে যেত আমাদের।”— বলছেন সুলতানা। এখন অবশ্য সে সব কিছুই নেই। বড়দিনে কেক ঢোকেনি ঘরে। বাড়ি থেকে বেরোননি বললেই চলে। স্বামী শেখ আকবর কাজে বেরিয়ে গেলে আরও যেন খাঁ খাঁ করে ফাঁকা ঘরটা। বলছেন, ‘‘কোথায়ই বা যাব আর? যাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা, সে-ই তো নেই।’’

অথচ গত ১৬ নভেম্বর সেই ছেলেকে নিয়েই ইকো পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন এন্টালি থানা এলাকার তালতলা লেনের বাসিন্দা আকবর ও সুলতানা। বিকেলে পার্কের মধ্যে সকলে মিলে খাওয়াদাওয়াও সারেন। কিছু পরে হঠাই সুলতানা খেয়াল করেন, ছেলে পাশে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে অবশেষে চার বছরের আবেজের দেহ মেলে পাশের পুকুরে। তদন্তে জানা যায়, খেলতে গিয়ে কোনও ভাবে পুকুরের জলে পড়ে গিয়েছিল আবেজ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সবুজ পানা ভরা পুকুরটিকে হয়তো মাঠ ভেবে খেলতে গিয়েছিল একরত্তি ছেলেটি। তাতেই হয় বিপত্তি। এই ঘটনার পরে ইকো পার্কের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

উৎসবের মরসুমে নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কেন আরও সচেতন হবেন না, সেই প্রশ্নও ওঠে। এই ঘটনার পরে অবশ্য ইকো পার্কের জলাশয়গুলি ঘিরে দেওয়া হয়।

ইকো পার্কের নিরাপত্তার গাফিলতির জন্যেই যে তাঁর সন্তানকে চলে যেতে হল, সে কথা আজও কুরে কুরে খায় সুলতানাকে। ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সুলতানা। তাঁদের এক আত্মীয় জানাচ্ছেন, দিন দুই আগে তাঁরা ফের বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও ‘বিচার’ পায়নি আবেজ।

সুলতানা বলছেন, “নেতা-মন্ত্রীরা জানিয়েছিলেন, ঘটনার তদন্ত হবে। কিন্তু কোথায়, কিছুই তো হল না! আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষ দোষী প্রমাণিত হলে তো শাস্তি হওয়ার কথা।” সেই শাস্তির আশাতেই আজ দিন গুনছেন সন্তানহারা মা। ছলছল চোখে বলেন, “ছেলের মৃত্যুর বিচারের আশাতেই এখন দিন গুনছি। তদন্তে যদি পার্ক কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাহলে যে বা যারা এর জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি চাই। নতুন বছরে ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই আমি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Drowning Eco Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE