Advertisement
০২ মে ২০২৪
Artificial Intelligence

Artificial Intelligence: নেটরাজ্যে যন্ত্রমেধার ফাঁদে জেরবার ব্যবহারকারীরা

ব্যক্তিকে কেনাকাটায় প্রভাবিত করে বিচিত্র প্ররোচনা থেকে প্রভাবশালী মহলের স্বার্থসিদ্ধির ছকও তাতে মিশে থাকতে পারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২২ ০৭:৫৫
Share: Save:

এ যেন অনেকটা বর্ষার মেঘ না-চাইতেই জল! ধরা যাক, কেউ অনলাইনে জুতসই ছাতার খোঁজ করছেন। ঠিক তখনই কোনও অনলাইন বিপণির তাজা ইলিশের খবর ফোনে ভেসে উঠল। বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই বলবেন, বর্ষার ছাতা যাঁর মাথায় ঘুরছে, তিনি অবশ্যই ইলিশের হদিস পেয়ে পুলকিত হবেন। আমাদের মননে বৃষ্টি ও ইলিশের এতটাই ঘনিষ্ঠ সংযোগ।

কিন্তু এমন চমকপ্রদ বিপণনের আড়ালেই থাকতে পারে ব্যক্তি পরিসরে ঢুকে পড়া ভয়াবহ নজরদারির শ্যেনদৃষ্টি। ব্যক্তিকে কেনাকাটায় প্রভাবিত করে বিচিত্র প্ররোচনা থেকে প্রভাবশালী মহলের স্বার্থসিদ্ধির ছকও তাতে মিশে থাকতে পারে।

সমাজমাধ্যমে জনৈক চিত্র পরিচালকের সাম্প্রতিক রসিকতা, ‘এ তো মহা ঝামেলা! অনলাইনে সিলিং ফ্যানের খোঁজ করছিলাম, তার পর থেকেই একটি টুল এবং এক গাছি দড়ি কেনার অফার ছুটে আসছে।’ আদতে এমনটাই ঘটে থাকে, যখন কেউ ব্যাঙ্কক বা গোয়ার বিমানের টিকিট কেনেন। সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে আকর্ষক ছাড়ের খবরও ফোনে আসতে শুরু করে। যা অন্য সময়ে সচরাচর আসে না। কোনও আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্য নয়, যন্ত্রমেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কল্যাণেই এমনটা ঘটে থাকে। আপাত ভাবে বিষয়টি নির্দোষ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তির পছন্দ, অপছন্দ থেকে একান্ত ব্যক্তিগত আচরণও এখন তত ব্যক্তিগত নেই। নেটমাধ্যমে ব্যক্তির ঘোরাফেরা জরিপ করেই যন্ত্রমেধা নানা ওয়েবসাইটে তথ্যভান্ডার জড়ো করতে থাকে। এমনকি, কারও বাস্তব জীবনের গতিবিধির পিছু নিয়ে পদে পদে তাঁকে কিছু না কিছু কিনতে প্ররোচনার ছকও কষা হয়।

এ কিন্তু নিছকই নাছোড় বিপণন নয়। এর পিছনে বড়সড় বিপদের ছায়াও থাকতে পারে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অম্লান চক্রবর্তী বলছেন, “ব্যক্তির ঝোঁক সংক্রান্ত নানা তথ্য-সমষ্টি থেকে অ্যালগরিদম তৈরি করে যন্ত্রমেধা তাকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে। কোনও কর্মীর বিষয়ে সংগৃহীত তথ্য বিকৃত করে কর্মক্ষেত্রে তাঁকে অদক্ষ বলে দাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগও শোনা যায়। এর পিছনে বিশেষ গাত্রবর্ণ, জাতি বা ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যও থাকতে পারে।’’

এমনও হয়, যন্ত্রমেধা হয়তো ব্যক্তির অনেকগুলো ছবির মধ্যে থেকে একটি কৃত্রিম ছবি তৈরি করে তাঁকে অপদস্থ করল। অম্লানবাবু জানাচ্ছেন, আবার এই যন্ত্রমেধাই নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে সহায় হতে পারে। কোন ক্যানসার কতটা ঝুঁকির, কিছু ছবি যাচাই করে তা বলা সম্ভব। আবার অস্ত্রোপচারের পরে কোনও অঙ্গের পুনর্গঠনও সম্ভব। অম্লানবাবুর কথায়, ‘‘যন্ত্রমেধার ভাল-মন্দ দুটো দিকই আছে। যার যেটা লক্ষ্য।’’

অ্যান্টি-হ্যাকিং বিশারদ সন্দীপ সেনগুপ্তও নেটমাধ্যমের এই নজরদারির কৌশলের নানা মতলবের কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আপাত নিখরচার ওয়েবসাইটে আমরা নিজেরাই পণ্য। সেখানে প্রতিনিয়ত ব্যক্তির ঠিকুজি-কোষ্ঠী নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি চলছে। ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ বিশ্লেষণ করে দরকারে একটা রাজনৈতিক ইস্তাহার তৈরি করা যায়। অমুক এলাকার লোকেদের নাগরিক সমস্যা থেকে মতাদর্শগত ঝোঁক— সব খবর পাওয়া সম্ভব।’’ তবে কেনাকাটার অনভিপ্রেত পরামর্শ নেটের ‘হিস্ট্রি’ বার বার মুছেও এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন সন্দীপ। সংসদে তথ্য-সুরক্ষা বিল সেই ২০১৮ থেকে আটকে। সন্দীপ বলছেন, ‘‘এত দিনেও বিলটা নড়াচড়া না-করাই গোলমেলে।’’ নেট বিশারদেরা তাই বার বার নেটে বা সমাজমাধ্যমে বাড়তি ব্যক্তিগত তথ্য প্রচার করতে বারণ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Artificial Intelligence Online Shopping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE