Advertisement
০৭ মে ২০২৪
শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর

যাত্রী ধরার টক্করে ট্যাক্সির জুলুম-রাজ

কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস থেকে সবে শিয়ালদহ স্টেশনে নেমেছেন টালিগঞ্জের স্বপন সরকার। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোনোর মুখেই তাঁকে ঘিরে ধরেন জনা কয়েক ট্যাক্সিচালক।

বিদেশি এক পরিবারকে দেখেই ‘শিকার’ ধরার প্রতিযোগিতা। সোমবার, শিয়ালদহে। ছবি: সুমন বল্লভ

বিদেশি এক পরিবারকে দেখেই ‘শিকার’ ধরার প্রতিযোগিতা। সোমবার, শিয়ালদহে। ছবি: সুমন বল্লভ

শিবাজী দে সরকার ও সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৭:২১
Share: Save:

কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস থেকে সবে শিয়ালদহ স্টেশনে নেমেছেন টালিগঞ্জের স্বপন সরকার। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোনোর মুখেই তাঁকে ঘিরে ধরেন জনা কয়েক ট্যাক্সিচালক। নিজেদের ট্যাক্সিতে তাঁকে তুলতে হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেন তাঁরা। কোনও মতে হাত ছাড়িয়ে প্রি-পেড স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি ধরে হাঁফ ছাড়েন স্বপনবাবু। শনিবার প্রায় একই ভাবে ট্যাক্সিচালকদের হাতে হয়রানির শিকার অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘‘এখানে তো পাণ্ডা-রাজ চলছে!’’

প্রি-পেড বুথ থাকা সত্ত্বেও প্রতি দিন নিয়ম ভেঙে শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে এ ভাবেই চলছে ‘যাত্রী ধরার’ টক্কর। অভিযোগ, শিয়ালদহ স্টেশনে আসা যাত্রীরা প্রায় প্রতি দিনই এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার ওই ট্যাক্সিচালকদের খপ্পরে পড়ে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যাত্রীদের ক্ষোভ, রেলপুলিশ (জিআরপি) সব জেনেও কার্যত চোখ-কান বন্ধ করে রেখেছে।

যাত্রীদের ন্যায্য ভাড়ায় সহজে ট্যাক্সি-পরিষেবা দিতে হাওড়া, কলকাতা ও শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে কলকাতা বিমানবন্দরের আদলে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। নিয়মানুযায়ী, ট্যাক্সি বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের গন্তব্য জানিয়ে নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে দু’টি স্লিপ নিতে হয় যাত্রীকে। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে ওঠার পরে গন্তব্যে নেমে ওই স্লিপের একটি অংশ কেটে চালককে দিয়ে অন্যটি নিজের কাছে রেখে দেন যাত্রী। চালককে দেওয়া ওই স্লিপ প্রি-পেড বুথে দেখিয়ে টাকা নিয়ে নেন চালক। ফলে এক দিকে যেমন যাত্রীদের হয়রানি বা প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হয় না, তেমনই বেশি ভাড়াও গুনতে হয় না। হাওড়া ও কলকাতা স্টেশনের বাইরে এই নিয়ম মানা হলেও শিয়ালদহে এই পদ্ধতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্যত যথেচ্ছাচার চলে বলে অভিযো।

হাওড়ায় ট্যাক্সির প্রি-পেড বুথ নিয়ন্ত্রণ করে হাওড়া সিটি পুলিশ। বুথের বাইরে থাকা কোনও ট্যাক্সি যাত্রী তুলতে পারে না। কিন্তু শিয়ালদহের ক্ষেত্রে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে জিআরপি। ফলে বুথ পেরিয়ে একেবারে প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে উঠে যান এক শ্রেণির ট্যাক্সিচালক। বুথের লাইন মানা বা সুনির্দিষ্ট ভাবে ট্যাক্সি দাঁড়ানোর কোনও বালাই নেই।

লালবাজার সূত্রের খবর, হাওড়ার পথ ধরে এগোতে চেয়েছিল কলকাতা পুলিশও। কয়েক মাস আগেই রেলের কাছে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব চেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু এখনও তা হয়ে ওঠেনি। রেলপুলিশের একাংশ স্বীকার করে নেন, শিয়ালদহ স্টেশনের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তাঁদের উপরে থাকলেও বাইরের এলাকা নিয়ন্ত্রণের মতো পরিকাঠামোই এবং লোকবল তাঁদের নেই। সে কারণে সমস্ত ঘটনা জানা থাকলেও নিধিরাম সর্দার হয়েই থাকতে হয় তাঁদের।

এই ঘটনার কথা স্বীকার করে তৃণমূল প্রভাবিত ট্যাক্সিচালক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘শিয়ালদহে ট্যাক্সি বুথের চালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কিছু করার নেই। যা করার পুলিশকেই করতে হবে।’’ যদিও ওই এলাকার প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা স্বপন সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ আসেনি।’’ সিটু-অনুমোদিত ‘কলকাতা ট্যাক্সি অপারেটার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ ঝাঁ বলেন, ‘‘শিয়ালদহ স্টেশন নিয়ে আমাদের কাছেও বহু অভিযোগ এসেছে। পুলিশ সব জেনেও যদি পদক্ষেপ না করে তা হলে তো যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতেই হবে।’’

যদিও এসআরপি (শিয়ালদহ) দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Taxi drivers Sealdah station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE