Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আমার পাড়া

যুক্তি-তক্কো-গপ্পে এখনও জমজমাট

জয়কৃষ্ণ পাল রোডবাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তা পাকা হওয়া। পাঁচের দশকের সন্ধ্যায় বাতিস্তম্ভে মই লাগিয়ে গ্যাসবাতি জ্বালানো। সাতের দশকে রবিবার সকালে রাস্তায় ক্রিকেট খেলার উদ্দীপনা কিংবা গ্রীষ্ম-বর্ষায় টেনিস, রবার বলের ট্যুর্নামেন্ট— স্মৃতির চালচিত্রকে অকপটে সাজিয়ে দেয়।

সুখস্নান: জ্যৈষ্ঠের দুপুরে পাড়ার কলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুখস্নান: জ্যৈষ্ঠের দুপুরে পাড়ার কলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সুপ্রিয় বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

চারুলতা সিনেমায় ‘আমার গ্রাম’ লেখার সময়ে চারুর মনে তার গ্রামের টুকরো টুকরো ছবি ভেসে উঠেছিল। আমার পাড়া, খিদিরপুরের জয়কৃষ্ণ পাল রোডের কথা লিখতে বসে আমার অনুভূতি প্রায় একই রকম।

বাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তা পাকা হওয়া। পাঁচের দশকের সন্ধ্যায় বাতিস্তম্ভে মই লাগিয়ে গ্যাসবাতি জ্বালানো। সাতের দশকে রবিবার সকালে রাস্তায় ক্রিকেট খেলার উদ্দীপনা কিংবা গ্রীষ্ম-বর্ষায় টেনিস, রবার বলের ট্যুর্নামেন্ট— স্মৃতির চালচিত্রকে অকপটে সাজিয়ে দেয়।

ফিরে আসা যাক আজকের পাড়ায়। মোড়ের মাথায় হ্যালোজেন আলোকস্তম্ভের দৌলতে রাস্তা এখন সুদৃশ্য, সুসজ্জিত। চারপাশটাও আগের থেকে অনেক পরিষ্কার-পরিছন্ন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীরা সকলেই যথেষ্ট সজাগ-সচেতন, যেমনটা হয় একটা পরিবারে। সত্যি বলতে জমজমাট এই পাড়ার পরিবেশ বরাবরই শান্তিপূর্ণ ও সংবেদনশীল।

পাড়ার আড্ডা মানে সন্ধ্যাবেলায় বোহেমিয়ান ক্লাবের উল্টো দিকের ফুটপাথে চেয়ার পেতে কিংবা ক্লাবঘরে বসে গল্প। যুক্তি, তক্কো আর গপ্পে পাড়ার পরিবেশটা আজও প্রাণবন্ত। এখনও জয়কৃষ্ণ পাল রোড, বিশুবাবু লেন আর পার্শ্ববর্তী সত্য ডাক্তার রোডের অনেক প্রবীণ বাসিন্দা আড্ডার টানে চলে আসেন। আড্ডায় স্মৃতি রোমন্থনে প্রতি সন্ধ্যা কাটে এক লহমায়। ছোট থেকে বড়, সকলেই শামিল হয় এতে।

পাড়ার মানুষের উদ্যোগ ও উত্সাহে খিদিরপুর যুবগোষ্ঠীর দুর্গাপুজো পাঁচ দশকের বেশি সময় অতিক্রম করছে। মনে পড়ে পুজোর পরে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো, তাতে অংশগ্রহণ করতেন পাড়ার কচিকাঁচা থেকে বৃদ্ধ, সকলেই। পুজোর এক মাস আগে থেকে
আমরা নাটকের রিহার্সালে অংশগ্রহণ করতাম।

এখনও পাড়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গঠনমূলক কাজে উদ্যোগের ঘাটতি নেই। ফি বছর কবিতীর্থ বিদ্যালয়ের সামনের পার্কে বিবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেমন রক্তদান শিবির, ছবি আঁকা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।

আসলে সহমর্মিতায়, বিপদ-আপদে অথবা একাকীত্ব বোধের কঠিন সময়ে আমার পাড়া কোনও দিনও বদলায়নি। মানবিক মূল্যবোধ, সমস্যায় ছুটে এসে পাশে দাঁড়ানো হল আমার পাড়ার এক প্রথা। মনে পড়ে আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুবান্ধব-দাদাদের কথা, যাঁরা এখন আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এখানকার ঐতিহ্যের মতোই তাঁরা চিরদিন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।

লেখক শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Memory Jay Krishna Pal Road Nostalgia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE