জামাই ষষ্ঠীর ঠিক আগেই কোমরের ব্যথায় বেহাল হয়ে পড়েছিলেন উল্টোডাঙার সত্তরোর্ধ্ব রাখী সেন। কিন্তু স্মার্টফোন-দুরস্ত শাশুড়িকে ঠেকায় কে! বেঙ্গালুরুতে মেয়ে-জামাই সুলেখা ও প্রদীপের জন্য নিজেই অর্ডার দিলেন বেক্ড মিহিদানা, আনারস সন্দেশ। বুধবার বিকেলে ঠিক দিনেই যথাস্থানে তা পৌঁছেও গিয়েছে।
জয়পুরের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বুধাদিত্য চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী শ্রীদিশাও পুলকিত, রিষড়ায় শাশুড়ি মায়ের কাছে এক্কেবারে স্থানীয় দোকানের মনপসন্দ সৃষ্টি পাঠাতে পেরে। ঘটনাচক্রে, শাশুড়ি মায়ের জন্মদিনটাও এ দিনই পড়েছে। সন্দেশের সুদৃশ্য কেক ‘মাকে’ ঠিক দিনে পাঠাতে পেরে ডগমগ ডাক্তারবাবু।
ভিন্ শহরে থাকা মেয়ে-জামাইদের সৌজন্যে জামাই ষষ্ঠীতে জাঁকিয়ে বসেছে অনলাইন মিষ্টি-সামাজিকতার আমেজ। ভবানীপুরের বলরাম ময়রা বা রিষড়ার ফেলু মোদক— নিজেদের ওয়েবসাইটেই অর্ডার থেকে ‘পেমেন্ট’ সহজে মেটানোর ব্যবস্থা রেখেছেন। আমাজন-ফ্লিপকার্ট থেকে শুরু করে ‘প্লেস অব অরিজিন’, ‘বাংলা লাইভ’ বা ‘ফ্লেভার্স অব মাই সিটিজ’— অনলাইন কেনাকাটার ঠিকানারও এখন রমরমা। কোনও কোনও মিষ্টি স্রষ্টা আবার বিভিন্ন ক্যুরিয়রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। ডিটিডিসি বা ফেডেক্স-এর মতো সংস্থার অভিজ্ঞতা, কলকাতা থেকে বাঙালি মিষ্টির চাহিদা গত চার-পাঁচ দিন ধরেই গড়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। ফেডেক্স-এর এক মুখপাত্র যেমন বললেন, ‘‘জামাই ষষ্ঠীর ঠিক দু’দিন আগে ভিন্ শহরে পাড়ি দেওয়া বলরামের মিষ্টি অন্য দিনের থেকে শতকরা ৮০ ভাগ বেড়ে গিয়েছিল।’’ টিনের রসগোল্লা-খ্যাত কে সি দাশ অবশ্য বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়েও ঘাঁটি গেড়েছে। তবু রসগোল্লার অনলাইন চাহিদাও এই ক’দিনে দ্বিগুণের কাছে বলে দাবি কর্তা ধীমান দাশের।
সিমলের হেভিওয়েট সন্দেশ-স্রষ্টা নকুড় নন্দীর এই সে দিন অবধি অনলাইন কারবারের ঝক্কি নিয়ে গড়িমসি ছিল। এখনও নিজের ওয়েবসাইটে কেনাকাটার ব্যবস্থা না-রাখলেও কিছু অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে তাঁরা নানা শহরে ছড়িয়ে পড়ছেন। তরুণ কর্তা পার্থ নন্দী বলছিলেন, ‘‘অনলাইন চাহিদার কল্যাণে আমাদের জামাই ষষ্ঠী পর্বের মেয়াদ এখন সপ্তাহভরই চালু রয়েছে।’’ তবে সাদা বা কড়াপাক কেশর সন্দেশ, ব্ল্যাক কারেন্টের মতো কিছু আনকোরা সন্দেশ ভিন্ শহরে পাঠানো গেলেও পারিজাত, দেলখোস, গোলাপি পেঁড়ার মতো সাবেক সন্দেশের বড্ড সুখী শরীর। কলকাতা থেকে ভিন্ শহরে সফরের ঝক্কি তারা নিতে পারবে না।
বলরামের সুদীপ মল্লিক বা ফেলু ময়রার অমিতাভ মোদক অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ড্রাই আইস প্যাকিংয়ের মাধ্যমে দই-রাবড়িও ভিন্ শহরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। গজা, লবঙ্গলতিকার মতো শুকনো মিষ্টি পাঠানোও জটিল নয়। কিন্তু বেঙ্গালুরু, পুণে, দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো যেখানে একটি উড়ানের বিমান সংযোগ, সেখানে মিষ্টির অনলাইন ডেলিভারি তুলনায় কম ঝুঁকির। মফস্সল এলাকায় মিষ্টি পাঠাতে সময় লেগে যায়। সে ক্ষেত্রে কোন মিষ্টি টেকসই হবে, সেটা বুঝেই পাঠানো উচিত। তবে স্রেফ ভিন্ রাজ্যে জামাইবাড়ি পাড়ি দেওয়া নয়, কলকাতা বা আশপাশের শ্বশুরকুলের কপালেও শিকে ছিঁড়ছে ভালই। প্রবাসী জামাইদের সৌজন্যেই গাজিয়াবাদ টু গড়িয়া বা তিরুঅনন্তপুরম টু টালা মিষ্টি-সফরের নমুনাও ভূরি ভূরি।
কোনও বয়স্ক শাশুড়ির আবদারে দু’-এক জন মিষ্টি স্রষ্টা মিষ্টির সঙ্গে আমও কিনে ভাল ভাবে প্যাক করে ভিন্ শহরে জামাইবাড়ি পাঠাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy