ক্রমেই খুলছে দেড় দশক আগের পার্সি মহিলা খুনের রহস্য!
২০০১ সালের ২৯ জুন লালবাজারের অদূরে গুলি করে খুন করা হয়েছিল পার্সি প্রৌঢ়া নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়াকে। ওই ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারেনি লালবাজার। সম্প্রতি একটি গুলিচালনার ঘটনায় সরফুদ্দিন ওরফে সরফু নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে বেনিয়াপুকুর থানা। পুলিশ বলছে, তার পর থেকেই পরতে পরতে খুলছে ওই প্রৌঢ়া খুনের রহস্য।
কী ভাবে?
‘সুপারি কিলার’ সরফুকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মহম্মদ মোহিত ওরফে মইস ওরফে মোটর নামে এক ব্যক্তি তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল নওয়াজকে খুন করার জন্য। বুধবার পার্ক স্ট্রিট এলাকা থেকে ধরা পড়ে মইস। তবে নওয়াজ খুনে নয়, অন্য একটি অস্ত্র মামলায়। বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করা হলে তাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠান বিচারক। লালবাজারের খবর, নওয়াজ-খুনের তদন্তভার এখন গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার হাতে। পরবর্তী কালে সেই মামলায় মইসকে নিজেদের হেফাজতে নেবে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, নওয়াজ খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই মইসকে জেরা করা হয়েছে। সে স্বীকার করেছে, তার স্ত্রী ক্যাথরিনা কিংডো নওয়াজের পরিচারিকা ছিল। বছর পঞ্চাশের নওয়াজ ক্যাথরিনাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসতেন। সে কারণেই তাকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার আমানতের ‘নমিনি’ও করেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই যে কাল হবে, তা বুঝতে পারেননি ওই প্রৌঢ়া।
মইস বুঝেছিল, নওয়াজ মারা গেলে পুরো টাকা আসবে তার হাতে। তাই রীতিমতো ছক কষে খুন করা হয় তাঁকে। ওই খুনে ক্যাথরিনার হাত রয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি তদন্তকারীদের কাছে। ‘‘তবে ক্যাথরিনা কিছুই জানত না, এ কথাও চট করে মেনে নেওয়া যাবে না’’— বলছেন লালবাজারের এক অফিসার।
পুলিশ সূত্রের খবর, নওয়াজের মৃত্যুর পরে উইল মেনে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি পেয়েছিল ক্যাথরিনা। তার পরে মইসের সঙ্গে কলকাতা ছাড়ে সে। দু’জনে থাকতে শুরু করে বেগুসরাইয়ে। নাম পাল্টে মইস সেখানে মুদির দোকান খুলেছিল। নওয়াজের টাকাতেই চলতি বছরের এপ্রিলে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল সে। পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় থাকতে চামড়ার কারবার করত মইস। সেই সূত্রেই তার সঙ্গে সরফুর আলাপ।
পুলিশের কাছে মইসের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছে সরফু। এক অফিসারের কথায়, ‘‘৫০ হাজার টাকায় রফা হয়েছিল দু’জনের। খুনের আগে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল মইস। খুনের পরে সরফু কাঁকিনাড়ায় পালায়। কয়েক মাস পরে ফিরে
দেখে, ক্যাথরিনাকে নিয়ে চম্পট দিয়েছে মইস। বাকি টাকা আজও পায়নি সরফু।’’
সরফুর থেকে মইসের খোঁজ মিলতেই জাল পাততে শুরু করেন বেনিয়াপুকুর থানার অফিসারেরা। পুলিশের দাবি, মইস অস্ত্রের কারবারও করে। অস্ত্র কেনার টোপ দিয়েই তাকে পার্ক স্ট্রিটে ডেকে আনা হয়েছিল।
এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সরফু গ্রেফতার না হলে মইস-ক্যাথরিনের এই ছকের কথা কোনও দিন সামনেই আসত না।’’ লালবাজারের খবর, নওয়াজকে খুন করার সময়ে সরফু নাবালক ছিল। তার সঙ্গে ছিল আরও তিন জন। এক অফিসারের কথায়, ‘‘দু’টি মোটরবাইকে চেপে চার জন আততায়ী গিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy